শিষ্টাচার প্রবন্ধ রচনা

শিষ্টাচার

এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:
👉আদব - কায়দা
👉মানব জীবনে শিষ্টাচার
👉জাতীয় জীবনে শিষ্টাচার ও এর গুরুত্ব

ভূমিকা :

ভদ্র এবং শালীনতাসম্পন্ন আচরণকেই শিষ্টাচার বলে । শিষ্টাচার অর্থ লােক সমাজে মানুষের চলাফেরা , কথাবার্তা ও আচার ব্যবহারের ভদ্র ও মার্জিত রূপ । ভদ্রতা ও শিষ্টাচার একই মনােবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ । শিষ্টাচার মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে । শিষ্টাচার অনুষঙ্গটি কেবল মানুষের জন্যই প্রযােজ্য । কেননা , মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব । মানুষ তার আচরণের শুদ্ধতার মধ্যদিয়েই জীব হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে থাকে । তাই শিষ্টাচার মনুষ্যত্বেরই অপর নাম ।

শিষ্টাচার কী :

শিষ্টাচার কথাটি ‘ শিষ্ট ’ ও ‘ আচার ’ কথা দুটির সমন্বিত রূপ । শিষ্ট শব্দের অর্থ সঙ্গত , মার্জিত , সুন্দর বা গ্রহণযোগ্য । আর আচার শব্দের অর্থ রীতি , আচরণ বা অভিব্যক্তি । অতএব , শিষ্টাচার বলতে আমরা বুঝি মানুষের সুন্দর বা ভদ্র জীবনাচরণকে । প্রকৃতপক্ষে শিষ্টাচার একজন মানুষের স্বভাব - স্বরুপ ছাড়া আর কিছুই নয় । জীবনপথে চলতে গিয়ে সামাজিক পটভূমিতে মানুষ শিষ্টাচারের মাধ্যমেই সবার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠে ।

শিষ্টাচারের লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :

বংশপরিচয় কিংবা পুঁথিগত বিদ্যার্জন বা জ্ঞান দ্বারা প্রকৃত শিষ্টাচার বা আদব - কায়দা অর্জিত হয় না । অনেক পণ্ডিত ও জানী ব্যক্তিও তাদের অশিষ্ট ও অভদ্র আচরণের জন্য কুখ্যাত হয়েছেন । মানুষ সামাজিক জীব । সমাজের আপামর জনসাধারণের সাথে মার্জিত ও ভদ্র আচরণের মাধ্যমে সবার অকুণ্ঠ ভালােবাসা ও সম্মানের পাত্র হওয়াই শিষ্টাচারের লক্ষণ । মার্জিত ও রুচিশীল আচরণ , নম্রতা , ভদ্রতা ইত্যাদি শিষ্টাচারের বৈশিষ্ট্য ।

বাল্যকাল শিষ্টাচার আয়ত্ত করার প্রকৃষ্ট সময় :

শিষ্টাচার বা আদব - কায়দা আয়ত্ত করার প্রকৃষ্ট সময় বাল্যকাল । কাজেই শিশুকাল থেকেই ছেলেমেয়েদের আদব - কায়দা শিক্ষা দেওয়া অভিভাবকদের একান্ত কর্তব্য । বস্তুত শিশুকালই শিক্ষা - দীক্ষার উপযুক্ত সময় । কেননা , এ সময়ই শিশুকে যেরূপ ইচ্ছে সে রূপ করে গড়ে তােলা সহজ । তাই প্রত্যেক সচেতন অভিভাবকের উচিত শিশুকালেই আদর্শ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে রেখে বিদ্যার্জনের সাথে সাথে শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া এবং তাদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তােলার জন্য বিশেষ যত্নবান হওয়া । শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক । কাজেই শিশুকাল থেকেই এদের শিষ্টাচার শিক্ষা নিয়ে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে । মনীষী শেখ সাদী বলেছেন , “ শৈশবে যে শিষ্টাচার শিখে না : পরিণত বয়সে তার কাছে ভালাে কিছু আশা করা যায় না । ”

শিষ্টাচার ও পারিবারিক পরিবেশ :

শিষ্টাচার পারিবারিক পরিবেশের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল । কাজেই পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে তাদের মার্জিত কথাবার্তা ও আচার - আচরণের মাধ্যমে শিশুদের শিষ্টাচারের গুণাবলি শিক্ষা দিতে হবে । পারিবারিক পরিবেশ প্রতিকূল হলে শিশুদের কোনাে আদর্শ আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দেওয়া যেতে পারে । অভদ্র আচরণ ও অশালীন কথাবার্তা শিষ্টাচারের পরিপন্থি । শিষ্টাচার মানুষের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য । কথাবার্তা , চাল - চলন ও আচার - ব্যবহারে সর্বদা ভদ্র ও মার্জিত হওয়া বাঞ্ছনীয় । শিষ্টাচার ও সৌজন্যবােধের জন্যই মানুষ সৃষ্টির সেরা । কাজেই আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুন্ন রাখতে হবে । আমাদের আচার - আচরণ বা কথাবার্তায় যেন কখনাে কোনােরূপ অশিষ্টতা প্রকাশ না পায় সেদিকটি খেয়াল রাখতে হবে ।

ব্যক্তিজীবনে শিষ্টাচারের গুৱত্ব :

একজন মানুষ কোনাে বংশে জন্মগ্রহণ করেছে , কিংবা কত টাকার মালিক হয়েছে তা বড় কথা নয় বরং সবচেয়ে বড় কথা হলাে তার সুন্দর আচরণ । কেননা , অনেক ধনী ও বিদ্বান ব্যক্তি আচরণে শিষ্টতার অভাবে মানুষের নিকট সম্মান পায় না। সবাই তাদের এড়িয়ে চলে । অপরদিকে আচরণে পরিশােধিত হলে যেকোনাে ব্যক্তি মানুষের নিকট থেকে সম্মান , মর্যাদা ও সহানুভূতি লাভ করে থাকে । ভদ্র ও মার্জিত মানুষের সঙ্গ সবাই কামনা করে । জীবনের সকল ক্ষেত্রে শিষ্টাচারী ব্যক্তি সফলকাম হতে পারে । সামাজিক জীবনে শিষ্টাচার মানুষের জন্যে মহামূল্যবান ও স্বর্গীয় সম্পদ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে । মহানবি হযরত মুহম্মদ ( স ) বলেছেন , “ সুন্দর ব্যবহারই সওয়াব । ” একজন শিষ্টাচারী মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে সাফল্য লাভ করা ছাড়াও পরকালে আল্লাহর করুণা লাভে ধন্য হবে ।

শিষ্টাচারী হবার উপায় :

মানুষের আচরণ তথা স্বভাববৈশিষ্ট্য নির্ধারণে আর্থ - সামাজিক অবস্থা , শিক্ষা , পারিবারিক পরিবেশ ও ক্ষেত্রবিশেষে বংশধারা ভূমিকা পালন করে থাকে । তা সত্ত্বেও একজন মানুষ নিজ চেষ্টায় সদাচারী হয়ে উঠতে পারে । যে আচরণ , অভিব্যক্তি বা কথা মানুষ সাদরে গ্রহণ করে , প্রশংসা করে তাকেই জীবনাচারে স্থায়ী করে নেবার সাধনা করতে হবে । সমাজে যারা জনপ্রিয় এবং সদাচারী বলে স্বীকৃত তাদের সাহচর্য গ্রহণের মধ্যদিয়ে নিজের আচরণগত শুদ্ধতা আনয়ন করা যায় । মহান ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ , ধর্মীয় বিধিবিধানের অনুসরণ , ভালাে বন্ধুর সজ্ঞ ও পরামর্শ গ্রহণের মধ্যদিয়ে একজন মানুষ শিষ্টাচারী হয়ে উঠতে পারে । শিষ্টাচারী হবার উপকারিতা অপরিসীম , কিন্তু একে অর্জন করার জন্য কোনাে পয়সা লাগে না , সাধনারও প্রয়ােজন হয় না । প্রকৃতপক্ষে সত্য - সুন্দর ও কল্যাণের চেতনাকে নিজের মধ্যে লালন করা এবং বিনয়কে চরিত্র ভূষণ করে তুলতে পারলেই শিষ্টাচারী হওয়া যায় ।

উপসংহার :

প্রাচীনকালে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা অনিন্দ্যসুন্দর শিষ্টাচারের অধিকারী ছিল । তাদের নমনীয়তা , সততা , শ্রদ্ধাবােধ প্রভৃতি ছিল প্রশংসনীয় । বর্তমানে পাশ্চাত্য উগ্র সভ্যতার প্রভাবে আমাদের সামাজিক আচরণ বিকৃত হয়ে পড়েছে ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিষ্টাচার বা শালীনতাবোধ আজ নেই বললেই চলে । একটি উন্নয়নশীল জাতির জন্য নিশ্চয়ই তা হতাশাব্যঞ্জক । নৈতিক অবক্ষয় থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার মানসিকতায় আমাদেরকে অবশ্যই শিষ্টাচার বা মার্জিত আদব - কায়দায় অভ্যস্ত হতে হবে ।