প্রতিবেদন: ‘ সিডর/আইলা ' উপদ্রুত এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবনের বিবরণ

' সিডর/আইলা ' উপদ্রুত এলাকা

আলোচ্য বিষয়:

👉🏻' সিডর ' উপদ্রুত এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবনের বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো ।

👉🏻' আইলা ' উপদ্রুত এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবনের বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো ।

প্রতিবেদন: ‘ সিডর/আইলা ' উপদ্রুত এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবনের বিবরণ

বাগেরহাটে ‘ সিডর/আইলা ’ এনেছে মৃত্যুর নীরবতা

বাগেরহাট থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : জেলার সাতটি উপজেলায় এখন মৃত্যুর নীরবতা আর নরকীয় হাহাকার বিরাজ করছে । ঘূর্ণিঝড় সিডর/আইলা - এর আঘাতে জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা দু'টি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে । ঝড়ের তিনদিন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা প্রশাসনের কাছে নেই । জেলা প্রশাসক বলেছেন , এ পর্যন্ত জেলায় ১২০০ মানুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে । নিখোজ রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ । জেলা প্রশাসক আরও বলেছেন ক্ষয়ক্ষতির মোটামুটি সঠিক হিসেব পেতে আরও অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে ।

‘ সিডর/অইলা ’ - এর আঘাত কতখানি তীব্র ও ভয়ংকর ছিল তা ভাষায় বর্ণনা করা সত্যি দুরূহ । জেলার শতকরা ৮০ ভাগ বাড়ি - ঘর সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে । একটি অক্ষত গাছপালাও পাওয়া যাবে না । তবে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঘরবাড়ি , অবকাঠামো ও গাছপালার ধ্বংসলীলা আরও ভয়াবহ । কোনো কোনো গ্রামের অস্তিত্ব পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না । এ দু'টি উপজেলার নিভৃত চরাঞ্চলে বাস্তবে কী ঘটেছে তা এখনো অজানা । দুর্গম এলাকাগুলোর বাস্তব চিত্র পেতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে ।

গতকাল সেনাবাহিনীর স্পিড বোটে করে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয় শরণখোলার চর টনকি , চর সাতার , কালিবাড়ি — এ তিনটি ইউনিয়নে স্থলপথে রাস্তার ওপর অসংখ্য গাছপালা , বাড়িঘর পড়ে আছে । তাই নৌপথে দুর্গম চরাঞ্চলে পৌছার চেষ্টা করতে হয় । কিন্তু সংকীর্ণ খাল বা ছোট ছোট নদীগুলো দিয়েও মানুষের পক্ষে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া দুরূহ । খালবিল , নদী ও জলাশয়ের পানিতে পশু - পাখির অসংখ্য লাশ ছাড়া মানুষের লাশ ফুলে - ফেঁপে উঠেছে । দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস নেয়া যায় না । খালবিলের পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে । কাদা ময়লায় পুকুরের পানিগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী ।

গতকাল চর সাতার ইউনিয়নের টেংরামারি গ্রামে পৌঁছার পর সাংবাদিক ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিস্মিত ও বিমূঢ় হয়ে পড়েন । রাস্তার ওপর অসংখ্য নারী - পুরুষ অভুক্ত অবস্থায় পড়ে আছে । তাদের সামনেই স্বজনদের লাশ ভাসছে । এ হতবিহ্বল মানুষগুলো যেন কবর খুঁড়ে লাশ মাটি চাপা দেওয়ারও শক্তি হারিয়ে ফেলেছে । গত তিন দিনে তাদের অনেকের মুখে একটুক দানা পানি পড়ে নি । আগুন জ্বালানোর মতো একটি দিয়াশলাইয়ের কাঠিও তাদের হাতে নেই । গ্রামবাসী জানায় , এ গ্রামের চার হাজার অধিবাসীর মধ্যে কতজন মারা গেছে বা নিখোঁজ রয়েছে সঠিক হিসেব তারাও জানে না । তবে প্রতিটি পরিবারে প্রাণহানি কিংবা নিখোঁজ হবার ঘটনা ঘটেছে । অনেক আহত মানুষ এ কয়দিনেও চিকিৎসা পায় নি । স্থানীয় চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক জানান , তার নিজের দু'ভাই মারা গেছেন । তিনি নিজেই খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন । ঘূর্ণিঝড় ‘ সিডর/অইলা ' জনগণ ও জনপ্রতিনিধিকে এক করে গেছে । সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জনগণের মাঝে পানির বোতল , প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধপত্র ও শুকনো খাবার বিতরণ করেন ।

স্থানীয় প্রধান ব্যক্তিরা বলেন , ১৯৭০ ও ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের চেয়েও এবারের ক্ষয়ক্ষতি বেশি । তাদের মতে আবার উঠে দাঁড়াতে পারাটা তাদের জন্য হবে সত্যি দুরূহ । সরকারের সহায়তা পেলে তারা উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করবেন ।