স্থিতিস্থাপকতা (Elasticity)
স্থিতিস্থাপকতা (Elasticity)
পদার্থবিজ্ঞানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো স্থিতিস্থাপকতা। যখন আমরা কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করি, তখন তার আকার বা আয়তনের পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু বল সরিয়ে নিলে বস্তুটি যদি পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসে, তবে সেই ধর্মকেই বলা হয় স্থিতিস্থাপকতা।
স্থিতিস্থাপকতা কী?
কোনো বস্তুর ওপর বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করলে তার দৈর্ঘ্য, আয়তন বা আকৃতির পরিবর্তন ঘটে—একে বলা হয় বিকৃতি (Strain)। বস্তুর ভেতর থেকে এই বিকৃতিকে বাধা দেওয়ার জন্য এবং আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য যে বলের সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় স্থিতিস্থাপক বল।
সহজ কথায়, বস্তুর আগের অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতাকেই স্থিতিস্থাপকতা বলে। যেমন: রবার ব্যান্ড টেনে ছেড়ে দিলে তা আগের জায়গায় ফিরে আসে।
মূল ধারণা ও টার্মিনোলজি
স্থিতিস্থাপকতা বুঝতে হলে তিনটি প্রধান বিষয় জানা জরুরি:
- পীড়ন (Stress): প্রতি একক ক্ষেত্রফলের ওপর প্রযুক্ত অভ্যন্তরীণ বাধাদানকারী বলকে পীড়ন বলে। এর একক হলো নিউটন/বর্গমিটার (N/m²) বা প্যাস্কেল (Pa)।Stress = Force (F) / Area (A)
- বিকৃতি (Strain): বাইরে থেকে বল প্রয়োগের ফলে বস্তুর একক মাত্রা (দৈর্ঘ্য বা আয়তন) যে পরিবর্তন হয়, তাকে বিকৃতি বলে। এর কোনো একক নেই।Strain = Change in Length (ΔL) / Original Length (L)
- স্থিতিস্থাপক সীমা (Elastic Limit): বল প্রয়োগের একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বস্তু তার স্থিতিস্থাপক ধর্ম বজায় রাখে। এই সীমার চেয়ে বেশি বল প্রয়োগ করলে বস্তুটি আর আগের অবস্থায় ফিরে আসে না।
হুকের সূত্র (Hooke's Law)
স্থিতিস্থাপকতার মূল ভিত্তি হলো রবার্ট হুকের দেওয়া সূত্রটি:
"স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বস্তুর পীড়ন তার বিকৃতির সমানুপাতিক।"
অর্থাৎ, Stress ∝ Strain বা, Stress = E × Strain (এখানে E একটি ধ্রুবক, যাকে স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক বলে)।
স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক (Elastic Moduli)
| গুণাঙ্কের নাম | বিবরণ |
|---|---|
| ইয়ং গুণাঙ্ক (Young's Modulus) | কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্যের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত। |
| আয়তন গুণাঙ্ক (Bulk Modulus) | কোনো বস্তুর আয়তন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত। |
| দৃঢ়তার গুণাঙ্ক (Modulus of Rigidity) | বস্তুর আকার বা আকৃতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যে গুণাঙ্ক কাজ করে। |
দৈনন্দিন জীবনে উদাহরণ ও প্রয়োগ
- স্প্রিং: ঘড়ি, গাড়ির শক শোষক (Shock Absorber) এবং ব্যায়ামের সরঞ্জামে স্প্রিংয়ের স্থিতিস্থাপকতা ব্যবহার করা হয়।
- নির্মাণ কাজ: ব্রিজ বা বহুতল ভবন নির্মাণের সময় রড বা বিমের স্থিতিস্থাপকতা হিসাব করা হয় যাতে অতিরিক্ত চাপে তা ভেঙে না গিয়ে সামান্য নমনীয় থাকে।
- টায়ার: যানবাহনের টায়ার স্থিতিস্থাপক হওয়ার কারণে রাস্তার ধাক্কা সহ্য করতে পারে।
নমনীয় বনাম স্থিতিস্থাপক (Plastic vs Elastic)
- স্থিতিস্থাপক (Elastic): বল সরালে আগের অবস্থায় ফিরে যায় (যেমন: স্টিল, রবার)।
- নমনীয় (Plastic): বল সরালে আগের অবস্থায় ফিরে যায় না (যেমন: কাদা বা প্লাস্টিক)।
- মজার তথ্য: রবারের চেয়ে স্টিল বেশি স্থিতিস্থাপক, কারণ স্টিলকে বিকৃত করতে অনেক বেশি বলের প্রয়োজন হয় এবং এটি খুব দ্রুত আগের অবস্থায় ফেরার চেষ্টা করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের নিবন্ধগুলিতে মন্তব্য করার সময় দয়া করে শ্রদ্ধাশীল এবং গঠনমূলক হন। অনুপযুক্ত, আপত্তিকর, বা অফ-টপিক মন্তব্য মুছে ফেলা হবে। আসুন ABC আইডিয়াল স্কুলের সকল পাঠকদের জন্য একটি ইতিবাচক এবং শিক্ষামূলক পরিবেশ বজায় রাখি। আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ!