বৈশাখী ঝড় অনুচ্ছেদ রচনা
বৈশাখী ঝড়
বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখ। এই মাসটি যেমন নবজীবনের বার্তা নিয়ে আসে, তেমনি নিয়ে আসে প্রকৃতির এক ভয়ংকর ও অপরূপ রূপ—বৈশাখী ঝড়। এটি বাংলার গ্রামগঞ্জের একটি পরিচিত ও বিশেষ ঘটনা। বৈশাখী ঝড় সাধারণত এশিয়ার উপমহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে ঘটে। বিশেষ করে বাংলাদেশে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বৈশাখী ঝড় আমাদের দেশের জলবায়ুর একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হলেও এর গতিপ্রকৃতি এবং প্রকৃতি অত্যন্ত রহস্যময় ও ভয়ঙ্কর।
বৈশাখী ঝড় সাধারণত এপ্রিল ও মে মাসে, বিশেষ করে বৈশাখ মাসে সন্ধ্যা বা রাতের দিকে আঘাত হানে। দিনের শেষে হঠাৎ করেই আকাশ কালো হয়ে আসে, বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়, সঙ্গে শুরু হয় বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি। এই ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ কখনো কখনো ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। বৈশাখী ঝড়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি অত্যন্ত হঠাৎ আসে এবং মাত্র আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টার মধ্যেই তার তাণ্ডব শেষ করে দিয়ে যায়। তবে এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই এটি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে সক্ষম।
বৈশাখী ঝড়ের ফলে গাছপালা উপড়ে পড়ে, কাঁচাবাড়ি ধসে পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে, রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়, এবং ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কখনো কখনো এতে মানুষের জানমালের ক্ষতিও হয়। গ্রামের কৃষকেরা এই ঝড়ের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। ধান কাটার মৌসুমে এই ঝড় ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি করে দিতে পারে। বহুবার দেখা গেছে, কৃষকের সারা বছরের পরিশ্রম মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে বৈশাখী ঝড়ের ধ্বংসলীলায়।
তবে বৈশাখী ঝড়ের শুধু নেতিবাচক দিকই নয়, এর কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। বৈশাখী ঝড় সাধারণত খরা কাটিয়ে আনে শীতলতা ও বৃষ্টি। এই বৃষ্টি কৃষি জমিতে পানি জোগাতে সাহায্য করে এবং জমির উর্বরতা বাড়ায়। আবার এই ঝড়ের মাধ্যমে প্রকৃতি পুরনো, দুর্বল ও মৃত গাছপালা পরিষ্কার করে দেয়। বৈশাখী ঝড় প্রকৃতির সেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে প্রকৃতি নিজের ভারসাম্য বজায় রাখে। এ কারণে একে প্রকৃতির কঠিন সৌন্দর্য বা ভয়ঙ্কর কবিতা বলা হয়।
বৈশাখী ঝড়কে কেন্দ্র করে বাঙালির সংস্কৃতিতেও নানান উপকরণ গড়ে উঠেছে। বাংলার লোককথা, গান, কবিতা, সাহিত্য এবং দৈনন্দিন জীবনে বৈশাখী ঝড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। এটি যেন বাংলার জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় বৈশাখী ঝড়ের বর্ণনা দিয়েছেন অনুপম ভঙ্গিতে।
অতএব বলা যায়, বৈশাখী ঝড় আমাদের দেশের একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও এটি প্রকৃতির এক রুদ্র ও স্নিগ্ধ সৌন্দর্য। এর মধ্যে যেমন ধ্বংস লুকিয়ে আছে, তেমনি রয়েছে সৃষ্টির সম্ভাবনা। বৈশাখী ঝড় আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির শক্তি কতটা প্রবল ও অব্যাহত। তাই আমাদের উচিত বৈশাখী ঝড়ের ধ্বংসাত্মক দিকের প্রতি সতর্ক থাকা এবং এর সঙ্গে মানিয়ে চলার কৌশল রপ্ত করা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের নিবন্ধগুলিতে মন্তব্য করার সময় দয়া করে শ্রদ্ধাশীল এবং গঠনমূলক হন। অনুপযুক্ত, আপত্তিকর, বা অফ-টপিক মন্তব্য মুছে ফেলা হবে। আসুন ABC আইডিয়াল স্কুলের সকল পাঠকদের জন্য একটি ইতিবাচক এবং শিক্ষামূলক পরিবেশ বজায় রাখি। আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ!