প্রবন্ধ রচনা: বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ও অভিশাপ
বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ও অভিশাপ
সূচনা:
বর্তমান যুগে সকল মানুষের সকল কর্ম প্রচেষ্টা ও সফলতার মূলে রয়েছে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর শক্তি । এক কথায় , আধুনিক সভ্যতা বিজ্ঞানের দান বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি শক্তি প্রয়ােগ করে মানুষ চাঁদে যাচ্ছে , গ্রহ - নক্ষত্রের রহস্য উন্মােচন করছে , জলে - স্থলে - আকাশে আপন প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করে চলছে ।
বিজ্ঞানের দু’টি রূপ:
বিজ্ঞানের সহায়তায় আমরা অনেক কিছু পেয়েছি । এর বিস্ময়কর অবদান আমরা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারি না । বিজ্ঞানের শক্তি আমাদের বাহুকে শক্ত ও সভ্যতাকে পরিপুষ্ট করে তুলেছে । কিন্তু বিজ্ঞানের অপব্যবহারে আমরা ক্ষতিগ্রস্তও কম হইনি । গড়ার ও ভাঙ্গার – এ দুই শক্তিতেই বিজ্ঞান প্রচণ্ড । কাজেই বিজ্ঞান আশীর্বাদ ও একই সাথে অভিশাপ । বিজ্ঞান ভৃত্যরূপে আমাদের সেবায় নিয়ােজিত , কিন্তু কর্তারূপে পৃথিবীর ধ্বংস সাধনে উদ্যত ।
বিজ্ঞানের আশীর্বাদ:
বিজ্ঞান মানুষের জ্ঞান ও দৃষ্টির পরিধি বাড়িয়ে দিয়ে দৃশ্য ও অদৃশ্য জগতের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করে দিয়েছে । আলাের রহস্য , ইথারের রহস্য , অণু - পরমাণুর রহস্য প্রভৃতি রহস্য উন্মোচন করে বিজ্ঞান মানুষের অশেষ কল্যাণ সাধন করছে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বিজ্ঞান আমাদের সঙ্গী । কলকারখানায় , কৃষিক্ষেত্রে , চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান আমাদের অশেষ কল্যাণ এনে দিয়েছে । কৃষিক্ষেত্র সম্প্রসারণে , বাঁধ নির্মাণে , জলসেচে , যোগাযোগ ব্যবস্থায় , চিত্তবিনােদনে সর্বত্রই বিজ্ঞানের জয়জয়কার ।
বিজ্ঞানের অভিশাপ:
কিন্তু বিজ্ঞানের আশীর্বাদপুষ্ট চেহারাটি দেখে তৃষ্ট হবার কারণ নেই । বিজ্ঞানের সহায়তায় মানুষ যে সকল মারণাস্ত্র আবিষ্কার করেছে , সেগুলাের ভয়াবহতা মানুষের রক্তকে হিম করে দেয় । রাইফেল , কামান হতে শুরু করে আণবিক বােমা , হাইড্রোজেন বােমা , জীবাণু বােমা , আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রভৃতির ধ্বংসাত্বক ক্ষমতা চিন্তাশীল মানুষের চোখের নিদ্রা টুটিয়ে দিয়েছে । ধনধান্যেপূর্ণ সুন্দর এ পৃথিবীটাকে ধ্বংস করার জন্য যে পরিমাণ মারণাস্ত্র দরকার , মানুষের হাতে তার বহুগুণ বেশী মারণাস্ত্র মজুত আছে । মানুষ হিরােসিমা ও নাগাসাকির ধ্বংসযজ্ঞের কথা ভুলে যায়নি । দুর্ভাগ্যক্রমে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তার ফলাফল দেখার জন্য বা লেখার জন্য কোন মানুষ আর বেঁচে থাকবে কিনা সন্দেহ । বিজ্ঞানের অভিশপ্ত দিকটি বিচারের জন্য ভয়াবহ এ চিত্রটি যথেষ্ট । ভবিষ্যৎ যুদ্ধে যদি বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত আধুনিক মারণাস্ত্রসমূহ ব্যবহৃত হয় , তবে পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য । আধুনিক বিজ্ঞানের এ ধ্বংস দেখেই হয়তাে বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন বলেছিলেন , " পৃথিবী এক অনিবার্য ধ্বংসের মুখে এগিয়ে চলেছে । ” আণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা চিন্তা করলে তার এ কথাকে উড়িয়ে নেয়া যায় না ।
উপসংহার:
এখন প্রশ্ন , বিজ্ঞানের সহায়তায় আমরা বাঁচতে চাই , না মরতে চাই ? মানব কল্যাণে বিজ্ঞানকে নিয়ােজিত করলে পৃথিবী আরাে সুন্দর ও আরাে শােভন হয়ে উঠবে , কিন্তু এর বিপরীত ঘটলে সর্বাত্মক ধ্বংস অনিবার্য । বিশ্ববাসীর কামনা , মানুষের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হােক , বিজ্ঞানের অভিশাপ হতে মনুষ্যজাতির মুক্তির পথ সুগম হােক ।
আরো পড়ুন:
- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য [প্রবন্ধ রচনা]
- বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য বা রূপসী বাংলাদেশ [প্রবন্ধ রচনা]
- সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার [প্রবন্ধ রচনা]
- দৈনন্দিন জীবনে সংবাদপত্রের গুরুত্ব [প্রবন্ধ রচনা]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের নিবন্ধগুলিতে মন্তব্য করার সময় দয়া করে শ্রদ্ধাশীল এবং গঠনমূলক হন। অনুপযুক্ত, আপত্তিকর, বা অফ-টপিক মন্তব্য মুছে ফেলা হবে। আসুন ABC আইডিয়াল স্কুলের সকল পাঠকদের জন্য একটি ইতিবাচক এবং শিক্ষামূলক পরিবেশ বজায় রাখি। আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ!