কম্পিউটার রচনা | কম্পিউটার রচনা ২০ পয়েন্ট

কম্পিউটার

এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:
👉কম্পিউটার ও এর ব্যবহার
👉কম্পিউটার: বিজ্ঞানের বিস্ময়
👉কম্পিউটার ও আধুনিক বিশ্ব
👉কম্পিউটার ও আধুনিক সভ্যতার
👉আধুনিক জীবনে কম্পিউটার
👉আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কম্পিউটার
👉কম্পিউটার ও বাংলাদেশ
👉কম্পিউটার: আধুনিক সভ্যতার সুপার
👉দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার
👉কম্পিউটার বিজ্ঞানের এক বিস্ময়

ভূমিকা:

কম্পিউটার বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার । এটি বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতির একটি উজ্জ্বল স্বাক্ষর । বলা যায় , প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এ যেন আলাদীনের যাদুই চেরাগ , যার দৈত্য “ যো হুকুম তামিল করার জন্য সদা প্রস্তুত " । বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত কলা - কৌশলে প্রস্তুত এ যন্ত্র অতি অল্প সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান , বিশেষত , কঠিন গাণিতিক হিসাব - নিকাশ , বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ ও আদান - প্রদান নির্ভুলভাবে করে দিতে পারে । বর্তমানে আমাদের জীবন যাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে । যানবাহন , কলকারখানা পৱিচালনা থেকে শুরু করে মঙ্গল গ্রহের মাটি সংগ্রহের কাজ পর্যন্ত কম্পিউটার দ্বারা করা হচ্ছে । এর ফলে মানুষের কর্মক্ষেত্রে অনেক শ্রম লাঘব হয়েছে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রের উপর মানুষের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।

আবিষ্কারের ইতিহাস:

এ যন্ত্র কোন ব্যক্তিবিশেষের একক আবিস্কার নয় । প্রাচীন গণকযন্ত্র “ অ্যাবাকাস " ছিল প্রথম যুগের কম্পিউটার । তবে আমরা কম্পিউটারের বর্তমান যে রূপ দেখতে পাই তার পশ্চাতে যার কৃতিত্ব সর্বাধিক তিনি হলেন ইংলণ্ডের গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ । তাঁকেই আধুনিক কম্পিউটারের জনক ’ বলা যেতে পারে । আধুনিক প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্সের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে উন্নত ধরনের স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে । প্রথম স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক কম্পিউটার নির্মিত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে অর্থাৎ ১৯৪৬ সালের কাছাকাছি সময়ে । যুদ্ধের প্রয়ােজনে এ কম্পিউটার এখন উন্নত দেশগুলােতে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে । এর সাহায্যে যে কোন লক্ষ্য বস্তুর উপর বহু দূর থেকে শুধু একটি সুইচ টিপে মরণ - বােমা নিক্ষেপ করা সম্ভব । প্রথম দিকে কম্পিউটার ছিল বিশাল আকৃতির ও অনেক কম ক্ষমতা সম্পন্ন । বর্তমানে অস্বাভাবিক ক্ষমতাসম্পন্ন সুপার কম্পিউটারের আবির্ভাব ঘটেছে । এটি আকারে ছােট হতে হতে বর্তমানে হাতে বহনযোগ্য পর্যায়ে পৌঁজেছে এবং আজকের একটি অতি ছোট কম্পিউটার পূর্বের প্রায় ৩০ টন ওজনের কম্পিউটারের চেয়েও হাজার হাজার গুণ অধিক শক্তিশালী ।

কম্পিউটারের প্রকারভেদ:

কাজের ধরণ , ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কম্পিউটার বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে । তথ্য বা ডাটা ( data ) প্রক্রিয়াকরণ ( processing ) পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায় , যথা- ( ১ ) এনালগ কম্পিউটার , ( ২ ) ডিজিটাল কম্পিউটার ও ( ৩ ) হাইব্রিড কম্পিউটার । (১ ) এনালগ কম্পিউটারঃএটি তথ্য সরবরাহে এবং বহু তথ্যের দ্রুত সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম । রাসায়নিক , পেট্রোলিয়াম ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে এটি ব্যবহৃত হয় । ( ২ ) ডিজিটাল কম্পিউটারঃ এটি তথ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় । এর বৃহৎ স্মৃতিভাণ্ডার আছে যার মধ্যে লক্ষ লক্ষ তথ্য সংরক্ষিত থাকে এবং অতি দ্রুত তা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যায় । বর্তমানকালের আধুনিক কম্পিউটার বলতে এই ডিজিটাল কম্পিউটারকে বােঝায় । ( ৩ ) হাইব্রিড কম্পিউটারঃ এই কম্পিউটার এনালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের সমন্বয়ে প্রস্তুত হয় । সাধারণত বৈজ্ঞানিক গবেষণামূলক কাজে এটি ব্যবহৃত হয় । আকার ও ক্ষমতা অনুযায়ী কম্পিউটারকে আবার চার ভাগে ভাগ করা যায় , যথা- ( ১ ) সুপার কম্পিউটার , ( ২ ) মেইনফ্রেম কম্পিউটার , ( ৩ ) মিনি কম্পিউটার ও ( ৪ ) মাইক্রো কম্পিউটার । এ সবের মধ্যে সুপার কম্পিউটার সর্বাধিক শক্তিশালী , ব্যয়বহুল ও অতি দ্রুত গতি সম্পন্ন । এটি গবেষণামূলক কাজে ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় । অফিস , আদালত , দোকান - পাট ইত্যাদিতে মাইক্রো কম্পিউটার অধিক ব্যবহৃত হয় । বর্তমান বিশ্বে এই কম্পিউটার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ।

গঠন প্রকৃতি ও কার্যক্রম:

সাধারণভাবে কম্পিউটারকে ‘ গণনাকারী যন্ত্র ' বলা যায় । সূক্ষ্ম গাণিতিক হিসাবপত্র করাই এর কাজ । তবে বর্তমানে কেবল হিসাব - নিকাশের কাজের মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ নেই । শিক্ষা , বিনােদন , গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয় । সাধারণভাবে কম্পিউটারের দুটি প্রধান অংশ হল , ( ১ ) সঞ্চয় প্রকোষ্ঠ বা data । এতে নানা প্রয়ােজনীয় তথ্য সঞ্চিত থাকে । ( ২ ) যান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা কার্যক্রম বা programme । তথ্য ও কার্যক্রমের বিচিত্র বিন্যাস দ্বারা একটি কম্পিউটারের সাহায্যে নানা ধরনের কাজ করা সম্ভব । কম্পিউটারের যান্ত্রিক কাঠামােকে বলা হয় হার্ডওয়ার । এর সাহায্যে তথ্য সঞ্চয় , তথ্য সন্নিবেশসহ কার্যক্রম পরিচালনা ও সমস্যাসমূহের সমাধান সহজলভ্য হয়ে উঠেছে । কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ অংশ বা ( সি , পি , ইউ ) , হার্ডডিস্ক , কিবাের্ড , মাউস , মনিটর ইত্যাদি নিয়ে কম্পিউটার গঠিত হয় । সি , পি , ইউ , -কে কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বা ব্রেন বলে । এর মাধ্যমে কম্পিউটার যাবতীয় আদেশ - নির্দেশ গ্রহণ করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ হয় । কম্পিউটারের আর একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ হল সফটওয়ার । এটি ছাড়া কম্পিউটার অচল । সফটওয়ারে কম্পিউটারের কাজের নির্দেগুলাে সাজানাে থাকে ।

কম্পিউটারের ব্যবহার:

সূক্ষ্ম গাণিতিক হিসাব ছাড়াও , কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর মাসিক বেতন , বাৎসরিক আয় - ব্যয়ের হিসাব , যােগ্য কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা নির্ণয় , পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ , রােবট বা যন্ত্রমানবের সাহায্যে সমুদ্রের গভীরে অনুসন্ধান কার্য পরিচালনা , মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ ও গতিপথ নির্দেশকরণ , চিকিৎসা ক্ষেত্রে রােগ নির্ণয় , মুদ্রণ ক্ষেত্রে ডিজাইন , অক্ষর বিন্যাস , ছাপার ক্ষেত্রে ছাপার পরিমাণ , কালির আনুপাতিক হার নির্ধারণ , পরিবহনের ক্ষেত্রে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ , অফিসের কাজে ফাইলপত্র সংরক্ষণ ইত্যাদি বিচিত্র ও বিভিন্ন ধরনের কাজ এর সাহায্যে করা হয়ে থাকে । এমনকি , বর্তমানে রান্না - বান্না থেকে শুরু করে চিত্তবিনােদন তথা গান - বাজনা পর্যন্ত কম্পিউটারের সাহায্যে করা হচ্ছে । সুতরাং এতে কোন সন্দেহ নেই যে , অদূর ভবিষ্যতে এটি আমাদের সকল কাজ - কর্মের নিত্যসাথী হয়ে দাঁড়াবে ।

উপসংহার:

মানুষের নানা কাজে কম্পিউটার বর্তমান জগতে একটি অপরিহার্য বস্তু । কম্পিউটার ছাড়া বর্তমান বিশ্ব অচল । ভবিষ্যতে কম্পিউটার মানুষের সকল কাজকর্মে অত্যাবশ্যকীয় বস্তু বলে পরিগণিত হবে । তবে মনে রাখা আবশ্যক , কম্পিউটার নামক যন্ত্রটির উপর নির্ভর করতে করতে আমরা যেন ঠুটো জগন্নাথ ’ হয়ে না বসি , আমরা যেন অতিমাত্রায় যান্ত্রিক হয়ে না পড়ি।


আরো পড়ুন: