প্রবন্ধ রচনা: মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব
মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব
ভূমিকা :
যেকোনো দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির নিয়ামক শক্তি হলো তার মানবসম্পদ । তাই মানবসম্পদের উন্নতি ব্যতিরেকে কোনো দেশ প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারে না । এই মানবসম্পদের উন্নয়ন সাধন করা না গেলে মানুষ একটি দেশের অবাঞ্ছিত বোঝা হয়ে দাঁড়ায় । মানবগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করে প্রত্যাশিত উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়া যায় কেবলমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই ।
মানবসম্পদের পরিচয় :
মানবগোষ্ঠী ও ভূখণ্ড ছাড়া কোনো দেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না । একটি রাষ্ট্রের জন্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানবগোষ্ঠী থাকা অপরিহার্য । আর যেকোনো দেশের জনসাধারণ বা মানবগোষ্ঠীই হলো সেদেশের মানবসম্পদ । একটি দেশে নানাপ্রকার সম্পদের সমাবেশ ঘটে । যেমন— ভূমি , ভূ - গর্ভস্থ খনিজ পদার্থ , বৃক্ষরাজি , নদ - নদী , পাহাড় - পর্বত , শিল্প - কারখানা , শহর - বন্দর - গ্রাম প্রভৃতি । কিন্তু মানুষ ছাড়া এ সম্পদগুলো নিতান্তই মূল্যহীন । কারণ , মানুষ কর্তৃক ভোগ ও ব্যবহারের মাধ্যমে এ সম্পদগুলোর উপযোগিতা প্রমাণিত হয় । দেশের জনগণই এ সম্পদগুলোর সংরক্ষণ ও বিকাশ সাধন করে ।
মানবসম্পদের গুরুত্ব :
প্রাণহীন দেহের যেমন মূল্য নেই তেমনি মানবগোষ্ঠী ছাড়া কোনো দেশেরই কল্পনা করা বৃথা । কিন্তু মানবগোষ্ঠীর বিশালত্ব থাকলেই কোনো দেশ উন্নত , এমন ধারণাও সঠিক নয় । কেননা , মানবগোষ্ঠীকে শিক্ষা ও কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ করে না তুলতে পারলে দেশের পক্ষে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব নয় । সুশিক্ষিত মানবগোষ্ঠীই যেকোনো দেশের প্রাণ । একটি দেশে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকতে পারে , কিন্তু সেগুলো আহরণ ও সংরক্ষণের জন্যে যদি মানবগোষ্ঠী না থাকে তাহলে সে সম্পদের কোনো মূল্য নেই । এন্টার্কটিকা মহাদেশে প্রভূত সম্পদ থাকলেও তার কি কোনো মূল্য আছে ? মূলত মানবগোষ্ঠীই হলো একটি দেশের সম্পদের সংরক্ষক ও ভোক্তা । দেশের জনগণের মেধা ও শ্রমই একটি জাতিকে উন্নতির শীর্ষদেশে পৌছে দিতে পারে ।
মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা :
একটি দেশের জনগণ সেদেশের জন্যে আপদ হবে নাকি উন্নয়নশক্তি হবে , তা নির্ভর করবে সেদেশের মানবসম্পদের উন্নয়নের ওপর । মূলত মানবসম্পদের উন্নয়ন ছাড়া কোনো দেশের প্রত্যাশিত সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয় । বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যা এদেশের জন্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা এবং বোঝা হিসেবে চিহ্নিত । কারণ , এ জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা সম্ভব হয় নি । অপরদিকে জাপান ও কোরিয়ার প্রতিটি নাগরিক সেদেশের উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ । পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা প্রথমেই দেখতে পাই যে , মানবসম্পদ উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে মানবসম্পদের উন্নয়নই আধুনিক বিশ্বের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিশ্রুতি ।
মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা :
মানুষ ‘ আশরাফুল মাখলুকাত ' বা সৃষ্টির সেরা জীব । স্রষ্টা মানুষকে এ শ্রেষ্ঠত্ব এমনিতেই দান করেন নি । মেধা , সৃষ্টিশীল কর্মক্ষমতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক জীবন - চেতনা দিয়ে মানুষকে সৃষ্টিকুলের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে । তবে মানুষ হিসেবে জন্ম নিলেই কেউ শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে না । মানুষকে জ্ঞান ও শিক্ষার পরিচর্যায় এ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হয় । শিক্ষা ছাড়া মানুষের মেধা , প্রতিভা এবং প্রাণশক্তির বিকাশ সাধিত হয় না । পবিত্র কোরান মাজীদে নারী - পুরুষ সবার জন্যেই শিক্ষা গ্রহণকে ফরজ করা হয়েছে । মহানবি ( স ) শিক্ষালাভের জন্যে প্রয়োজনে চীন দেশ পর্যন্ত যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন । যে ব্যক্তি শিক্ষা গ্রহণ করে না তার শ্রমের মূল্য নিতান্তই কম । শারীরিক শ্রম ছাড়া তার আর কোনো কাজ করবার শক্তি থাকে না । শিক্ষিত মানুষ শারীরিক শ্রমের পাশাপাশি আত্মিক ও মেধা শ্রমনির্ভর কাজে উন্নতি লাভে সক্ষম হয় । সেই সাথে সে সমগ্র জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যায় উন্নতির সোনালি সোপানে । বিজ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তির পরিচর্যা ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক এ পৃথিবীতে ব্যক্তি মানুষ থেকে জাতি বা রাষ্ট্র কেউ - ই টিকে থাকতে পারে না । আজকের দিনে যেসব জাতি সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছে তারা সর্বাগ্রে জনগণকে শিক্ষিত করে তুলেছে । কারিগরি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে এসব দেশের জনগণ হয়েছে যোগ্য মানবসম্পদ ।
বাংলাদেশের মানবসম্পদ পরিস্থিতি :
বাংলাদেশে রয়েছে কাম্য জনসংখ্যার চাইতে অনেক বেশি মানুষ । এ বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে আমাদের ক্ষুদ্র দেশটি আজ বিপাকে পড়েছে । জনসংখ্যা জনশক্তিতে পরিণত না হওয়ায় বাংলাদেশ আজ দারিদ্র্যের চরম সীমায় পৌঁছেছে । আর দেশের এই দুঃসহ দারিদ্র্য সৃষ্টি হয়েছে অশিক্ষাজনিত অভিশাপ থেকে । এদেশের শতকরা প্রায় ৬৫ ভাগ মানুষ আজও অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত । ফলে শুধুমাত্র শারীরিক শ্রমনির্ভর বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ খুঁজে পাচ্ছে না । তাদের জীবন - চেতনা ও জীবনমানও স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত নাজুক । অথচ এসব বিপুল জনগোষ্ঠী হতে পারত বাংলাদেশের উন্নয়নের একমাত্র সহায়ক শক্তি । কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে এদেশের মানুষের ভিখারি বা বেকারের হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরিত করা গেলে বাংলাদেশের কপাল থেকে দারিদ্র্যের দুর্নাম ঘুচে যেত ।
উপসংহার :
মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া কোনো দেশই উন্নতির সোপানে পা রাখতে পারে না । আমাদের মতো দরিদ্র ও বর্ধিত জনসংখ্যার দেশে শিক্ষা দ্বারা মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের কল্পনা করা বৃথা । সেজন্যে আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে ।
আরো পড়ুন:
- খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা [প্রবন্ধ রচনা]
- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য [প্রবন্ধ রচনা]
- বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য বা রূপসী বাংলাদেশ [প্রবন্ধ রচনা]
- সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার [প্রবন্ধ রচনা]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের নিবন্ধগুলিতে মন্তব্য করার সময় দয়া করে শ্রদ্ধাশীল এবং গঠনমূলক হন। অনুপযুক্ত, আপত্তিকর, বা অফ-টপিক মন্তব্য মুছে ফেলা হবে। আসুন ABC আইডিয়াল স্কুলের সকল পাঠকদের জন্য একটি ইতিবাচক এবং শিক্ষামূলক পরিবেশ বজায় রাখি। আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ!