বাজারে খাদ্যে ভেজালের কারণ ও প্রতিকার ' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন রচনা কর

খাদ্যে ভেজালের কারণ ও প্রতিকার

আলোচ্য বিষয়:
👉🏻 খাদ্যে ভেজালের কারণ ও প্রতিকার ' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন রচনা কর ।
👉🏻 ' খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা কর ।
👉🏻 বাজারে খাদ্যে ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ সম্পর্কিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন রচনা করো ।

শিরোনাম : খাদ্যে ভেজালের কারণ ও প্রতিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : খাদ্যে ভেজাল বলতে মূলত , বেশি দামের পণ্যের সাথে কম দামের পণ্য কিংবা খাদ্যপণ্যের সাথে অখাদ্য - কুখাদ্য মিশিয়ে বিক্রি করাকেই বুঝায় । চালের সাথে পাথর , নুড়ি , ঘিয়ের সাথে পশুচর্বি , লবণের সাথে বালু ইত্যাদি ভেজাল সম্পর্কে কমবেশি সবারই জানা । আধুনিককালে খাদ্যপণ্য যান্ত্রিক উপায়ে প্রক্রিয়াকরণের সময় ভেজাল ও অখাদ্য এমনভাবে মেশানো হয় যে , আসল - নকলের পার্থক্য নিরূপণ করা সাধারণভাবে সম্ভব হয়ে উঠে না ।

খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার মূল কারণ ব্যবসায়ীদের অতিমাত্রায় অর্থলালসা ও নৈতিকতার অভাব । তারা সামান্য বাড়তি লাভের আশায় মানুষকে প্রতারিত করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে মানুষের মুখে বিষ উঠিয়ে দেয় । কিন্তু ব্যবসায়ীদের এই অপচেষ্টা সফল হতো না যদি সরকারের যথাযথ তদারকি থাকত এবং আইনের কড়াকড়ি প্রয়োগ হতো । বাংলাদেশে অধিকাংশ খাদ্য উপকরণ , পণ্য ও তৈরিখাদ্য প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই , নেই বিএসটিআই কর্তৃক প্রদত্ত ছাড়পত্র । ভুয়া লাইসেন্স কিংবা ছাড়পত্র দেখিয়ে অবলীলায় ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকে নির্বিকার । ব্রিটিশ আমলের ভেজালবিরোধী আইন আজও সংস্কার করা হয় নি । ভেজালের জন্য ভোক্তাদের অসচেতনতাও কম দায়ী নয় । অনেকেই সামান্য কমমূল্যের কারণে জেনেবুঝেই খাবার অযোগ্য পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে থাকে । সর্বোপরি জাতি হিসেবে আমাদের হীন মানসিকতা ও সততার ক্ষেত্রে দৈন্যই খাদ্যে ভেজালের প্রধান কারণ । ভেজালবিহীন খাদ্য দেশে পাওয়া এক কথায় দুরূহ । সুদৃশ্য মোড়কবন্দি কিংবা খোলা কোনো পণ্যই ভেজাল ছাড়া নেই । শাকসবজি ও ফলমূল , ঘি ও ভোজ্যতেল , মাছ , মাংস ও শুঁটকি , চাল - ডাল ও আটা - ময়দা , গুঁড়া মশলা , গুড়া দুধ , আয়োডিনযুক্ত লবণ , মিনারেল ওয়াটার , জুস , জ্যাম ও জেলি , শিশুখাদ্য ও মুখরোচক খাদ্যে ভেজালের প্রমাণ পাওয়া গেছে । খাদ্যে ভেজাল ও অপদ্রব্য মেশানোর ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে ।

খাদ্যে ভেজাল ও অপদ্রব্য মেশানোর ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। চাল - ডাল থেকে ভেজাল ও অপদ্রব্য বাদ দিলে মানুষ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় । ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষ ক্যান্সার , শ্বাসকষ্ট , কিডনি রোগ , জন্ডিস , পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয় । ভেজাল খাদ্যের সবচেয়ে মারাত্মক শিকার হয় শিশুরা । রং ও কেমিক্যালযুক্ত খাবার খেয়ে শিশুরা প্রায়শ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় । ভেজাল খাদ্য আমাদের দেশের জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে ।

খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে সবার আগে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে । জনসচেতনতাই ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা রোধ করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে । আমাদের ভেজালবিরোধী আইনকে আরও যুগোপযোগী করতে হবে । ভেজালকারীদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে । বিএসটিআইকে দুর্নীতিমুক্ত ও আরও সক্রিয় করতে হবে । ভেজালবিরোধী অভিযানকে আরও জোরদার করতে হবে । এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জনবল ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে । ভেজাল চিহ্নিত করার জন্য প্রযুক্তি সংগ্রহ করতে হবে । আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও র‍্যাবকে এক্ষেত্রে অধিকতর ক্ষমতা দিতে হবে । ভেজালবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার আন্দোলন জোরদার করতে হবে । ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য মোটিভেশন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে ।

খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল আমাদের দেশের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিরই একটি সূচক । এটি আমাদের নৈতিকতার দৈন্যতাকেই প্রকটতর করে তোলে । ভেজাল খাদ্য আমাদের কেবল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে না , আমাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখেও ঠেলে দেয় । খাদ্যে ভেজালের এ অবস্থা অব্যাহতভাবে চলুক এটি কেউই কামনা করতে পারে না । ভেজাল খাদ্যের অভিশাপ থেকে আমাদের অবশ্যই মুক্তি পেতে হবে । সচেতন ব্যক্তি মাত্রই আশা করে যে সরকার খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেবে ।


আরো পড়ুন: