প্রতিবেদন: ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নিয়ে প্রতিবেদন লিখ

ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

আলোচ্য বিষয়:
👉🏻ভয়াবহ বন্যায় দুর্গত এলাকার একটি গ্রামের চিত্র তুলে ধরে জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন লিখো।
👉🏻বন্যাদুর্গত এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবনের বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো ।
👉🏻কোনো বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনের উপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন রচনা করো ।

শিরোনাম : বানভাসী শিমুলতলা গ্রামের মানুষ একমাস মাটি দেখে নি

জামালপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক : জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানাধীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট্ট গ্রাম শিমুলতলার মানুষ প্রায় একমাস যাবৎ ঘরের চাল বা মাচার উপর বাস করছে । গ্রামে একবিন্দু ভূমিও জেগে নেই ।তাই এই গ্রামের ৫/৬ শ মানুষ একমাস মাটি দেখে নি ।

এই প্রতিবেদক সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে শিমুলতলাবাসীর অবর্ণনীয় দুরবস্থা দেখতে পান । ছোট্ট শিমুলতলা গ্রামটিকে দেখে ভাসমান একটি বস্তি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না । প্রতিটি ঘরের ভেতরে হাঁটু - বুক সমান পানি । অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ফেলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে । অনেকে ঘরের চালে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে । কেউ কেউ ঘরের ভেতর মাচা পেতে পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করছে । সাপ , পোকামাকড়ের উপদ্রবে তাদের দিনরাত ভীতির মধ্যে থাকতে হচ্ছে । ইতোমধ্যে এই গ্রামের তিন জন মানুষ সাপের কামড়ে মারাও গেছে ।

সবচেয়ে দুর্গতি সৃষ্টি হয়েছে গৃহপালিত পশু - পাখিগুলোর । গ্রামের অধিকাংশ কৃষক তাদের গরু - ছাগল বিক্রি করে দিয়েছে । দিনের পর দিন গবাদিপশুগুলো পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে অস্থিচর্মসার হয়ে বেঁচে আছে । খাদ্যের অভাবে গরু - ছাগলগুলো জীর্ণ - হাড্ডিসার হয়ে পড়েছে । হাঁস - মুরগিগুলোও গাছের ডালে , ঘরের চালে কোনোমতে বেঁচে আছে ।

সর্বনাশা বন্যার এই ছায়া সুনিবিড় ছবির মতো গ্রামখানিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে । বন্যার পানিতে অনেক গাছপালা মরে যাচ্ছে । কাঁচা ঘরগুলো ভেঙে পড়েছে । ঝোপ - জঙ্গল পানিতে পচে গেছে । পানি নামতে শুরু করামাত্রই এখানে নানাপ্রকার রোগ - ব্যাধি মহামারি আকারে দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।

গ্রামখানির সর্ব দক্ষিণে কলিম মিয়ার বাড়ি । সে বাড়ির লোকজনের চোখে - মুখে বন্যাজনিত দুশ্চিন্তার চেয়েও তীব্র দুঃখের ছায়া নেমে এসেছে । কারণ এ বাড়িতে একই রাতে সাপের কামড়ে দু'ভাইবোনের করুণ মৃত্যু হয়েছে । কলিম মিয়া প্রিয় সন্তান দুটিকে কবর দেবার মতো একটু শুকনো জায়গাও খুঁজে পান নি । তাই কলা গাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে ভাইবোনের জোড়া লাশ । লাশের সাথে চিরকুটে লিখে দেওয়া হয়েছে — ' মুসলমান ছেলে - মেয়ে দুটির লাশ পেয়ে দয়া করে কবরে দাফন করুন ' । কলিম মিয়ার স্ত্রী নির্বাক নিথর হয়ে আছেন । গ্রামের অন্যান্য কৃষকরাও ফসল হারিয়ে এখন নিঃষ্প্রায় আগামী দিনে পরিবার - পরিজনদের মুখে কী তুলে দেবে সে ভাবনায় তারা আজ দিশেহারা । গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলো অনাহারে দিন কাটাচ্ছে । সরকারি - বেসরকারি পর্যায়ে যে ত্রাণ সাহায্য আসছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য ।

এমতাবস্থায় বন্যার পানি নামার পর শিমুলতলা গ্রামবাসীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কৃষিঋণ , কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রভৃতি চালু করা প্রয়োজন । তাছাড়া বিশুদ্ধ পানীয়জলের ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করা গেলে কলেরা - ডায়রিয়াসহ নানাপ্রকার রোগ - ব্যাধি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে ।