প্রবন্ধ রচনা: তোমার শৈশব স্মৃতি | আমার শৈশবে স্মৃতি রচনা | ফেলে আসা দিনগুলো রচনা
তোমার শৈশব স্মৃতি
👉🏻ফেলে আসা দিনগুলো
👉🏻শৈশব স্মৃতি
👉🏻আমার শৈশব
👉🏻আমার শৈশবে স্মৃতি
ভূমিকা :
মানবজীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন সময় হলো শৈশব । এ সময়ে পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতা জীবনের কাছে আসতে পারে না । চিন্তাকে করতে পারে না ঘোলাটে । চারপাশ ঘিরে থাকে আনন্দের ঘনঘটা । মা - বাবা , দাদা - দাদি , নানা - নানির আদরে আদরে জীবনটা থাকে আনন্দময় । বন্ধু - বান্ধব নিয়ে সে কি আনন্দেই না সময়গুলো কাটে । সে সময়ের অভাবটা বোধ হয় পরিণত বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হারানো শৈশবের স্মৃতিকে স্মরণ করে বেদনার সাথে বলেছেন—
ক্রমে ক্রমে মানুষ শৈশব থেকে কৈশোর , কৈশোর থেকে যৌবন , যৌবন থেকে বার্ধক্যে প্রবেশ করে , কিন্তু শৈশবের ফেলে আসা স্মৃতিগুলোর কথা ভুলতে পারে না কোনো দিন।
আমার শৈশব :
আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে । গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদী । বর্ষায় নদীটি যখন পানিতে ভরে যায় তখন এর রূপ যেন নতুন হয়ে ওঠে । জলস্রোতের কলকল সুর এবং সকাল - সন্ধ্যা পালতোলা নৌকার বহর দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যেত । আবার চৈত্র মাসে যখন পানি কমে যেত তখন নদীটি অন্য রূপ ধারণ করত । এ সময়ে মাছ ধরার ধুম পড়ে যেত । তখন আমি স্কুল পালিয়ে মাছ ধরার নেশায় মাতাল হয়ে উঠতাম । বন্ধুদের সঙ্গে জাল , পলো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তাম নদীতে। মাছ ধরার আনন্দে খাওয়ার কথাও মনে থাকত না । এর আনন্দই আলাদা । নদীর দুই তীরের দৃশ্যও ছিল সাজানো । সাদা সাদা কাশফুলের দৃশ্য , সে কি অপূর্ব । মাঝে মাঝে আম , জাম, নারকেল , তাল , সুপারি গাছ । নদীটি এঁকেবেঁকে মিলিয়ে গেছে অনেক দূরে । এমন নদী দেখে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন—
শৈশবের পাঠশালা:
আমার শৈশবকালে পাঠশালা জীবনের স্মৃতি আজও জীবন্ত হয়ে আছে । আমাদের পাঠশালাটি ছিল ছোট্ট এক টিনের ছাউনি । ছিল না কোনো বৈদ্যুতিক আলো , বৈদ্যুতিক পাখা বা কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া । সেই পুরোনো , আদিম শিক্ষায়তনে তবু বাঁধা পড়ে আছে আজও আমার এ হৃদয়টি । গ্রামের গেঁয়ো পরিমণ্ডলে প্রকৃতির বিস্তৃত অঙ্গনের এক কোণে বসে পণ্ডিত মহাশয়ের নিয়ন্ত্রণে যে ছটি বছর ফেলে এসেছি , তা যেন আজ হারানো মানিকের মতোই অমূল্য সম্পদ বলে মনে হচ্ছে । আবাল্যের জীবন নাটকের এমন সুমধুর স্মৃতির বন্ধনকে আমি কখনো ভুলতে পারব না ।
শৈশবের গ্রাম্যমেলা :
আজকের বর্ণাঢ্য জীবন চলার পথে অন্য কিছু না হলেও গ্রাম্যমেলার রোমাঞ্ঝকর ঘটনা আমাকে বার বার আলোড়িত করে খেলা , সার্কাস , বাঁদর নাচ সবই যেন আজকের সবকিছুকে ডিঙিয়ে এক মধুর অতীতের স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয় । একবার বাঁদর নাচ দেখতে গিয়ে বাবার কাছ থেকে দলছুট হওয়ার কারণে বকুনিও খেতে হয়েছিল । তবু খারাপ লাগে নি । হারানো স্মৃতির আকর্ষণ এমনিভাবে হৃদয়কে আলোড়িত করে , যেন ভাবাবেগে আপ্লুত হয় মন ।
শৈশবের নানা স্মৃতি:
আমাদের গ্রামের পূর্বদিকে আছে বিশাল - বিস্তৃত বন । অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চল বর্ষার শুরুতেই প্লাবিত হয়ে যায় । মাঝখানে আছে বিল - হাওর । বর্ষার পানিতে অসংখ্য শাপলা গজিয়ে ওঠে এই হাওরে । ফোটে অসংখ্য ফুল । ফুলের সৌন্দর্যে অপরূপ রূপে সেজে ওঠে বন । একটু বাতাস ছুটলেই শাপলা পাতা ও ফুলের নাচানাচির দৃশ্য খুবই মনোরম দেখায় । দূর থেকে এসব দেখে আমার মন যখন আনচান করে উঠত তখন ডিঙি নৌকা নিয়ে বন্ধুরা মিলে ছুটে যেতাম বনে । শাপলা তুলতে তুলতে নৌকা ভরে যেত । একবার ধানক্ষেতে চোখে পড়ে কোড়াল পাখির বাসা । বাসায় ছিল ডিম । তখনও বাচ্চা ফোটে নি । বাচ্চা ফোটার আশায় ডিমগুলো নিয়ে আসি নি । দুদিন পর আবার দেখতে যাই । তখনও বাচ্চা ফোটে নি । এদিকে মায়ের সাথে মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে থাকতে হলো সাত দিন । ফিরে এসে বনে গিয়ে কোড়ালের বাসাটি পেলাম ঠিকই কিন্তু ডিমগুলো ছিল না । হয়তো অন্য কারও চোখ পড়েছিল , চুরি করে নিয়ে গেছে । কিংবা বাচ্চা ফুটিয়ে এর মধ্যে কোড়ালেরা তাদের সন্তানদের নিয়ে স্থান ত্যাগ করেছে । যা - হোক , শূন্য বাসা দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম । সেদিনের সেই মনোবেদনার স্মৃতি আজও আমাকে নিয়ে যায় অতীতের দিনগুলোতে । এছাড়া ডাঙুলি খেলা , কানামাছি , এক্কা - দোক্কা , লুকোচুরি খেলা এসব স্মৃতির কথাও বারে বারে মনে পড়ে । মনে পড়ে ঝিরিঝিরি বাতাসে ঢেউ খেলানো বিলে শাপলা তোলার আনন্দের কথা ।
উপসংহার:
আমার শৈশবের জীবন - সুতোয় গ্রথিত আছে অসংখ্য স্মৃতি - সম্পর । সেসব স্মৃতি এখন আমার কাছে অমূল্য সম্পদ বলে মনে হয় । শত চেষ্টা করেও কোনো স্মৃতিকেই মন থেকে মুছে দিতে পারি না । আমি যতই ভুলে যেতে চাই , স্মৃতিগুলো যেন ক্রমশ আরও সজীব হয়ে ওঠে ।
আরো পড়ুন:
- আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা [প্রবন্ধ রচনা]
- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য [প্রবন্ধ রচনা]
- বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য বা রূপসী বাংলাদেশ [প্রবন্ধ রচনা]
- একটি গ্রাম্য মেলা [প্রবন্ধ রচনা]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের নিবন্ধগুলিতে মন্তব্য করার সময় দয়া করে শ্রদ্ধাশীল এবং গঠনমূলক হন। অনুপযুক্ত, আপত্তিকর, বা অফ-টপিক মন্তব্য মুছে ফেলা হবে। আসুন ABC আইডিয়াল স্কুলের সকল পাঠকদের জন্য একটি ইতিবাচক এবং শিক্ষামূলক পরিবেশ বজায় রাখি। আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ!