একটি ঝড়ের রাত অনুচ্ছেদ রচনা

একটি ঝড়ের রাত

একটি ঝড়ের রাত আমাদের জীবনের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হতে পারে। প্রকৃতির রুদ্ররূপ যেন এই রাতে প্রকাশ পায়। আকাশে মেঘের গর্জন, বিদ্যুতের ঝলকানি, বাতাসের হু হু শব্দ, আর বৃক্ষপল্লবের কাঁপা কাঁপা দৃশ্য এক ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। সেই রাতটি সবসময় মানুষের মনে দাগ কেটে যায়, কারণ এই সময় প্রকৃতি তার শক্তি প্রদর্শন করে মানুষের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে।

সেদিন ছিল চৈত্র মাসের এক সন্ধ্যা। আকাশ ধীরে ধীরে কালো মেঘে আচ্ছন্ন হতে থাকে। চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে, পাখিরা গাছের ডালে আশ্রয় নিতে থাকে। হঠাৎ করে শুরু হয় প্রচণ্ড দমকা হাওয়া। বাতাসে ধুলা-মাটি উড়ে যেতে থাকে, মানুষজন তড়িঘড়ি করে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে। এরই মাঝে শুরু হয় বজ্রসহ বৃষ্টি। বিদ্যুতের আলো ঝলকাতে থাকে প্রতি মুহূর্তে, আর তার সঙ্গে আকাশ ফেটে পড়ার মতো শব্দে বাজ পড়ে। মনে হচ্ছিল, যেন পৃথিবী কেঁপে উঠছে।

ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ চলে যায়। চারদিক অন্ধকারে ছেয়ে যায়। আমরা সবাই মোমবাতির আলোয় বসে থাকি। বাইরে বাতাসের গর্জন, টিনের ছাউনিতে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দ, এবং মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে গাছ ভেঙে পড়ার শব্দ। আশেপাশে কেউ কেউ আতঙ্কে প্রার্থনা করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর আসে পাশের গ্রামে একটি কাঁচা ঘর ধসে পড়েছে, আরেক জায়গায় গাছ পড়ে একজন আহত হয়েছে।

এমন সময়, হঠাৎ করে আমাদের উঠোনের একপাশে থাকা আমগাছটি বিকট শব্দে উপড়ে পড়ে যায়। আমরা ভয়ে কাঁপছিলাম। সৌভাগ্যবশত, গাছটি ঘরের ওপর পড়েনি। কিন্তু সেই শব্দ আমাদের হৃদয়ে ভয় ধরিয়ে দেয়। এমন দুর্যোগের সময় মানুষ কতটা অসহায়, তা তখন গভীরভাবে উপলব্ধি করি।

প্রায় এক ঘণ্টা পর ঝড় কিছুটা কমে আসে। ধীরে ধীরে বৃষ্টি ও বাতাস থেমে যায়। পরদিন সকালে আমরা বাইরে এসে দেখি চারদিকের ধ্বংসযজ্ঞ। গাছপালা উপড়ে পড়ে আছে, অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়েছে, এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামবাসীরা সবাই মিলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে থাকে।

এই ঝড়ের রাত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি কতটা শক্তিশালী। মানুষ আধুনিক প্রযুক্তিতে অনেক উন্নত হলেও প্রকৃতির কাছে এখনও অনেকটাই অসহায়। এই অভিজ্ঞতা আমাদের আরও সচেতন করে তোলে এবং বিপদের সময় ধৈর্য ও সংহতির গুরুত্ব শেখায়।