পহেলা বৈশাখ রচনা | বাংলা নববর্ষ উৎসব রচনা | বাংলা নববর্ষ রচনা সহজ

পহেলা বৈশাখ

পহেলা বৈশাখ রচনা | বাংলা নববর্ষ উৎসব রচনা | বাংলা নববর্ষ রচনা সহজ

ভূমিকা:

পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির জীবনে একটা জাতীয় উৎসব । এ দিনে বাঙালিরা আনন্দ - উদ্দীপনায় , উৎসাহ - উচ্ছাসে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় ও পুরানাে বছরকে বিদায় জানায় । সুতরাং যে উৎসবের সঙ্গে বৃহত্তর সমাজ যােগ দেয় , তা সংকীর্ণ সীমা অতিক্রম করে জাতীয় উৎসবের মর্যাদা লাভ করে । নববর্ষ উৎসব তেমনি বাঙালি জাতির একটি জাতীয় উৎসব ।

নববর্ষের উৎপত্তি:

মহাকাল বয়ে চলেছে অনাদিকাল থেকে । এই অনাদিকালকে মানুষ খণ্ডিত করে পুনরায় আরম্ভের পক্ষপাতী । এভাবে সৃষ্টি হয়েছে বছরের । তাই বছর মানুষের সৃষ্টি । পৃথিবীর সকল সভ্যদেশেরই নিজস্ব অব্দ বা বর্ষ গণনার রীতি প্রচলিত আছে । বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি । বাংলাদেশের নিজস্ব অব্দ হল বঙ্গাব্দ বা বাংলা সাল । প্রাচীনকালে আমাদের দেশে বর্ষ আরম্ভ হত অগ্রহায়ণ মাস হতে । অগ্রহায়ণ মাসের নাম ছিল মার্গশীর্ষ মাস । অশিক্ষিত জনসাধারণ তখনাে চন্দ্র - সূর্যের গতি দেখে বর্ষ গণনা করতে শেখেনি । প্রাকৃতিক স্বভাবের লক্ষণ দেখে তারা বছর গণনা করত । অগ্র অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ , হায়ণ অর্থাৎ ব্রীহি বা ধান ( শস্য ) জন্মে যে সময় , সেটাই হল অগ্রহায়ণ মাস । কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় ও ঋণ পরিশােধের এটাই ছিল উপযুক্ত সময় । কারণ এ সময়ে কৃষকেরা জমি হতে ফসল ঘরে তুলত ও ফসল বিক্রি করে নগদ অর্থ লাভ করত । কিন্তু কালের গতি পরিবর্তনশীল । ক্রমে অগ্রহায়ণের পরিবর্তে বৈশাখ হতে বর্ষ গণনা শুরু হল । বিশাল নক্ষত্রযুক্ত পূর্ণিমার নাম বৈশাখী । সুতরাং যে মাসে এই বৈশাখী হয় , তার নাম হয় বৈশাখ ।

বাংলা সনের ইতিবৃত্ত:

বাংলা সন প্রচলনের পেছনে দুইজন মুসলমান সম্রাটের নাম জড়িত । “ সন" আরবী শব্দ । সাধারণের ধারণা , সেই সময়ে প্রচলিত সৌৱবছর ও মুসলিমদের হিজরী সনের অর্থাৎ চান্দ্রবছরের সমন্বয়ে বাংলার সুলতান হােসেন শাহের প্রচেষ্টায় বাংলা সন প্রথম চালু হয় । হােসেন শাহের রাজত্বকাল আরম্ভ হয় ৯০৩ হিজরী অর্থাৎ ১৪৯৬ খ্রীস্টাব্দে । ঠিক ঐ সময় বা এর কিছুকাল পর বর্তমান বাংলা সনের সূচনা হয় । আবার বাংলা সনের প্রবর্তক হিসেবে অনেকে মােঘল সম্রাট আকবরের কথাও উল্লেখ করেন । তাঁদের মতে , হিজরী সন হতে ১০ দিন কম ধরে সম্রাট আকবর বাংলা সন নির্ধারণ করেন । আকবর সিংহাসনে আরােহণ করেন হিজরী ৯৬৩ সনে ( ইং ১৫৫৬ খ্রীস্টাব্দে ) । কিন্তু তখনাে ৯৪৫ বাংলা সনের লিখিত হস্তলিপি পাওয়া গিয়েছিল । তা হলে এতে সন্দেহ নেই যে , আকবরের বহু পূর্ব হতেই বাংলা সন প্রচলিত ছিল । এ কারণে প্রচলিত মত বা বিশ্বাস হল , সুলতান হােসেন শাহই বর্তমান বাংলা সনের স্রষ্টা । তবে তার আমলে বাংলা সন প্রথম প্রচলিত হলেও আকবরের আমলেই এটা সর্বভারতীয় সনসমূহের অন্যতম সন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ।

নববর্ষের তাৎপর্য:

বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে নবচেতনার আলােকে অবগাহনের দিন । পয়লা বৈশাখের সঙ্গে মুছে যায় যত সব জীর্ণ পুরাতন , মানুষ বরণ করে নেয় চিরনতুনকে । তাই নববর্ষ বাঙালির জীবনে নব উন্মেষের দিন- অতীতকে মুছে ফেলার দিন- যগত দিনের সব দুঃখ ব্যথাকে , একরাশ হাসি , আনন্দ আর গান দিয়ে ঢেকে দেওয়ার দিন । কবি রবীন্দ্রনাথও তাই বলেছেন –

পুরাতন জীবনে জীর্ণক্লান্ত রাত্রি

কেটে যাক ওরে যাত্রী ।

কিভাবে নববর্ষ পালিত হয়:

মানুষ অতীতের ব্যর্থতা ও গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন বছরে আরাে ভালভাবে জীবন যাপন করতে চায় । এজন্য প্রতিটি বাঙালি এ দিনটিকে উৎসব মুখর করে তােলে । সরলপ্রাণ বাঙালিরা বিশ্বাস করে , বছরের প্রথম দিনটি যেমন যাবে , সারা বছরটিও তেমনি যাবে । এ দিনে মানুষ ভাল খায় , তাল পরে , ভাল ব্যবহার করে , যাতে এ দিনের মত সারা বছরই আনন্দে কেটে যায় । এ কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নববর্ষ দিবস মহা সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় । আবহমানকালের ঐতিহ্য ও কৃষ্টি অনুযায়ী , বাঙালিরা এ দিনে পান্তাভাত খায় , পিঠা - মিঠাই - মণ্ডাই উপভােগ করে । নববর্ষের শুরুতে নানা স্থানে বৈশাখী মেলাও বসে এবং লােকজন বিভিন্ন আনন্দানুষ্ঠানে মেতে উঠে । পয়লা বৈশাখে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা যায় “ হালখাতা উৎসব " । এদিনে মনােজ্ঞ উপকরণে দোকানঘর সেজে হালখাতা মহরৎ করা হয় । গ্রাহকদেরকে মিষ্টান্ন , পলান্ন ইত্যাদি খাওয়ানাে হয় । এ দিনে গৃহস্থরাও বহুবিধ অনুষ্ঠান পালন করে । তারা আত্মীয় পরিজনকে ডেকে খাওয়া - দাওয়াসহ নানা আনন্দ উৎসবে মত্ত হয় । মােট কথা , পয়লা বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্যকে স্মরণ করার দিন , বাঙালিত্ব বহাল রাখার এক মহড়ার দিন ।

উপসংহার:

নববর্ষ বাঙালির কাছে জাতীয় মহােৎসবের দিন । এ দিনে আমরা পুরানাে বছরকে বিদায় দিয়ে আনন্দ - উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিই এবং কামনা করি , সবাই যেন আগামী বছর সুখে - শান্তিতে , আনন্দে - উল্লাসে , দিনযাপন করতে পারি । নববর্ষ সবার জীবনে সুখ , শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক , কায়মনােবাক্যে আমরা সবাই এ প্রার্থনাই করি ।

প্রভাত সূর্য এসেছে রুদ্র সাজে ,
দুঃখের পথে তােমার তুর্য বাজে।


আরো পড়ুন: