একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা করো

স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন

আলোচ্য বিষয়:
👉🏻তোমার দেখা একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা করো।
তোমার দেখা একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা করো।

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের বেহাল দশা

মুহাম্মদ হাসান : রাজধানীর পুরাতন সরকারি হাসপাতালগুলোর অন্যতম সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালটি ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে । ১০০ শয্যার সুবিশাল সাততলা ভবন হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন মাত্র তিনজন রোগী ভর্তি হচ্ছে । জরুরি বিভাগ থেকে প্রতিদিন ৮০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি । কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে , ধনুষ্টঙ্কার , এইডস , জন্ডিস , জলাতঙ্ক , ডিপথেরিয়া , জলবসন্ত ও হামসহ বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে যারা জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নেয় তাদের অধিকাংশই রোগী নয় । একশ্রেণির কর্মকর্তা - কর্মচারী সুস্থ মানুষকে রোগী সাজিয়ে হাজার হাজার টাকার ওষুধ লুটপাট করছে বলে অভিযোগে প্রকাশ ।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় , হাসপাতালের অধিকাংশ বেড খালি পড়ে থাকে । দুপুর ১২ টার পর ডাক্তারদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না । বহিরাগত মাস্তান ও দালালরা হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে আড্ডা জমায় ।

একটি পরিসংখ্যান দেখা যায় , ২০২১ সালে ১ হাজার ২ শ ' ৪০ জন রোগী এখানে ভর্তি হয়েছিল । মারা গেছে ১৩০ জন । মৃতের মধ্যে পুরুষ বেশি । এর পরবর্তী পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , হাসপাতালজুড়ে সুনসান নীরবতা । নিচতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত সিঁড়ি বেয়ে উঠলেও একজন লোকের দেখা পাওয়া যায় না । হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে , বর্তমানে হাসপাতালে ২০ জন ডাক্তার , ৬৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স , ৫ জন সহকারী নার্স , ৮ জন তৃতীয় শ্রেণির ও ৫৬ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আছেন । সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট । গত কয়েক মাস ধরে এ পদটি খালি । রোগী না থাকায় প্রায় সবাই অফিস চলাকালে অলস সময় কাটান । অধিকাংশরা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই হাসপাতাল ত্যাগ করেন । জানা গেছে , হাসপাতালটিতে প্রতিবছর ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে । রোগীর খাবার বাবদ বরাদ্দ ৭ লাখ টাকা । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান , রোগী না থাকায় বরাদ্দকৃত অর্থের অধিকাংশই খরচ হয় না । ওষুধ , যন্ত্রপাতি , গজ , ব্যান্ডেজ ও লিলেন ক্রয়ে প্রতিবছর ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ । তিনি বলেন , হাসপাতালের অডিট এবং বাস্তব চেহারার মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না ।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ‘ স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন ' - এর নাম পরিবর্তন করে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ‘ সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ’ নামকরণ করা হয় । হাসপাতাল ভবনটি ১০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং মোট জমির পরিমাণ ৩৫ একর । কয়েক কোটি টাকার জমি মাস্তানরা দখল করে রেখেছে । হাসপাতালে একটি লিফট থাকলেও এটি সর্বশেষ কবে চালু ছিল তা পুরানো কর্মকর্তা কর্মচারীরাও বলতে পারেন না । প্রয়োজনীয় দেখভালের অভাবে ১০ লাখ টাকা দামের একটি এ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘদিন ধরে নিশ্চল পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাসায় আনা - নেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় । হাসপাতালে রোগী না থাকলেও হাজার হাজার টাকার গ্যাস , বিদ্যুৎ ও পানি খরচ করছে বহিরাগতরা । নগরবাসীর অনেকেই জানে না যে , এখানে একটি হাসপাতাল আছে ।


আরো পড়ুন: