যতিচিহ্ন বা বিরামচিহ্ন | বাংলা ব্যাকরণ

যতিচিহ্ন বা বিরামচিহ্ন

আমরা যখন কথা বলি তখন একটানা হুড়মুড় করে বলি না , থেমে থেমে বলি । কোথাও থামি অল্প , কোথাও বা একটু বেশি । কণ্ঠে কখনাে আমাদের মেজাজের নানা দিক অর্থাৎ আবেগ , ক্ষোভ , প্রশ্ন , অনুরােধ , বিনয় , ছাড়াও নানা অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলি । মুখের কথার অভিব্যক্তিগুলাে লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে হলে প্রয়ােজন হয় বিরতির এবং তা বােঝানাের জন্য ব্যবহার করতে হয় কিছু চিহ্ন বা প্রতীক । এগুলােকে ছেদ বা বিরামচিহ্নও বলা হয়ে থাকে । বাক্যের বিভিন্ন ভাব স্বাধীনভাবে প্রকাশের জন্য কণ্ঠস্বরের ভঙ্গির তারতম্য বােঝাতে বর্ণের অতিরিক্ত যেসব চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহৃত হয় সেগুলােকে বলে যতি বা বিরামচিহ্ন । যতিচিহ্নের প্রয়ােগ যথাযথ না হলে বাক্য অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য হতে পারে , এমনকি কখনাে কখনাে তা প্রত্যাশিত অর্থ প্রকাশ না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে পারে ।

প্রাচীন বাংলায় যতিচিহ্ন ব্যবহৃত হতাে মাত্র দুটি । এক দাড়ি ( । ) ও দুই দাড়ি ( । ) । আর দুটি যতিই ব্যবহৃত হতাে বাক্যের অন্তে । আধুনিক বাংলায় প্রায় ষােলােটি যতিচিহ্নের ব্যবহার লক্ষ করা যায় । এগুলাে বাক্যের অন্তে ছাড়াও অভ্যন্তরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহৃত হয় । বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত যতিচিহ্নগুলাে হলাে—

অন্তযতি : দাড়ি , প্রশ্নচিহ্ন , বিস্ময়চিহ্ন , দুই দাড়ি ।

অভ্যন্তরযতি : কমা , সেমিকোলন , হাইফেন , ড্যাশ , কোলন , কোলন ড্যাশ , বিন্দু ।

অন্যান্য যতি : উর্ধকমা , ত্রিবিন্দু , উদ্ধৃতি চিহ্ন , বন্ধনী চিহ্ন , বিকল্প চিহ্ন ।

এক দাড়ি ও দুই দাড়ি ছাড়া বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত প্রায় সবগুলাে যতি বা বিরামচিহ্ন এসেছে ইংরেজি ভাষা থেকে । বাংলা ভাষায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সর্বপ্রথম যতিচিহ্নের সার্থক প্রয়ােগ ঘটান ।

বিভিন্ন প্রকার যতিচিহ্নের বিরতিকালের পরিমাণ :

বিভিন্ন প্রকার যতিচিহ্নের বিরতিকাল বিভিন্ন পরিমাণ। দাঁড়িতে যতটুকু থামতে হয় কমাতে ততটুকু নয় । আবার কোনাে কোনাে বিরামচিহ্নে থামার প্রয়ােজনই নেই । এই বিরতি বা থামাটা অনেকাংশেই ভাবনির্ভর । কোন চিহ্নের ক্ষেত্রে কীরকম বিরতি দিতে হবে তা মূলত নির্ভর করে বক্তব্যবিষয় ও বক্তার ভাবাবেগের ওপর । কোন বিরামচিহ্নে কতটুকু থামতে হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা গেলেও নিচে প্রদত্ত ছক থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে ।

যতিচিহ্ন/বিরামচিহ্ন | বাংলা ব্যাকরণ

যতিচিহ্নের পরিচয় ও প্রয়ােগবিধি

কমা বা পাদচ্ছেদ [ , ]

যতিচিহ্নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কমা । এটি পূর্ণ যতি নয় , তাই কমা চিহ্ন দিয়ে কোনাে বাক্যের সমাপ্তি ঘটে না । সাধারণত একটি দীর্ঘ বাক্যের ভেতরে দম নেয়া ও অর্থের স্পষ্টতা বােঝাতে কমা চিহ্ন ব্যবহৃত হয়ে থাকে । মূলত সামান্য বা অল্প বিরতি বােঝাতে কমা চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । নিচে কমার প্রয়ােগ ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলাে-

ক . সমজাতীয় একাধিক শব্দ পর পর থাকলে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন : বই , কলম , ক্যামেরা ইত্যাদি এখন আমার নিত্যসঙ্গী । হলুদ , লাল , সবুজ আরও কত রঙের পাখি রয়েছে আমাদের দেশে ।

খ . সমজাতীয় একাধিক বাক্যাংশ থাকলে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন : ‘ গাছের বৃদ্ধি আছে , গতি আছে , বিকাশ আছে , জন্ম আছে , মৃত্যু আছে ।

গ . সম্বােধন পদের পরে কমা বসে। যেমন : কাইয়ুম , খেলতে যাও ।

ঘ . প্রত্যক্ষ উক্তির আগে কমা বসে। যেমন: কবি বললেন , যা সুন্দর তাই ভালােবাসি ।

ঙ . একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া পাশাপাশি থাকলে সেক্ষেত্রে কমা বসে । যেমন : আমি বাগানে গিয়ে , ফুল কুড়িয়ে , নদীর তীরে গিয়ে , তােমাকে দেব ।

চ . মাসের পরে তারিখ এবং তার পরে সাল থাকলে কমা বসে। যেমন : জুন ১৯ , ২০১৫ । কিন্তু তারিখ আগে থাকলে কমা হবে না । যেমন : ১৯ জুন ২০১৫ ।

ছ . বড় রাশিতে হাজার , লক্ষ ইত্যাদি চিহ্নিত করতে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন: ১,২০,৫০,০০০ টাকা ।

জ . নামের ক্ষেত্রে ডিগ্রি থাকলে কমা দিতে হয় । যেমন : ডা . সিজার মাহমুদ , এমবিবিএস , এফসিপিএস ।

ঝ . হ্যা , না , বস্তুত , প্রথমত , দ্বিতীয়ত ইত্যাদি অব্যয়ের পর কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন : হ্যাঁ , আমি আসব । প্রথমত , তুমি এ কাজটি করবে ।

সেমিকোলন বা অর্ধচ্ছেদ [ ; ]

কমার তুলনায় একটু বেশি বিরতির জন্যে সেমিকোলন বা অর্ধচ্ছেদ ব্যবহৃত হয় । একাধিক বাক্যের মধ্যে অর্থের নিকট সম্বন্ধ থাকলে বাক্যগুলােকে একটু বেশি থামার চিহ্ন দিয়ে ভাগ করতে হয় । এর জন্য যে চিহ্নের প্রয়ােজন হয় , তাই সেমিকোলন । এর প্রয়ােগের ক্ষেত্র হচ্ছে :

ক . সমজাতীয় একাধিক স্বাধীন বাক্য পর পর থাকলে সেমিকোলন ব্যবহার হয়। যেমন : চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘােরে ; পৃথিবী ঘােরে সূর্যের চারদিকে ।

খ . দুটো বাক্যের মধ্যে যােগসূত্র থাকলে সেমিকোলন ব্যবহার হয়। যেমন : ‘ দৈবাৎ কখনাে আমার জ্বর হয়েছে ; তাকে কেউ জ্বর বলত না , বলত গা - গরম । '

গ . সমজাতীয় বিষয় শ্রেণিভুক্ত করতে সেমিকোলন ব্যবহার হয়। যেমন : বাংলা , ইংরেজি , আরবি , চারুকলা ও নাট্যকলা ; পদার্থবিদ্যা , রসায়নবিদ্যা , প্রাণিবিদ্যা , উদ্ভিদবিদ্যা ও পরিসংখ্যান ; অর্থনীতি , সমাজতত্ত্ব ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ।

পূর্ণচ্ছেদ বা দাঁড়ি [ । ]

সেমিকোলনের তুলনায় একটু বেশি বিরতির জন্যে দাড়ি ব্যবহৃত হয় । দাঁড়ি দ্বারা একটি বাক্যের শেষ বা সমাপ্তি ঘটে । বাংলা ভাষায় দাঁড়ি একটি বহুল ব্যবহৃত যতিচিহ্ন । এর প্রয়ােগক্ষেত্র হচ্ছে :

ক . পূর্ণ বাক্য বা প্রসঙ্গের শেষে দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। যেমন : শুকতারার প্রভায় পুবের সারা আকাশ আলাে হয়ে আছে ।

খ . প্রসঙ্গে ক্রম নির্দেশ করতে সংখ্যার পর দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। যেমন : বেইজিং অলিম্পিকে পদকতালিকার শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে: ১. চীন । ২. যুক্তরাষ্ট্র । ৩. রাশিয়া ।

গ . বাক্য প্রশ্নসূচক নয় , অথচ প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ প্রশ্ন আছে এমন ক্ষেত্রে দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। যেমন:

প্রত্যক্ষ প্রশ্ন : স্যার জিজ্ঞেস করলেন , ' গাছের প্রাণ আছে কি - না ।

পরােক্ষ প্রশ্ন : স্যার গাছের প্রাণ আছে কি - না জানতে চাইলেন ।

কোলন বা দৃষ্টান্তচ্ছেদ [ : ]

বিষয়ান্তরের অবতারণা , প্রসঙ্গের পরিণতি অথবা তার দৃষ্টান্ত দেখানাের জন্যে কোলন চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । এর প্রয়ােগক্ষেত্র হচ্ছে :

ক . দৃষ্টান্তের উল্লেখে ক্ষেত্রেও কোলন ব্যবহার করা হয়।যেমন: টেলিভিশনের তিনটি মৌলিক রং হচ্ছে : লাল , নীল ও সবুজ ।

খ . শিরােনাম ও উপশিরােনামের মাঝখানে কোলন ব্যবহার করা হয়। যেমন: বাংলাদেশের ছােটগল্প : ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ ।

গ . সময়ের ক্ষেত্রে ঘণ্টা ও মিনিট নির্দেশ করতে কোলন ব্যবহার করা হয়। যেমন: ১২ : ০০ টা ; ১ : ১৫ টা ।

ঘ . নাটকের চরিত্রের পরে ও সংলাপের আগে কোলন ব্যবহার করা হয়। যেমন:- রাজা : উজির এখানে এসাে ।

ঙ . চিঠিপত্র ও বিভিন্ন রকমের ফর্মে ভুক্তি , উপভুক্তির পরে কোলন ব্যবহার করা হয়। যেমন : নাম : , পিতার নাম : মাতার নাম :, তারিখ :

প্রশ্নচিহ্ন [ ? ]

প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে প্রশ্নচিহ্ন ব্যবহৃত হয় । এর প্রয়ােগক্ষেত্র হচ্ছে :

ক . প্রশ্নসূচক বাক্যের শেষে প্রশ্নচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: তুমি কী চাও ?

খ . সংশয় বােঝাতে প্রশ্নচিহ্ন ব্যবহৃত হয়।যেমন: পরীক্ষার আগে অসুখে পড়ল , মেয়েটা পাস করতে পারবে তাে ?

গ . তথ্যের নির্ভুলতা সম্পর্কে নিঃসংশয় হওয়া না গেলে প্রশ্নচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: তিনি ১৯৫০ ( ? ) সালে জন্মগ্রহণ করেন ।

ঘ . ব্যঙ্গাত্মক মনােভাব প্রকাশে প্রশ্নচিহ্ন ব্যবহৃত হয়।যেমন: আপনার মতাে জনদরদি ( ? ) নেতা অনেক দেখেছি ।

বিস্ময়চিহ্ন [ ! ]

বিস্ময় , আনন্দ , ভয় , শােক , ঘৃণা ইত্যাদি আবেগ প্রকাশ করতে এ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । যেমন :

ক . বিস্ময় : আরে , এ যে নজরুলের গলা !

খ . আনন্দ : বাহ , কী আশ্চর্য ব্যাপার !

গ . ভয় : সাপ ! সাপ ! পালাও !

ঘ . শােক : হায় ! হায় !, কী সর্বনাশ হয়ে গেল !

ঙ . ঘৃণা : ছি , তুমি এমন করতে পারলে !

এ ছাড়া সম্বােধন এবং আলংকারিক প্রশ্নেও এ চিহ্ন বসে । যেমন :

চ . সম্বােধন : বৎস ! কেমন শকুন্তলাবণ্য দেখ ।

ছ . আলংকারিক প্রশ্ন : কার সাধ্য ওর গায়ে হাত দেয় !

ড্যাশ বা রেখাচিহ্ন [ — ]

প্রসঙ্গান্তরে যাওয়ার আগে , উদাহরণ দিতে , বক্তব্যের বিস্তার বােঝাতে কিংবা অসম্পূর্ণ বাক্যের শেষে এ চিহ্ন [—]ব্যবহৃত হয় । যেমন :

ক . প্রসঙ্গান্তরে যেতে : ‘ শিশির – না , এ নামটা আর ব্যবহার করা চলিল না ।

খ . উদাহরণ দিতে : গৃহপালিত পশু হচ্ছে – গরু , ছাগল , কুকুর , বেড়াল , মােষ , ভেড়া ইত্যাদি ।

গ . বক্তব্যের বিস্তারে : ভালাে ছাত্র নকল করেছে – ছি ছি , কী লজ্জা !

ঘ . বাক্য অসম্পূর্ণ রাখতে : এত সুন্দর মেয়েটি তবে –

হাইফেন বা পদসংযােজক [ - ]

একাধিক পদকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে এ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । যেমন :

ক . বহুপদী সমাসে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন: রূপ - রস - গন্ধ - স্পর্শ , পরশু - কিনে - আনা বইটি।

খ . সমস্তপদের উভয় উপাদান সমান গুরুত্ববহ হলে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন: আর্থ - সামাজিক , আমদানি - রপ্তানি

গ . বিশেষণ স্থানীয় পদদ্বৈতে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন: হাসি - হাসি মুখ , কাঁদো - কাঁদো চেহারা

ঘ . সন্ধি অনভিপ্রেত হলে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন: গণ - অভ্যুত্থান , প্রীতি - উপহার

ঙ . স্থান ও কালগত ব্যবধান নির্দেশে ‘ থেকে অর্থে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন: ঢাকা - চট্টগ্রাম । ১৮৬১-১৯৪১ । জানুয়ারি - জুন ।

উর্ধ্বকমা বা লােপচিহ্ন [ ' ]

শব্দের কোনাে বর্ণ বর্জিত , লুপ্ত বা অনুক্ত রয়েছে বােঝাতে এ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । যেমন : দু’টি , একশ ’ কিন্তু আজকাল এসব ক্ষেত্রে এ চিহ্নের ব্যবহার ক্রমশ উঠে যাচ্ছে । যেমন : দুটি , একশ

তবে সালের ক্ষেত্রে শতকের সঙ্গে সম্পর্কিত অঙ্ক দুটো অনুক্ত রেখে এ চিহ্ন ব্যবহার করা হয় । যেমন : ২১ ফেব্রুয়ারি '৫২ , '৬৯ -এর গণ - অভ্যুত্থান।

উদ্ধৃতিচিহ্ন [ ‘  ’ ] [ “  ” ]

উদ্ধৃতি চিহ্ন দুরকম : একক ও দ্বৈত । একক ও দ্বৈত উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহারের ক্ষেত্রে তেমন কোনাে পার্থক্য নেই । এদের প্রয়ােগক্ষেত্র হলাে :

ক . অন্যের লেখা উদ্ধৃত করার ক্ষেত্রে : রবীন্দ্রনাথ বলেছেন , ‘ শিক্ষা যারা আরম্ভ করেছে , গােড়া থেকেই বিজ্ঞানের ভাণ্ডারে না হােক , বিজ্ঞানের আঙিনায় তাদের প্রবেশ করা অত্যাবশ্যক ’।

খ . উদ্ধৃতির মধ্যে উদ্ধৃতি থাকলে বাইরে ভেতরের উদ্ধৃতির বিপরীত চিহ্ন ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় । যেমন : রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘ ছুটি ’ গল্পে লিখেছেন , “ ছেলেরা কোমর বাঁধিয়া ঠেলিতে আরম্ভ করিল– ‘ মারাে ঠেলা হেঁইয়াে , সাবাস জোয়ান হেঁইয়াে ।’ গুঁড়ি একপাক ঘুরিতে না ঘুরিতেই মাখন তাহার গাম্ভীর্য গৌরব এবং তত্ত্বজ্ঞান সমেত ভূমিসাৎ হইয়া গেল । ”

গ . বই , শিল্পকর্ম , চলচ্চিত্র , পত্রিকা ইত্যাদির নাম উল্লেখে :

বই : ‘গীতাঞ্জলি’র জন্যে রবীন্দ্রনাথ নােবেল পুরস্কার পান ।

শিল্পকর্ম : ' মােনালিসা ' লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির একটি বিখ্যাত শিল্পকর্ম ।

চলচ্চিত্র : ‘ জয়যাত্রা ' চলচ্চিত্রটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে ।

পত্রিকা : বাংলা একাডেমির শিশুতােষ পত্রিকা হচ্ছে : ‘ ধানশালিকের দেশ ' ।

ঘ. ধারণা , মতবাদ , তত্ত্ব , সূত্র ইত্যাদির উল্লেখে :

ধারণা : আজকাল ‘ উত্তর - আধুনিকতা ’ নিয়ে বেশ লেখালেখি হচ্ছে ।

মতবাদ : চার্লস ডারউইন ‘ বিবর্তনবাদ ’ - এর প্রবক্তা ।

তত্ত্ব : ‘আপেক্ষিকত’ত্ত্বের জনক হচ্ছেন আলবার্ট আইনস্টাইন ।

সূত্র : আইজাক নিউটন ‘ মহাকর্ষ সূত্রে’র আবিষ্কারক ।

ঙ. গল্প , প্রবন্ধ , কবিতা ইত্যাদির নাম উল্লেখে :

গল্প : রবীন্দ্রনাথের ' হৈমন্তী ' গল্পটি আমাদের পাঠ্য ।

প্রবন্ধ : অষ্টম শ্রেণিতে আবদুল্লাহ আল - মুতীর ' তারার দেশের হাতছানি ' প্রবন্ধটি পড়েছি ।

কবিতা : ‘ বিদ্রোহী ' নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ।

বিকল্প চিহ্ন [ / ]

দাড়ির তুলনায় কিছুটা লম্বা এবং ডানদিকে কাত করা একটি রেখা হচ্ছে বিকল্প চিহ্ন । নিচে এর ব্যবহার উল্লেখ করা হলাে :

ক. একাধিক শব্দ বা সংখ্যার বিকল্প বােঝাতে এটি ব্যবহৃত হয়:

শব্দ : মৃদুলা / রােদেলা কেউ হবে ।

সংখ্যা : আমার অফিসের ফোন নম্বর হচ্ছে : ০২-৯৮৮xxxx /৭

খ . তারিখ নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়: ০৭/০৮/২০১৫

গ . ভগ্নাংশ প্রকাশ করতে : ৩/৪ ; ১/২

ঘ. গদ্য রচনায় কবিতার চরণ নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়: আম্মা বলেন , পড়রে সােনা / আব্বা বলেন , মন দে ; / পাঠে আমার মন বসে না / কাঁঠালচাঁপার গন্ধে ।

বিন্দুচিহ্ন [ . ]

ইংরেজিতে এটি ফুলস্টপ হিসেবে ব্যবহৃত হয় । বাংলায় এর অন্যতর ব্যবহার রয়েছে । যেমন :

ক . শব্দ সংক্ষেপণের জন্য ব্যবহার হয়: ড . , ডা .

লক্ষণীয় :

১. শব্দ সংক্ষেপের জন্যে অনেকে বিসর্গ [ ঃ ] ব্যবহার করেন । এটি উচিত নয় । কারণ বিসর্গ সংক্ষেপণ - চিহ্ন নয় । শব্দশেষে এর উচ্চারণ অনেকটা আধাআধি ‘ হ ’ - এর মতাে ।

২ . যেসব শব্দের সংক্ষেপ একাধিক বর্ণ নিয়ে গঠিত , তাতে বিন্দুচিহ্ন না দিলেও চলে । যেমন : এস এস সি এইচ এস সি ; পি এইচ ডি ।

খ . ক্রম নির্দেশ করতে সংখ্যার পর এটির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যেমন: বেইজিং অলিম্পিকে পদকতালিকার শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে : ১. চীন ২. যুক্তরাষ্ট্র ৩.রাশিয়া

গ . তারিখ লিখতে ব্যবহৃত হয়: ২০.০৬.২০১৭ ঘ .

ঘ. সময় নির্দেশ করতে : সকাল ৭.৩০ টা । বেলা ১২.০০ টা । সন্ধে ৬.২০ টা ।

ঙ. টাকা লিখতে : ১০.০০ টাকা । ১২.৫০ টাকা । ১,০০০.০০ টাকা ।

ত্রিবিন্দুচিহ্ন [ ... ]

বক্তব্যের কিছু অংশ বর্জনের জন্যে এ চিহ্ন ব্যবহার করা হয় । যেমন : কবি দেখতে চান জগৎ ব্যাপারে অতীত সৌন্দর্য , আর বৈজ্ঞানিক দেখতে চান তার অন্তর্নিহিত সত্য । কবির সৌন্দর্য যেমন সত্য , বৈজ্ঞানিকের সত্যও তেমনই সুন্দর । ... জগৎ এজন্য কবি ও বৈজ্ঞানিক দুজনের নিকটই কৃতজ্ঞ ।

বন্ধনী চিহ্ন ( ),{}, [ ]

বাক্যের মধ্যকার কোনাে পদের অর্থ স্পষ্ট করার জন্য অথবা অন্য কোনাে প্রসঙ্গের অবতারণা করার জন্য এ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । বাক্যে সাধারণত দু ধরনের বন্ধনী চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । প্রথম বন্ধনী ( ) , তৃতীয় বন্ধনী [ ] বাংলা বাক্যে বন্ধনীর নানারকম ব্যবহার আছে । যেমন :

ক . অর্থ স্পষ্ট করতে : ‘ আধুনিক কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহারের সাথে সাথে রাসায়নিক সারের মাধ্যমে জমিতে উদ্ভিদের পুষ্টি - পদার্থ ( নাইট্রোজেন , ফসফরাস ও পটাশিয়াম ) জোগানাের প্রয়ােজনীয়তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে ।

খ . সম্পর্কিত অন্য প্রসঙ্গের অবতারণায় : প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি তারা [ এদের মধ্যে সূর্যের চেয়ে হাজার গুণ বড় ও উজ্জ্বল তারার সংখ্যা বহু । রয়েছে আমাদের ছায়াপথ বিশ্বে । তারাগুলাে ছড়িয়েও আছে বিশাল ব্যবধানে । এরকম কয়েক শ কোটি নক্ষত্রবিশ্বের সমষ্টি হচ্ছে আমাদের এই মহাবিশ্ব । কী বিপুল এর আয়তন !

গ . ব্যক্তির নামের পর তাঁর জীবৎকাল উল্লেখ করার ক্ষেত্রে: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮৬১-১৯৪১ ) , আলবার্ট আইনস্টাইন ( ১৮৭৯-১৯৫৫ )

ঘ . গ্রন্থ , পত্রিকা ইত্যাদির প্রকাশকাল উল্লেখ করতে : মেঘনাদবধকাব্য ( ১৮৬১ ) , সবুজপত্র ( ১৯১৪ )

ঙ . উধৃত অংশের সূত্র - নির্দেশে :

“ খােকা মাকে শুধায় ডেকে –

এলেম আমি কোথা থেকে ,

কোনখানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে ।

মা শুনে কয় হেসে কেঁদে

খােকারে তার বুকে বেঁধে

ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে । ”

[ ‘ জন্মকথা ’ : ‘ শিশু ' ]

চ . ভাষাতত্ত্বে ধ্বনিতত্ত্বের আলােচনায় ধ্বনি বা উচ্চারণ বােঝাতে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পদ্ধতি হলাে ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছকে দুটি Square brackets বা তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে রাখা । যেমন : আনন্দ [ anondo ]

কোলন ড্যাশ [ :— ]

কোলন ড্যাশ হলাে দুটি যতিচিহ্নের সমন্বয় । অর্থাৎ কোলন ( :) ও ড্যাশ ( — ) মিলে হয়েছে কোলন ড্যাশ । বিশ শতকে এই যতিচিহ্নটির ব্যবহারের আধিক্য থাকলেও সাম্প্রতিককালে এর ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে । এর প্রয়ােগ মূলত উদ্ধৃতি উদাহরণ প্রদানের পূর্বে ব্যবহৃত হয়। যেমন : গঠনের দিক থেকে বাক্য তিন প্রকার । যথা : –সরল বাক্য , জটিল বাক্য , যৌগিক বাক্য ।

দুই দাঁড়ি [ ।। ]

মধ্যযুগের কাব্যসাহিত্যে পূর্ণ যতি বােঝাতে দুই দাঁড়ি ব্যবহৃত হতাে । বর্তমানে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে । কেবল গানের অন্তরা বা স্তবকের শেষে দুই দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়ে থাকে । যেমন :

জানি জানিগাে মাের শূন্য হৃদয় দেবে ভরে

তুমি রাখবে না কো আমায় চির কঙ্কাল করে ।।

এ ছাড়া কিছু ব্যাকরণিক চিহ্নও বাংলায় ব্যবহৃত হয়।

যেমন :

১. ধাতুদ্যোতক চিহ্ন [ √ ] ধাতু বা ক্রিয়ামূল নির্দেশ করার জন্যে এ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । যেমন : √ঝর + না = ঝরনা ,√ কৃ + অক = কারক ।

২. উৎপত্তিদ্যোতক চিহ্ন [ < ] শব্দের উৎপত্তি বা উৎস নির্দেশ করার জন্যে এ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । যেমন : গাঁ < গ্রাম , সােনা < স্বর্ণ ।

৩. পরবর্তী রূপ নির্দেশক বা পরিণতিদ্যোতক চিহ্ন [ > ] উৎপন্ন শব্দ বা শব্দের পরবর্তী রূপ নির্দেশ করার জন্যে এ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । যেমন : গ্রাম > গাঁ , স্বর্ণ > সােনা ।

৪ . সমানবাচক বা তুল্যতা প্রকাশক চিহ্ন [ = ] সমানবাচকতা বােঝাতে এ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । যেমন : পিতা ও মাতা = পিতামাতা , বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় ।

৫. যােগচিহ্ন [ + ] এটি সন্ধির ক্ষেত্রে প্রয়ােজন হয় । যেমন : বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় ।


আরো পড়ুনঃ