পদার্থের গঠন
পৃথিবীতে যত পদার্থ আছে সবই অতি ক্ষুদ্র কণিকা দিয়ে তৈরি। এরা এতোই ক্ষুদ্র যে অতি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারাও তা দেখা যায় না। মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণিকার নাম পরমাণু এবং যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণিকার নাম অণু। প্রতিটি পরমাণুরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এদের নিজ নিজ পারমাণবিক সংখ্যা। পরমাণু ও অণুর আপেক্ষিক এবং প্রকৃত ভর রয়েছে। প্রোটন, ইলেকট্রন ও নিউট্রন পরমাণুর প্রধান কণিকা। পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটন ও নিউট্রন নিয়ে গঠিত নিউক্লিয়াসই তার প্রায় সকল ভর বহন করে। প্রোটনের সমসংখ্যক ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারদিকে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায়। একই মৌলের আবার একাধিক ভরসংখ্যাবিশিষ্ট পরমাণু রয়েছে যাদের আইসোটোপ বলা হয়। মানবজীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদের ব্যবহার ব্যাপক।
অধ্যায়ের বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী
আর্নেস্ট রাদারফোর্ড: নিউজিল্যান্ডীয় নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড (৩০ আগস্ট ১৮৭১ – ১৯ অক্টোবর ১৯৩৭) নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞানের জনক হিসেবে খ্যাত। রাদারফোর্ড স্বর্ণপাত পরীক্ষায় পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে বিক্ষেপণ করেন, যা পরবর্তীতে বোরের পরমাণু মডেল নির্মাণে সহায়ক হয়। তেজস্ক্রিয় মৌলের অর্ধায়ু সম্পর্কে তিনিই ধারণা দেন। রাদারফোর্ড বলেন, তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মাধ্যমে কোনো ভারী মৌল ধীরে ধীরে অন্য কোনো মৌলে রূপান্তরিত হতে পারে। এর ফলস্বরূপ উৎপন্ন হয় আলফা ও বিটা কণা। এই মূল ধারণার জন্যই মূলত তিনি নোবেল পুরস্কার পান।
জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল: স্কটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৩ জুন ১৮৩১৫ নভেম্বর ১৮৭৯) তড়িচ্চুম্বকীয় তত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। উনবিংশ শতকের বিজ্ঞানী হয়েও বিংশ শতকের বিজ্ঞানের উপর এতো প্রভাব ম্যাক্সওয়েল ছাড়া আর কারো ছিল না। এজন্যই আবিষ্কারের মৌলিকত্বের বিচারে নিউটন ও আইনস্টাইনের সাথে তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের ধারণা শুরু হয়েছে ম্যাক্সওয়েলের মাধ্যমে। তিনি তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের যে ব্যাখ্যা করেছিলেন তা ম্যাক্স প্লাঙ্কের কোয়ান্টাম প্রকল্পের আগমনকে ত্বরান্বিত করেছে।
এক নজরে বিভিন্ন যৌগের রাসায়নিক নাম ও সংকেত
যৌগের রাসায়নিক নাম | সংকেত |
---|---|
নাইট্রিক এসিড | HNO3 |
হাইড্রোক্লোরিক এসিড | HCl |
হাইড্রোব্রোমিক এসিড | HBr |
হাইড্রোআয়োডিক এসিড | HI |
কার্বন ডাইঅক্সাইড | CO2 |
কার্বন মনোক্সাইড | CO |
অ্যামোনিয়া | NH3 |
সালফিউরিক এসিড | H2SO4 |
বক্সাইট | Al2O3.2H2O |
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
মৌল: যে পদার্থকে ভাঙলে সেই পদার্থ ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না তাকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলে।
পরমাণু: পরমাণু হলো মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যার মধ্যে মৌলের গুণাগুণ থাকে। যেমন- নাইট্রোজেনের পরমাণুতে নাইট্রোজেনের ধর্ম বিদ্যমান, অক্সিজেনের পরমাণুতে অক্সিজেনের ধর্ম বিদ্যমান।
প্রতীক: কোনো মৌলের ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের সংক্ষিপ্ত রূপকে মৌলের প্রতীক বলে। যেমন হাইড্রোজেনের ইংরেজি নাম Hydrogen তাই এর প্রতীক H।
পারমাণবিক সংখ্যা: কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটনের সংখ্যাকে ঐ মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বলে। পারমাণবিক সংখ্যাকে Z দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
পরমাণুর ভর সংখ্যা: কোনো পরমাণুতে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার যোগফলকে ঐ পরমাণুর ভরসংখ্যা বলা হয়। একে A দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
সৌরমডেল: রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলকে সৌরজগতের সাথে তুলনা করা হয়েছে বলে এ মডেলটিকে সোলার সিস্টেম মডেল বা সৌর মডেল বলে। আবার এ মডেলের মাধ্যমে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড সর্বপ্রথম নিউক্লিয়াস সম্পর্কে ধারণা দেন বলে এ মডেলকে নিউক্লিয়ার মডেলও বলা হয়।
অরবিট: পরমাণুর যে সকল স্থির কক্ষপথে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে তাদেরকে অরবিট বলে।
অরবিটাল: পরমাণুতে বিদ্যমান প্রতিটি প্রধান শক্তিস্তর কতকগুলো উপশক্তিস্তরে বিভক্ত থাকে যাদেরকে অরবিটাল বলে।
পারমাণবিক বর্ণালি: ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে যাবার সময় যে আলো বিকিরণ করে তাকে প্রিজমের মধ্যদিয়ে প্রবেশ করালে সৃষ্ট আলোক রশ্মিকে পারমাণবিক বর্ণালি (Atomic Spectra) বলে।
আইসোটোপ: যে সকল পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা ও নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে একে অপরের আইসোটোপ বলে। যেমন হাইড্রোজেনের ৭টি আইসোটোপ (¹H, ²H, ³H, ⁴H, ⁵H, ⁶H, ⁷H) রয়েছে।
আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর: কোনো একটি পরমাণুর ভর এবং একটি কার্বন-12 পরমাণু ভরের 1/12 অংশের অনুপাতকে ঐ মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর বলে।
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ: যে সকল আইসোটোপের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে (নিজে নিজেই) ভেঙে আলফা রশ্মি, বিটা রশ্মি, গামা রশ্মি ইত্যাদি নির্গত করে তাদেরকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে।
রাসায়নিক সংকেত
সংকেতের প্রকারভেদ (Type of Formula) | বিস্তারিত বিবরণ ও উদাহরণ (Details & Examples) |
---|---|
আণবিক সংকেত (Molecular Formula)
মৌলিক অণুর সংকেত: H2, N2, O2, F2, Cl2, Br2, I2, O3, P4, S8 যৌগিক অণুর সংকেত: H2O, HCl, NaOH, KCl |
উদাহরণ: CaCl2, Al2O3, HF, H2O |
গাঠনিক সংকেত (Structural Formula) |
উদাহরণ:
N2 → N≡N O2 → O=O HF → H–F H2O → H–O–H |
পরমাণুর সাংগঠনিক কণা
ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন
বৈশিষ্ট্য | ইলেকট্রন | প্রোটন | নিউট্রন |
---|---|---|---|
১. আবিষ্কারক | স্যার জে. জে. থমসন | রাদারফোর্ড | চ্যাডউইক |
২. আবিষ্কারের সন | 1897 | 1911 | 1932 |
৩. অবস্থান | নিউক্লিয়াসের বাইরের নির্দিষ্ট কক্ষপথে | পরমাণুর নিউক্লিয়াসে বা কেন্দ্রে | পরমাণুর নিউক্লিয়াসে বা কেন্দ্রে |
৪. প্রতীক | e- | p বা H+ | n |
৫. আধানের প্রকৃতি | ঋণাত্মক | ধনাত্মক | নিরপেক্ষ |
৬. প্রকৃত আধান বা চার্জ | -1.602 x 10-19 C | +1.602 x 10-19 C | 0 |
৭. আপেক্ষিক আধান বা চার্জ | -1 | +1 | 0 |
৮. আপেক্ষিক ভর | 5.5 x 10-4 | তবে সাধারণত 0 ধরা হয় | 1 | 1 |
৯. প্রকৃত ভর | 9.110 x 10-28 g | 1.673 x 10-24 g | 1.675 x 10-24 g |
১০. হাইড্রোজেনের তুলনায় ভর | 1/1840 গুণ | সমান | একটু বেশি |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১। মৌল বা মৌলিক পদার্থ কী? উদাহরণ দাও।
যে পদার্থকে ভাঙলে ঐ পদার্থ ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক পদার্থ বা মৌল বলে। এ মৌলিক পদার্থের উদাহরণসমূহ হচ্ছে : নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), কার্বন (C), অক্সিজেন (০), হিলিয়াম (He), ক্যালসিয়াম (Ca), আর্গন (Ar), সালফার (S) ইত্যাদি। এ পর্যন্ত 11৪টি মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে।
২। যৌগিক পদার্থ কী? উদাহরণ দাও।
যে সকল পদার্থকে ভাঙলে বা রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দুই বা ততোধিক মৌল পাওয়া যায় তাদেরকে যৌগিক পদার্থ বলে। উদাহরণস্বরূপ: লেখার চক (CaCO₃) কে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করলে ক্যালসিয়াম (Ca), কার্বন (C) ও অক্সিজেন (০) ইত্যাদি একাধিক মৌলিক পদার্থ যায়। এক্ষেত্রে CaCO, হচ্ছে তাই যৌগিক পদার্থ।
৩। মৌলিক অণু কী?
একই মৌলের একাধিক পরমাণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হলে তাকে মৌলিক অণু বলে। যেমন- N2, H2, O₂ ইত্যাদি মৌলিক অণুর প্রত্যেকেই একই মৌলের একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত।
৪। যৌগিক অণু কী?
ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণু পরস্পর যুক্ত হলে তাকে যৌগিক অণু বলে। যেমন, CO2, NH2, H₂O ইত্যাদি যৌগিক অণুর প্রত্যেকেই ভিন্ন মৌলের একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত।
৫। মৌলের প্রতীক কী? উদাহরণ দাও।
কোনো মৌলের ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের সংক্ষিপ্ত রূপকে প্রতীক বলা হয়। যেমন ক্যালসিয়াম মৌলের ইংরেজি নাম Calcium; এর সংক্ষিপ্ত প্রকাশ অর্থাৎ প্রতীক Ca। আবার পটাশিয়াম মৌলের ল্যাটিন নাম Kalium; এর সংক্ষিপ্ত প্রকাশ; অর্থাৎ, এর প্রতীক K। কোনো মৌলের এই প্রতীকসমূহ লিখতে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
৬। পরমাণুর সাংগঠনিক কণা কী?
একমাত্র H ব্যতীত সকল পদার্থের পরমাণু যে তিনটি কণা দ্বারা গঠিত, তাকে বলা হয় পরমাণুর সাংগঠনিক (fundamental) বা মৌলিক কণা। পরমাণুর এ ৩টি সাংগঠনিক কণা হচ্ছে- ১. ইলেকট্রন, ২. প্রোটন ও ৩. নিউট্রন। পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসে থাকে প্রোটন ও নিউট্রন এবং নিউক্লিয়াসকে ঘিরে ঘূর্ণায়মান থাকে ইলেকট্রন।
৭। প্রোটন কী? এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
প্রোটন হলো পরমাণুর একটি মৌলিক কণিকা, যার চার্জ বা আধান ধনাত্মক। এ আধানের পরিমাণ + 1.60 × 10-19 কুলম্ব। এর একটি প্রোটনের ভর 1.67 × 10-24 g। এর আপেক্ষিক আধান ও ভর যথাক্রম +1 ও1। একে p প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
৮। ইলেকট্রন কী? এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। (
ইলেকট্রন হলো পরমাণুর একটি মৌলিক কণিকা, যা ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট। এর আধানের পরিমাণ- 1.60 × 10-19 কুলম্ব, ভর 9.11 × 10-28g। এর আপেক্ষিক আধান-1 এবং আপেক্ষিক ভর 0। একে প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
৯। পরমাণুর সাংগঠনিক কণা তিনটির প্রকৃত ভর কত?
পরমাণুর স্থায়ী ৩টি সাংগঠনিক কণা হচ্ছে- ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন।
ইলেকট্রনের প্রকৃত ভর = 9.11 × 10-28 g
প্রোটনের প্রকৃত ভর = 1.673 × 10-24 g
নিউট্রনের প্রকৃত ভর = 1.675 × 10-24 g
১০। নিউট্রন কী? এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
নিউট্রন হলো পরমাণুর আধান নিরপেক্ষ মৌলিক কণিকা। এর ভর প্রোটনের ভরের চেয়ে সামান্য বেশি। এর আপেক্ষিক আধান 0, আপেক্ষিক ভর1। একে n প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। H ব্যতীত সকল পরমাণুতেই নিউট্রন রয়েছে।
১১। আইসোটোপ কী?
একই মৌলের যেসব পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে পরস্পরের বলা হয় আইসোটোপ। হাইড্রোজেন মৌলের তিনটি আইসোটোপ হলো- প্রোটিয়াম (¹1H), ডিউটেরিয়াম (²1H) ও ট্রিটিয়াম (³1H) যাদের প্রোটন সংখ্যা একই (1) কিন্তু ভরসংখ্যা যথাক্রমে 1, 2 ও 3।
১২। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ কী?
কিছু কিছু আইসোটোপ রয়েছে, যাদের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে (নিজে নিজেই) ভেঙে ∝ রশ্মি, ẞ রশ্মি, γ রশ্মি ইত্যাদি নির্গত করে, তাদেরকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার দিয়ে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে। যেমন- চিকিৎসা ক্ষেত্রে, কৃষিক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
১৩। অণু কাকে বলে?
দুই বা দুইয়ের অধিক সংখ্যক পরমাণু পরস্পরের সাথে রাসায়নিক বন্ধন এর মাধ্যমে যুক্ত থাকলে তাকে অণু বলে।
১৪। পরমাণু কী?
পরমাণু হলো মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যার মধ্যে মৌলের গুণাগুণ থাকে।
১৫। প্রতীক কাকে বলে?
কোনো মৌলের ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের সংক্ষিপ্ত রূপকে মৌলের প্রতীক বলে।
১৬। পারমাণবিক সংখ্যা কাকে বলে?
কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটনের সংখ্যাকে ঐ মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বলে।
১৭। পরমাণুর ভর সংখ্যা বা নিউক্লিয়ন সংখ্যা কাকে বলে?
কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার যোগফলকে ঐ পরমাণুর ভরসংখ্যা বলা হয়।
১৮। আইসোমার কী?
একই পারমাণবিক ভরবিশিষ্ট বিভিন্ন মৌলের পরমাণুকে পরস্পরের আইসোমার বলে।
১৯। কোনটি পরমাণুর নিজস্ব সত্তা ও পরিচয় বহন করে?
প্রোটন সংখ্যা তথা পারমাণবিক সংখ্যা পরমাণুর নিজস্ব সত্তা ও পরিচয় বহন করে।
২০। α-কণা কী?
α-কণা হলো দ্বি-ধনাত্মক হিলিয়াম নিউক্লিয়াস (42He2+)।
২১। কোন পরীক্ষার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রাদারফোর্ড পরমাণুর মডেল প্রদান করেন?
আলফা কণা (৫ α-কণা) বিচ্ছুরণ পরীক্ষার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রাদারফোর্ড পরমাণুর মডেল প্রদান করেন।
২২। পারমাণবিক বর্ণালি (Atomic Spectra) কী?
ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে যাবার সময় যে আলো বিকিরণ করে তাকে প্রিজমের মধ্যদিয়ে প্রবেশ করালে সৃষ্ট আলোক রশ্মিকে পারমাণবিক বর্ণালি (Atomic Spectra) বলে।
২৩। অরবিটাল কী?
পরমাণুতে বিদ্যমান প্রতিটি প্রধান শক্তিস্তর কতকগুলো উপশক্তিস্তরে বিভক্ত থাকে যাদেরকে অর্বিটাল বলে।
২৪। অরবিট কী?
পরমাণুর যে সকল স্থির কক্ষপথে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে তাদেরকে অরবিট বলে।
২৫। প্রতিটি প্রধান শক্তিস্তরের সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা কত?
প্রতিটি প্রধান শক্তিস্তরের সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা 2n²; যেখানে n = 1, 2, 3, 4 ইত্যাদি।
২৬। আইসোটোপ কাকে বলে?
যে সকল পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা ও নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে একে অপরের আইসোটোপ বলে।
২৭। আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর কাকে বলে? (
কোনো একটি পরমাণুর ভর এবং একটি কার্বন-12 পরমাণু ভরের 1/12 অংশের অনুপাতকে ঐ মৌলের পারমাণবিক ভর বলে।
২৮। গড় আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর কী?
পর্যায় সারণিতে যে পারমাণবিক ভর লেখা আছে, তাই মূলত গড় আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর; যেমন, Cu এর গড় আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 63.5।
২৯। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ কাকে বলে?
যে সকল আইসোটোপের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে (নিজে নিজেই) ভেঙে আলফা রশ্মি, বিটা রশ্মি, গামা রশ্মি ইত্যাদি নির্গত করে তাদেরকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে।
৩০। তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে?
তেজষ্ক্রিয় মৌল থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের ঘটনাকে তেজস্ক্রিয়তা বলে।
৩১। গাইগার কাউন্টার কী?
গাইগার কাউন্টার একটি যন্ত্র, যার সাহায্যে তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে বিকিরিত রশ্মি বা কণা শনাক্ত করা হয়।
৩২। সংকেত কাকে বলে?
কোনো মৌল বা যৌগের অণুর সংক্ষিপ্তরূপকে সংকেত বলা হয়।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১। সংকেত বলতে কী বুঝায়? উদাহরণ দাও।
কোনো মৌল বা যৌগের অণুর সংক্ষিপ্তরূপকে সংকেত বলা হয়। যেমন হাইড্রোজেন অণুর সংকেত H₂। এর অর্থ হলো একটি হাইড্রোজেনের অণুতে দুইটি হাইড্রোজেনের পরমানু (H) রয়েছে। আবার অ্যামোনিয়া অণুর সংকেত NH₃। এর অর্থ হচ্ছে অ্যামোনিয়ার একটি অণুতে ১টি নাইট্রোজেন (N) ও ৩টি হাইড্রোজেন (H) পরমাণু রয়েছে।
২। কোনো মৌলের প্রোটন সংখ্যা 9 হলে মৌলটি কী হতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
কোনো মৌলের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটন সংখ্যাকে পারমাণবিক সংখ্যা বলা হয়। অর্থাৎ উক্ত মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যা 9। আর পারমাণবিক সংখ্যাই মৌলটির আসল পরিচয়। অর্থাৎ পারমাণবিক সংখ্যা 9 হলে মৌলটি হবে ফ্লোরিন (F)।
৩। 12X এর মৌলটি কী?
কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটনের সংখ্যাই হচ্ছে ঐ মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা। দেখা যাচ্ছে, X পরমাণুর নিউক্লিয়াসে মোট 12টি প্রোটন অবস্থিত। এজন্য X এর পারমাণবিক সংখ্যা 12। পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা প্রতীকের নিচে বাম পাশে লেখা হয়। যেমন, 12X দ্বারা বুঝায় মৌলটি হচ্ছে Mg, যার পারমাণবিক সংখ্যা 12।
৪। Al এর পারমাণবিক সংখ্যা 13 বলতে কী বুঝ?
কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটনের সংখ্যাকে ঐ মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বলে। Al এর পারমাণবিক সংখ্যা 13 বলতে Al পরমাণুর নিউক্লিয়াসে 13টি প্রোটন আছে।
৫। পরমাণু সামগ্রিকভাবে চার্জ শূন্য কেন? ব্যাখ্যা কর।
পরমাণু সামগ্রিকভাবে চার্জ শূন্য। কারণ পরমাণুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক চার্জযুক্ত যতগুলো প্রোটন থাকে ঠিক ততগুলো ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের বাইরে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। এ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ পরস্পরকে প্রশম করে দেয় বলে পরমাণু চার্জ শূন্য হয়ে যায়।
৬। Na পরমাণুর সামগ্রিকভাবে চার্জ শূন্য কেন? ব্যাখ্যা কর।
আমরা জানি যে , পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কক্ষপথে ইলেকট্রন ঘূর্ণায়মান। কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসে যে কয়টি প্রোটন থাকে, নিউক্লিয়াসের বাইরে সে কয়টি ইলেকট্রন থাকে। অর্থাৎ, Na পরমাণুর কেন্দ্রে11টি প্রোটন (P) থাকে এবং নিউক্লিয়াসের বাইরে 11টি ইলেকট্রন (e-) থাকে। যেহেতু প্রোটন এবং ইলেকট্রনের চার্জ একে অপরের সমান ও বিপরীত চিহ্নের, তাই Na পরমাণুর সামগ্রিকভাবে চার্জ শূন্য।
৭। Na এর ভরসংখ্যা 23 বলতে কী বুঝ?
কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার যোগফলকে ঐ পরমাণুর ভরসংখ্যা বলে। অর্থাৎ, ভরসংখ্যা হচ্ছে প্রোটন সংখ্যা ও নিউট্রন সংখ্যার সমষ্টি। Na এর ভরসংখ্যা 23 বলতে বুঝায়, Na পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটন সংখ্যা এবং নিউট্রন সংখ্যার সমষ্টি 23.
৮। ³⁵17CI পরমাণুটির মধ্যে 1টি ইলেকট্রন ও ২টি নিউট্রন যুক্ত হলে কী পরিবর্তন ঘটবে?
³⁵17Clপরমাণুর মধ্যে 1টি ইলেকট্রন যুক্ত হলে ঋণাত্মক আধানের সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ ³⁵17CI- আয়নে পরিণত হবে। আবার ³⁵17CI পরমাণুটির মধ্যে ২টি নিউট্রন যুক্ত হলে এর পারমাণবিক ভর আগের তুলনায় 2 একক বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ পরমাণুটি ³⁵17CI থেকে ³⁷17CI অবস্থা প্রাপ্ত হবে।
৯। ²⁴12Mg2+ বলতে কী বুঝায়? ব্যাখ্যা কর। বা সংকেতটির তাৎপর্য লেখ।
²⁴12Mg2+ বলতে বুঝায় ম্যাগনেসিয়াম (Mg) মৌলটির:
(i) প্রোটন সংখ্যা = 12
(ii) ইলেকট্রন সংখ্যা = (12 – 2) = 10
(iii) নিউট্রন সংখ্যা = (24-12) = 12
(iv) ভরসংখ্যা = 24
(v) পারমাণবিক সংখ্যা তথা প্রোটন সংখ্যা যেহেতু 12, তাই মৌলটি ম্যাগনেসিয়াম (Mg)।
১০। রাদারফোর্ডের মডেলকে সৌর মডেল বলা হয় কেন?
সৌরজগতে সূর্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কক্ষপথে যেমন গ্রহগুলো ঘুরে, তেমনি, পরমাণু মডেলে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কক্ষপথে ইলেকট্রন ঘুরছে। অর্থাৎ, রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলকে সৌরজগতের সাথে তুলনা করা হয়েছে বলে এ মডেলটিকে সোলার সিস্টেম মডেল বা সৌর মডেল বলা হয়।
১১। পারমাণবিক বর্ণালি সৃষ্টি হয় কীভাবে?
আমারা জানি যে , প্রধান শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ঘূর্ণনের সময় কোনো শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করে না। তবে ইলেকট্রন যখন নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে যায় তখন শক্তি শোষণ করে। আবার, ইলেকট্রন যখন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তর-এ যায় তখন শক্তির বিকিরণ হয়। ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে যাবার সময় যে আলো বিকিরণ করে তাকে প্রিজমের মধ্যদিয়ে pass করালে পারমাণবিক বর্ণালি (atomic spectra) সৃষ্টি হয়।
১২। বিভিন্ন শেলে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা কত?
বিভিন্ন শেলে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতার সূত্র 2n² (যেখানে n = 1, 2, 3, 4...)। সূত্রানুসারে-
K শেলে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা = 2 × 1² = 2টি
L শেলে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা = 2 × 2² = ৪টি
M শেলে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণা ক্ষমতা = 2 × 3² = 18টি
N শেলে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা = 2 × 4² = 32টি
১৩। বিভিন্ন উপশক্তিস্তরের সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা কত?
উপস্তরগুলোকে s, p, d, f নামে আখ্যায়িত করা হয়।
s উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা ২টি।
p উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা 6টি।
d উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা 10টি।
f উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা 14টি।
১৪। M শেলের উপশক্তি স্তরসমূহের ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা দেখাও
M শেল হলো তৃতীয় প্রধান শক্তিস্তর। M শেলের উপস্তরগুলো 3টি। যথা: 3s, 3p, 3d
3s উপস্তরে ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা ২টি
3p উপস্তরে ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা 6টি
3d উপস্তরে ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা 10টি
১৬। N শেলের বিভিন্ন উপস্তর ও তাদের ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা দেখাও।
N শেল হলো চতুর্থ শক্তিস্তর। N শেলের উপস্তর হলো 4টি। যথা-4s, 4p, 4d ও 4f
4s উপস্তরে ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা ২টি।
4p উপন্তরে ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা 6টি।
4d উপস্তরে ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা 10টি।
4f উপস্তরে ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা 14টি।
১৭। তৃতীয় শক্তি স্তরে f orbital অসম্ভব কেন?
তৃতীয় শক্তিস্তরে f অরবিটাল অসম্ভব। কারণ তৃতীয় শক্তিস্তরের জন্য n = 3 এবং l= 0, 1, 2। জানা আছে, এর মান 0, 1 ও 2 এর জন্য s, p ও d অরবিটাল সম্ভব হয়। তাই ৩য় শক্তিস্তরে f orbital নেই তথা অসম্ভব।
১৮। দ্বিতীয় প্রধান শক্তিস্তরে 'd' অরবিটাল থাকে না কেন?
দ্বিতীয় প্রধান শক্তিস্তরে d অরবিটাল থাকে না। কারণ দ্বিতীয় প্রধান শক্তিস্তরের জন্য n = 2, সেক্ষেত্রে উপশক্তিস্তর l = 0,1। আমরা জানি, l এর মান ০ ও 1 এর জন্য s ও p অরবিটাল সম্ভব। এজন্য 2d অরবিটাল দ্বিতীয় প্রধান শক্তিস্তরে থাকে না।
১৯। 2p অপেক্ষা 2s অরবিটাল এর শক্তি কম- ব্যাখ্যা কর।
দুটি অরবিটালের মধ্যে যার (n + l) এর মান কম, তার শক্তিও কম হয়।
2p অরবিটালের জন্য: n = 2 এবং l= 1
(n+l)=2+1=3 2s
অরবিটালের জন্য: n = 2 এবং l=0. (n+l)=2+0=2
দেখা যাচ্ছে যে, 2p ও 2s' এর মধ্যে 2s এর (n + l) এর মান কম, তাই 2s এর শক্তিও কম।
২০। 3p অরবিটালের শক্তি 3d অপেক্ষা কম কেন?
দুটি অরবিটালের মধ্যে কোনটি নিম্নশক্তির আর কোনটি উচ্চশক্তির তা (n + l) এর মানের ওপর নির্ভর করে। যার (n + l) এর মান কম সেটি নিম্নশক্তির অরবিটাল। 3p ও 3d অরবিটালের জন্য (n + l) এর মান নিম্নরূপ :
3p অরবিটালে : n = 3,l=1
n+l=3+1=4
3d অরবিটালে : n = 3,l=2
n+l=3+2=5
দেখা যাচ্ছে যে, 3p এর ক্ষেত্রে (n + l) এর মান কম। তাই 3p অরবিটালের শক্তি 3d অপেক্ষা কম।
২১। 3d অরবিটালের শক্তি অপেক্ষা 4s এর শক্তি কম-ব্যাখ্যা কর।
অরবিটালের শক্তি নির্ধারণ করা হয় (n + l) এর মান হিসাব করে। যে অরবিটালের (n+l) এর মান বেশি সেটির শক্তি বেশি।
4s অরবিটালের ক্ষেত্রে =n+l=4+0=4
3d অরবিটালের ক্ষেত্রে =n+l=3+2=5
যেহেতু 4s অরবিটালের (n + l) এর মান কম, সেহেতু এর শক্তি কম।
২২। 2d এবং 3f অরবিটাল সম্ভব নয় কেন?
2d ও 3f অরবিটাল অসম্ভব। কারণ 2d অরবিটালের ক্ষেত্রে, n = 2, l = 0, 1। l এর মান 0,1 এর জন্য s ও p অরবিটাল সম্ভব। তাই 2d অসম্ভব। আবার, 3f অরবিটালের ক্ষেত্রে, n = 3, l = 0, 1, 2। l এর মান 0, 1, 2 এর জন্য s, p, d অরবিটাল সম্ভব। এজন্য 3f অরবিটাল অসম্ভব।
২৩। K এর 19 তম ইলেকট্রন 3d অরবিটালে প্রবেশ না করে 4s অরবিটালে যায় কেন- ব্যাখ্যা কর।
দুটি অরবিটালের মধ্যে যার (n + l) এর মান কম সেটি নিম্নশক্তির অরবিটাল। 3d এবং 4s অরবিটালের জন্য (n + l) এর মান নিম্নরূপ
3d অরবিটালে: n = 3,d= 2 ∴ n+l=3+2=5
4s অরবিটালে: n =4,s=0 ∴ n+l=4+0=4
সুতরাং 3d এর চেয়ে 4s অরবিটালের শক্তি কম (4s < 3d) হওয়ায় পটাসিয়ামের 19তম ইলেকট্রন 3d অরবিটালে না গিয়ে 4s অরবিটালে স্থান গ্রহণ করে। ফলে K(19) এর ইলেকট্রন বিন্যাস হয়-
K(19) → 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 4s¹
২৪। Fe3+ আয়নের সুস্থিতি ব্যাখ্যা কর।
Fe3+(26) = 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 3d⁵, 4s⁰ (সুস্থিত)
ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যাচ্ছে, Fe3+ আয়নের d অরবিটাল ইলেকট্রন দ্বারা অর্ধপূর্ণ থাকে বলে Fe3+ আয়নটি সুস্থিত।
২৫। Cr সাধারণ নিয়মের ইলেকট্রন বিন্যাস মানে না কেন?
ক্রোমিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস
Cr(24) → 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 3d⁵ 4s¹
সাধারণ নিয়মে এর ইলেকট্রন বিন্যাস ----3d⁴ 4s² হওয়ার কথা। কিন্তু অর্ধপূর্ণ অরবিটাল অধিক স্থিতিশীল হওয়ার কারণে স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য বহিঃস্থ 4s² থেকে 1টি e- 3d-এ স্থানান্তরিত হয়ে অর্ধপূর্ণ 3d⁵ ইলেকট্রন বিন্যাস হয়। তাই Cr এর ইলেকট্রন বিন্যাস সাধারণ নিয়মে হয় না তথা ব্যতিক্রম হয়।
২৬। একই পরমাণুর ভরসংখ্যা পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা কর।
একই মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা অর্থাৎ, প্রোটন সংখ্যা নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়। কিন্তু ভরসংখ্যা ভিন্ন হতে পারে। কারন আমরা জানি কোন মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটন ও নিউট্রনের সমষ্টিকে ঐ পরমাণুর ভর সংখ্যা বলে। একই মৌলের সব পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা সর্বদা নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়, কিন্তু নিউট্রনের সংখ্যা ভিন্ন হতে পারে। নিউট্রনের এই পরিবর্তনের ফলে পরমাণুর ভর সংখ্যাও পরিবর্তিত হয়।
২৭। প্রোটিয়াম, ডিউটেরিয়াম, ট্রিটিয়াম পরস্পরের আইসোটোপ ব্যাখ্যা কর।
আমরা জানি, যে সকল পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা একই কিন্তু ভরসংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে পরস্পরের আইসোটোপ বলে। প্রোটিয়াম, ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম প্রতিটি পরমাণুরই প্রোটন সংখ্যা অভিন্ন কিন্তু ভর সংখ্যা ভিন্ন। এ কারণে প্রোটিয়াম, ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম পরস্পরের আইসোটোপ।
২৮। ¹²6M ও ¹³6M পরস্পর আইসোটোপ কেন?
আমযরা জানি, যেসকল মৌলের পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা একই কিন্তু ভরসংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে পরস্পরের আইসোটোপ বলা হয়।
¹²6M ও ¹³6M মৌলদ্বয়ের পারমাণবিক সংখ্যা সমান (6) কিন্তু ভরসংখ্যা যথাক্রমে 12 ও 13 অর্থাৎ ভিন্ন। কাজেই এরা পরস্পরের আইসোটোপ।
২৯। ক্লোরিনের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 35.5 হয় কেন?
কোনো মৌলের একটি পরমাণুর ভর কার্বন-১২ আইসোটোপের একটি পরমাণুর ভরের ১২ ভাগের এক (1/12) অংশের তুলনায় যত গুণ ভারী, সেই সংখ্যাকে ওই মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর (Relative Atomic Mass) বলে।
ক্লোরিনের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর ৩৫.৫ বলতে বোঝানো হয় যে, প্রকৃতিতে বিদ্যমান ক্লোরিন মৌলের গড় পরমাণুর ভর, যা একটি কার্বন-১২ পরমাণুর ১/১২ অংশের সাথে তুলনামূলকভাবে ৩৫.৫ গুণ।
৩০। F এর আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 19 হয় কেন
কোনো মৌলের একটি পরমাণুর ভর কার্বন-12 আইসোটোপের একটি পরমাণুর ভরের 12 ভাগের এক (1/12) অংশের তুলনায় যত গুণ ভারী, সেই সংখ্যাকে ওই মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর (Relative Atomic Mass) বলে।
F-এর আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 19 বলতে বোঝানো হয় যে, প্রকৃতিতে বিদ্যমান ফ্লোরিন মৌলের গড় পরমাণুর ভর, যা একটি কার্বন-12 পরমাণুর 1/12 অংশের সাথে তুলনামূলকভাবে 19 গুণ।
৩১। নাইট্রোজেনের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 14 বলতে কী বুঝায়?
কোনো মৌলের একটি পরমাণুর ভর কার্বন-12 আইসোটোপের একটি পরমাণুর ভরের ১২ ভাগের এক (1/12) অংশের তুলনায় যত গুণ ভারী, সেই সংখ্যাকে ওই মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর (Relative Atomic Mass) বলে।
নাইট্রোজেনের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 14 বলতে বোঝানো হয় যে, প্রকৃতিতে বিদ্যমান ক্নাইট্রোজেন মৌলের গড় পরমাণুর ভর, যা একটি কার্বন-12 পরমাণুর 1/12 অংশের সাথে তুলনামূলকভাবে 14 গুণ।
৩২। "পরমাণুর সমস্ত ভর নিউক্লিয়াসে কেন্দ্রীভূত” – ব্যাখ্যা কর।
পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস। আর নিউক্লিয়াসের ভিতরে প্রোটন ও নিউট্রন এবং বাইরে ইলেকট্রন অবস্থান করে। যেহেতু আপেক্ষিকভাবে ইলেকট্রনের ভর শূন্য ধরা হয়, কাজেই নিউক্লিয়াসের ভিতরে অবস্থিত প্রোটন ও নিউট্রনের ভরই পরমাণুর ভর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ পরমাণুর সমস্ত ভর নিউক্লিয়াসে কেন্দ্রীভূত।"
৩৩। পরমাণুর নিউক্লিয়াস ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট কেন? ব্যাখ্যা কর।
পরমাণুর নিউক্লিয়াস ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট হয়, কারণ নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে থাকে প্রোটন ও নিউট্রন। প্রোটনের চার্জ ধনাত্মক এবং তা +1.60 × 10-19 C। অপরদিকে নিউট্রন চার্জহীন। যেহেতু নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে কেবল প্রোটনের চার্জ থাকে এবং তা ধনাত্মক, সেহেতু পরমাণুর নিউক্লিয়াস ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট হয়।
৩৪। ²³11Na+ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
²³11Na+ বলতে বুঝায় সোডিয়াম (Na) মৌলটির,
(i) প্রোটন সংখ্যা = 11
(ii) ইলেকট্রন সংখ্যা = (11 – 1) = 10
(iii) নিউট্রন সংখ্যা = (23 – 11) = 12
(iv) ভরসংখ্যা = 23
(v) পারমাণবিক সংখ্যা তথা প্রোটন সংখ্যা যেহেতু 11, তাই মৌলটি সোডিয়াম (Na)।
৩৫। Mg এর পারমাণবিক সংখ্যা 12 বলতে কী বুঝ?
কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটনের সংখ্যাকে ঐ মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বলে। Mg এর পারমাণবিক সংখ্যা 12 বলতে Mg পরমাণুর নিউক্লিয়াসে 12টি প্রোটন আছে।
৩৬। সালফারের পারমাণবিক ভর 32 এর অর্থ কী? ব্যাখ্যা কর।
কোনো মৌলের একটি পরমাণুর ভর কার্বন-12 আইসোটোপের একটি পরমাণুর ভরের 12 ভাগের এক (1/12) অংশের তুলনায় যত গুণ ভারী, সেই সংখ্যাকে ওই মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর (Relative Atomic Mass) বা পারমাণবিক ভর বলে। S-এর আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 32 বলতে বোঝানো হয় যে, প্রকৃতিতে বিদ্যমান সালফার মৌলের গড় পরমাণুর ভর, যা একটি কার্বন-12 পরমাণুর 1/12 অংশের সাথে তুলনামূলকভাবে 32 গুণ।
৩৭। অরবিট কাকে বলে? ব্যাখ্যা কর।
পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রন যে নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে বৃত্তাকার পথে পরিভ্রমণ করে,তাকে অরবিট বলে। প্রতিটি অরবিটে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন থাকতে পারে 2n² সংখ্যক।
যেখানে n=1, 2, 3, 4..... ইত্যাদি। n = 1 হলে K শেল নির্দেশ করে। অনুরূপভাবে n = 2, 3, 4 ইত্যাদির জন্য L, M, N শেল নির্দেশ করে। আবার 2n² সূত্রানুযায়ী, K, L, M, N শেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইলেকট্রন থাকতে পারে 2, 8, 18, 32 টি করে।
৩৮। 6s অরবিটালের শক্তি 4d অরবিটাল অপেক্ষা বেশি- ব্যাখ্যা
দুটি অরবিটালের মধ্যে কোনটি নিম্নশক্তির আর কোনটি উচ্চশক্তির তা (n + l) এর মানের ওপর নির্ভর করে। যার (n + l) এর মান কম সেটি নিম্নশক্তির অরবিটাল। আর য়ার (n + l) এর মান বেশি সেটির শক্তি উচ্চশক্তির অরবিটাল।
6s অরবিটালে : n = 6,l = 0 ∴ (n+l)= (6+0) = 6
4d অরবিটালে : n = 4,l = 2 ∴ (n + 1) = (4+2) = 6
দেখা যাচ্ছে যে, 6s ও 4d অরবিটালের (n + l) এর মান সমান। এক্ষেত্রে যে অরবিটালের n এর মান বেশি সেই অরবিটালের শক্তিও বেশি। এখানে, 4d এর n এর মান কম তাই এ অরবিটালের শক্তি কম। অর্থাৎ, 6s অরবিটালের শক্তি 4d অপেক্ষা বেশি।
৩৯। কপার (Cu) এর ইলেকট্রন বিন্যাস সাধারণ নিয়ম মানে না কেন?
সাধারণভাবে দেখা যায় যে, সমশক্তিসম্পন্ন অরবিটালসমূহ অর্ধপূর্ণ বা সম্পূর্ণ পূর্ণ হলে সে ইলেকট্রন বিন্যাস অধিকতর সুস্থিতি অর্জন করে। এক্ষেত্রে d¹⁰ s¹ এবং d⁵ s¹ ইলেকট্রন বিন্যাসবিশিষ্ট মৌল অধিকতর স্থায়ী হয়। কপার (Cu) এর ইলেকট্রন বিন্যাসে (1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 3d¹⁰ 4s¹) সুস্থিতির জন্য 3d⁹ 4s² এর পরিবর্তে 3d¹⁰ 4s¹ হয়। এজন্য কপারের ইলেকট্রন বিন্যাস সাধারণ নিয়ম মানে না।
৪০। Fe2+ ও Fe3+ আয়নের মধ্যে কোনটি অধিক সুস্থিত? ব্যাখ্যা কর।
Fe2+ ও Fe3+ আয়নের মধ্যে Fe3+ আয়ন অধিক সুস্থিত। কারণ আয়ন দুটির ইলেকট্রন বিন্যাস :
Fe2+(26) = 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 3d⁶ 4s⁰ (সুস্থিত নয়)
Fe3+(26) = 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 3d⁵ 4s⁰ (সুস্থিত)
ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যাচ্ছে, Fe3+ আয়নের d অরবিটাল ইলেকট্রন দ্বারা অর্ধপূর্ণ থাকে বলে Fe³+ আয়নটি সুস্থিত। অপরদিকে Fe2+ আয়নের 3d অরবিটালে 6টি ইলেকট্রন থাকায় এটি ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ বা অর্ধপূর্ণ কোনটিই নয়। তাই Fe2+ সুস্থিত নয়।
৪১। Ca এর 19 ও 20 তম ইলেকট্রন 3d অরবিটালে না গিয়ে 4s অরবিটালে প্রবেশ করে কেন? ব্যাখ্যা কর।
দুটি অরবিটালের মধ্যে কোনটি নিম্নশক্তির আর কোনটি উচ্চশক্তির তা (n + l) এর মানের ওপর নির্ভর করে। যার (n + l) এর মান কম সেটি নিম্নশক্তির অরবিটাল। আর য়ার (n + l) এর মান বেশি সেটির শক্তি উচ্চশক্তির অরবিটাল।
3d অরবিটালে : n = 3, l = 2 ∴ (n+1) = 3+2 = 5
4s অরবিটালে : n = 4, l = 0 ∴ (n+1) = 4+0 = 4
সুতরাং, 3d এর চেয়ে 4s অরবিটালের শক্তি কম (4s < 3d) হওয়ায় Ca এর 19 ও 20 তম ইলেকট্রন 3d অরবিটালে না গিয়ে 4s অরবিটালে প্রবেশ করে। ফলে Ca(20) এর ইলেকট্রন বিন্যাস দাঁড়ায়-Ca(20) = 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 4s²
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের নিবন্ধগুলিতে মন্তব্য করার সময় দয়া করে শ্রদ্ধাশীল এবং গঠনমূলক হন। অনুপযুক্ত, আপত্তিকর, বা অফ-টপিক মন্তব্য মুছে ফেলা হবে। আসুন ABC আইডিয়াল স্কুলের সকল পাঠকদের জন্য একটি ইতিবাচক এবং শিক্ষামূলক পরিবেশ বজায় রাখি। আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ!