পর্যায় সারণি - নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক)

2012 সাল পর্যন্ত সর্বমোট 118টি মৌল শনাক্ত হয়েছে। গোড়ার দিকে বিজ্ঞানীরা মৌলগুলোকে ধাতু এবং অধাতু, এই দু-ভাগে ভাগ করেছিলেন। কিন্তু এই বিভাজন খুব বেশি ফলপ্রসূ হয়নি, কারণ ধাতব ও অধাতব মৌলের ধর্মের প্রভেদ খুব স্পষ্ট নয়।

ডাল্টনের পরমাণুতত্ত্ব প্রকাশিত হওয়ার পর মৌলসমূহের পারমাণবিক ওজনের সঙ্গে তাদের ধর্মের সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত সঠিক পারমাণবিক ওজন নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি, ততদিন পর্যন্ত মৌলের স্বাভাবিক শ্রেণিবিন্যাসের কাজ বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি।

মৌলসমূহের সঠিক পারমাণবিক ওজন নির্ণীত হওয়ার পরেই মৌলসমূহের পারমাণবিক গুরুত্ব ও তাদের ধর্মের সমন্বয় সাধন করে মৌলগুলোর শ্রেণিবিন্যাসের প্রচেষ্টা বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে।

অধ্যায়ের বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী

দিমিত্রি মেন্ডেলিফ: রুশ রসায়নবিদ ও উদ্ভাবক দিমিত্রি ইভানোভিচ মেন্ডেলিফ (৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৩৪ – ২ ফেব্রুয়ারি ১৯০৭) মৌলিক পদার্থসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম বিশ্লেষণ করে মৌলসমূহের পর্যায়ভিত্তিক ধর্ম আবিষ্কার করেন এবং তা কাজে লাগিয়ে সর্বপ্রথম সার্থক পর্যায় সারণি তৈরি করেন। তাঁর সময়ে যে মৌলসমূহ আবিষ্কার হয়নি তিনি সেগুলোরও ধর্ম সম্পর্কে সফল ভবিষ্যদ্বাণী করে যান। মেন্ডেলিফ তরলের কৈশিকতা ও বর্ণালীমাপক যন্ত্র নিয়ে গবেষণা করেন। লন্ডনের রয়‍্যাল সোসাইটি তাঁকে সম্মানসূচক কোপলি মেডেল প্রদান করে।

হেনরি মোসলে: হেনরি মোসলে (২৩ নভেম্বর ১৮৮৭ ১০ আগস্ট ১৯১৫) একজন ইংরেজি পদার্থবিদ। তিনি আণবিক সংখ্যার পূর্ববর্তী তত্ত্বীয় এবং রাসায়নিক ধারণার উন্নতি সাধনে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। এরই হাত ধরে এক্সরে বর্ণালীতে মোসলে সূত্রের আবির্ভাব ঘটে। মোসলে সূত্রানুসারে পর্যায় সারণির অনেক মৌলকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। মোসলে স্কুলে খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১০ সালে স্নাতক পাস করার পরে মোসলে স্যার আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের তত্ত্বাবধানে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেমোনস্ট্রাটর পদে যোগ দেন।

এক নজরে বিভিন্ন যৌগের রাসায়নিক নাম ও সংকেত

যৌগের রাসায়নিক নাম সংকেত যৌগের রাসায়নিক নাম সংকেত
হাইড্রো হ্যালাইড এসিড HX [X = Cl, F, Br, I ইত্যাদি] ক্যালসিয়াম কার্বনেট CaCO3
হাইড্রোক্লোরিক এসিড HCl ক্যালসিয়াম ফ্লোরাইড CaF2
হাইড্রোজেন ফ্লোরাইড বা হাইড্রোক্লোরিক এসিড HF ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড CaCl2
হাইড্রাইড ব্রোমিক এসিড বা হাইড্রোব্রোমিক এসিড HBr ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড MgCl2
হাইড্রো আয়োডিক এসিড HI কার্বন ডাইঅক্সাইড CO2

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

পর্যায় সারণি: প্রায় একই ধরনের ধর্মবিশিষ্ট মৌলসমূহকে একই শ্রেণিভুক্ত করে আবিষ্কৃত সব মৌলকে স্থান দিয়ে মৌলসমূহের যে সারণি বর্তমানে প্রচলিত তাই পর্যায় সারণি (Periodic Table) ।

ডোবেরাইনারের ত্রয়ী সূত্র: পারমাণবিক ভর অনুসারে তিনটি করে মৌলকে সাজালে দ্বিতীয় মৌলের পারমাণবিক ভর প্রথম ও তৃতীয় মৌলের পারমাণবিক ভরের যোগফলের অর্ধেক বা তার কাছাকাছি, যাকে ডোবেরাইনারের ত্রয়ীসূত্র বলা হয়।

IUPAC: IUPAC এর পূর্ণরূপ : International Union of Pure and Applied Chemistry। অর্থাৎ এটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক রসায়ন ও ফলিত রসায়ন সংস্থা।

আধুনিক পর্যায় সূত্র: আধুনিক পর্যায় সূত্রটি হলো- বিভিন্ন মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধি অনুসারে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।

পর্যায়: পর্যায় সারণির বাম থেকে ডান পর্যন্ত বিস্তৃত সারিগুলোকে পর্যায় বলে। পর্যায় সারণিতে 7টি পর্যায় বা আনুভূমিক সারি রয়েছে।

সংশোধিত পর্যায় সূত্র: সংশোধিত পর্যায় সূত্র হলো- মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী আবর্তিত হয়।

অ্যাকটিনাইট মৌল: যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 89 থেকে 103 পর্যন্ত এ 15টি মৌলকে অ্যাকটিনাইড মৌল বলা হয়।

পর্যায়বৃত্ত ধর্ম: পর্যায় সারণিতে অবস্থিত মৌলগুলোর কিছু ধর্ম যেমন, ধাতব ধর্ম, অধাতব ধর্ম, পরমাণুর আকার, আয়নিকরণ শক্তি, তড়িৎ ঋণাত্মকতা ইত্যাদি ধর্মসমূহকে পর্যায়বৃত্ত ধর্ম বলে।

ধাতু: যে সকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাদেরকে ধাতু বলে। যেমন, Na, K, Rb, Mg ইত্যাদি।

অধাতু: যে সকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাদেরকে অধাতু বলে। F, Cl, N, O ইত্যাদি।

ইলেকট্রন আসক্তি: গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মৌল গ্যাসীয় পরমাণুতে এক মোল ইলেকট্রন প্রবেশ করিয়ে এক মৌল ঋণাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে শক্তি নির্গত হয়, তাকে ঐ মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি বলে। ইলেকট্রন আসক্তি একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম। পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে ইলেকট্রন আসক্তির মান বাড়ে এবং পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়লে ইলেকট্রন আসক্তির মান কমে।

তড়িৎ ঋণাত্মকতা: দুটি পরমাণু যখন সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অণুতে পরিণত হয় তখন অণুর পরমাণুগুলো বন্ধনের ইলেকট্রন দুটিকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে, এই আকর্ষণকে তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে। এটি একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম।

ক্ষার ধাতু: পর্যায় সারণির গ্রুপ-1 এর অন্তর্ভুক্ত 6টি মৌল Li, Na, K, Rb, Cs ও Fr কে ক্ষার ধাতু বলা হয়।

মুদ্রা ধাতু: পর্যায় সারণির গ্রুপ 11 নং এর 4টি মৌল (Cu, Ag, Au, Rg) এর মধ্যে ১ম 3টি মৌল (Cu, Ag, Au) কে মুদ্রা ধাতু বলে। এ 3টি মৌল (Cu, Ag, Au) দ্বারা প্রাচীনকালে মুদ্রা তৈরি হতো।

হ্যালোজেন: পর্যায় সারণির গ্রুপ-17 এর 6টি মৌল (F, Cl, Br, I, At ও Ts) কে হ্যালোজেন বলে। এ মৌলগুলোকে X দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

নিষ্ক্রিয় গ্যাস: পর্যায় সারণির গ্রুপ 18 এ অবস্থিত He, Ne, Ar, Kr, Xe, Rn এই 6টি গ্যাসীয় মৌলকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে।

অবস্থান্তর মৌল: যেসব মৌলের স্থিতিশীলতা আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাসে এ অরবিটাল আংশিক পূর্ণ থাকে অর্থাৎ d¹-⁹ হয় তাদেকে অবস্থান্তর মৌল বলে। এ মৌলগুলো জটিল ও রঙিন যৌগ গঠন করে।

জ্ঞান মূলক ও অভিধান মূলক প্রশ্ন উত্তর

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:

১। পর্যায় সারণি কী?

প্রায় একই ধরনের ধর্মবিশিষ্ট মৌলসমূহকে একই শ্রেণিভুক্ত করে আবিষ্কৃত সব মৌলকে স্থান দিয়ে মৌলসমূহের যে সারণি বর্তমানে প্রচলিত তাই পর্যায় সারণি।

২। মেন্ডেলিফের পর্যায় সূত্রটি লিখ।

ম্যান্ডেলিফের পর্যায় সূত্রটি হলো:"মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক ভর বৃদ্ধির সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।”

৩। ত্রয়ী সূত্রটি লিখ।

পারমাণবিক ভর অনুসারে তিনটি করে মৌলকে সাজালে দ্বিতীয় মৌলের পারমাণবিক ভর প্রথম ও তৃতীয় মৌলের পারমাণবিক ভরের যোগফলের অর্ধেক বা তার কাছাকাছি, যাকে ডোবেরাইনারের ত্রয়ীসূত্র বলা হয়।

৪। পর্যায় সারণির অষ্টক তত্ত্বটি লিখ।

মৌলগুলোকে তাদের পারমাণবিক ভর অনুযায়ী সাজালে প্রতি অষ্টম মৌলসমূহের ধর্মের মিল দেখা যায়, যা পর্যায় সারণির 'অষ্টক তত্ত্ব' নামে পরিচিত।

৫। নিউল্যান্ডের অষ্টক তত্ত্বটি লিখ।

নিউল্যান্ডের অষ্টক সূত্রটি হচ্ছে “মৌলসমূহকে যদি পারমাণবিক ভরের ছোট থেকে বড় অনুযায়ী সাজানো যায়, তবে যেকোনো পর্যায়ের ১ম একটি মৌলের ধর্ম তার অষ্টম মৌলের ধর্মের সাথে মিলে যায়"।

৬। IUPAC এর পূর্ণরূপ লিখ।

IUPAC এর পূর্ণরূপ: International Union of Pure and Applied Chemistry.

৭। পারমাণবিক সংখ্যার আবিষ্কারক কে?

পারমাণবিক সংখ্যার আবিষ্কারক হলেন বিজ্ঞানী হেনরি মোসলে।

৭। পর্যায় কাকে বলে?

পর্যায় সারণির বাম থেকে ডান পর্যন্ত বিস্তৃত সারিগুলোকে পর্যায় বলে।

৮। আধুনিক পর্যায় সূত্রটি লিখ।

আধুনিক পর্যায় সূত্রটি হলো- বিভিন্ন মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধি অনুসারে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।

৯। সংশোধিত পর্যায় সূত্রটি লিখ।

সংশোধিত পর্যায় সূত্র হলো- মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী আবর্তিত হয়।

১০। ল্যান্থানাইড মৌল কী?

যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 57 থেকে 71 পর্যন্ত এ রকম 15টি মৌলকে ল্যান্থানাইড সারির মৌল বলা হয়।

১১। অ্যাকটিনাইড মৌল কী?

যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 89 থেকে 103 পর্যন্ত এরকম 15টি মৌলকে অ্যাকটিনাইড সারির মৌল বলা হয়।

১২। আয়নিকরণ শক্তি কী?

গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মোল গ্যাসীয় পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন অপসারণ করে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে শক্তির প্রয়োজন হয়, তাকে ঐ মৌলের আয়নিকরণ শক্তি বলে।

১৩। তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে?

দুটি পরমাণু যখন সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অণুতে পরিণত হয় তখন অণুর পরমাণুগুলো বন্ধনের ইলেকট্রন দুটিকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে, এই আকর্ষণকে তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে।

১৪। ইলেকট্রন আসক্তি কী?

গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মৌল গ্যাসীয় পরমাণুতে এক মোল ইলেকট্রন প্রবেশ করিয়ে এক মৌল ঋণাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে শক্তি নির্গত হয়, তাকে ঐ মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি বলে।

১৫। পর্যায়বৃত্ত ধর্ম কী?

পর্যায় সারণিতে অবস্থিত মৌলগুলোর কিছু ধর্ম যেমন, ধাতব ধর্ম, অধাতব ধর্ম, পরমাণুর আকার, আয়নিকরণ শক্তি, তড়িৎ ঋণাত্মকতা ইত্যাদি ধর্মসমূহকে পর্যায়বৃত্ত ধর্ম রলে।

১৬। মুদ্রা ধাতু কাকে বলে?

পর্যায় সারণির গ্রুপ 11 নং এর 4টি মৌল (Cu, Ag, Au, Rg) এর মধ্যে ১ম 3টি মৌল (Cu, Ag, Ag) কে মুদ্রা ধাতু বলে।

১৭। অবস্থান্তর মৌল কাকে বলে?

যেসব মৌলের স্থিতিশীলতা আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাসে d অরবিটাল আংশিক পূর্ণ থাকে অর্থাৎ d1-9 হয় তাদেকে অবস্থান্তর মৌল বলে।

১৮। হ্যালোজেন কাকে বলে?

পর্যায় সারণির গ্রুপ-17 এর 6টি মৌল (F, Cl, Br, I, At ও Ts) কে হ্যালোজেন বলে।

১৯। ক্ষার ধাতু কাকে বলে?

পর্যায় সারণির গ্রুপ-1 এর অন্তর্ভুক্ত 6টি মৌল (Li, Na, K, Rb, Cs ও Fr) কে ক্ষার ধাতু বলা হয়।

২০। হ্যালোজেন দ্বারা কী বুঝানো হয়?

হ্যালোজেন এর অর্থ হলো লবণ উৎপাদনকারী, পর্যায় সারণির গ্রুপ-17 এর 6টি মৌলসমূহ F, Cl, Br, I, At ও Ts

২১। নিষ্ক্রিয় গ্যাস কী?

পর্যায় সারণির গ্রুপ 18 এ অবস্থিত (He, Ne, Ar, Kr, Xe, Rn) এই 6টি গ্যাসীয় মৌলকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে।

২২। ধাতু কাকে বলে?

যে সকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাদেরকে ধাতু বলে।

২৩। অধাতু কাকে বলে?

যে সকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাদেরকে অধাতু বলে।

২৪। অভিজাত ধাতু কাকে বলে?

যেসব ধাতু বাতাস, পানি বা অ্যাসিডের সঙ্গে সহজে বিক্রিয়া করে না, অর্থাৎ রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীল — তাদেরকে অভিজাত ধাতু (Noble Metal) বলে। উদাহরণ: সোনা (Au), রূপা (Ag), প্লাটিনাম (Pt)

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:

১। বিজ্ঞান ল্যাভয়সিয়ে কীভাবে মৌলিক পদার্থসমূহকে শ্রেণিবিভাগ করেন?

1789 সালে বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়ে O, N, H, P, Hg, Zn এবং S ইত্যাদি মৌলিক পদার্থসমূহকে ধাতু ও অধাতু এ দুইভাগে ভাগ করেন। এই সময় থেকেই মৌলগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করার চিন্তা ভাবনা শুরু হয় যেন, একই ধরনের মৌলিক পদার্থগুলো একটি নির্দিষ্ট ভাগে থাকে।

২। ডোবেরাইনের ত্রয়ী সূত্র কী? ব্যাখ্যা কর।

“তিনটি মৌলকে তাদের পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজালে দ্বিতীয় মৌলের পারমাণবিক ভর প্রথম ও তৃতীয় মৌলের পারমাণবিক ভরের যোগফলের অর্ধেক বা গড় হয়" - এটিই ডোবেরাইনার ত্রয়ী সূত্র। উদাহরণ, লিথিয়াম (7) ও পটাসিয়াম (39) এর পারমাণবিক ভরের গড় সোডিয়াম (23) এর পারমাণবিক ভরের প্রায় সমান।

৩। নিউল্যান্ডের অষ্টক সূত্রটি কী? ব্যাখ্যা কর।

নিউল্যান্ডের অষ্টক সূত্রটি হলো- “মৌলগুলোকে যদি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ভর হিসেবে সাজানো হয় তাহলে প্রত্যেক অষ্টম মৌলে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের সাথে মিলে যায়।" যেমন, Li কে ১ম মৌল ধরে পরের অষ্টম মৌল হয় Na। প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় Li, Na এবং K মৌলসমূহের মধ্যে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের অনেক মিল রয়েছে।

৪। মেন্ডেলিফের পর্যায় সূত্রটি বলতে কী বুঝায়?

বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ 1869 সালে সকল মৌলের ধর্ম পর্যালোচনা করে একটি পর্যায়সূত্র প্রদান করেন, যা মেন্ডেলিফের পর্যায়সূত্র নামে পরিচিত। সূত্রটি হলো- “মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক ভর বৃদ্ধির সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়। এ সূত্র মতে, 63টি মৌলকে 12টি আনুভূমিক সারি আর ৪টি খাড়া কলাম, এর একটি ছকে পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজানো হয়েছে। এ ছকটি হলো পর্যায় সারণি।

৫। মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির একটি ত্রুটি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর

মেন্ডেলিফের পর্যায় সূত্র অনুযায়ী, কম পারমাণবিক ভরবিশিষ্ট পরমাণু পর্যায়সারণির আগে বসবে এবং বেশি পারমাণবিক ভরবিশিষ্ট পরমাণু সারণির পরে বসবে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটছে Ar ও K এর ক্ষেত্রে। যেমন Ar এর পারমাণবিব ভর 40 ও K এর পারমাণবিক ভর 39। অর্থাৎ Ar এর পারমাণবিক ভর তুলনামূলক বেশি হওয়া সত্ত্বেও K এর পূর্বে Ar কে বসানো হয়েছে- এটাই মেন্ডিলিফের পর্যায় সারণির অন্যতম একটি ত্রুটি।

৬। বিজ্ঞানী মোসলে কীভাবে পর্যায় সারণির ত্রুটি সংশোধন করেন?

বিজ্ঞানী মোসলে মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির ত্রুটি সংশোধন করেন। মোসলে পারমাণবিক ভরের পরিবর্তে পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলোকে সাজান। যার ফলে মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির ত্রুটি দূর হয়। যেমন- আর্গনের (Ar) পারমাণবিক সংখ্যা 18 এবং পটাশিয়াম (K) এর পারমাণবিক সংখ্যা 19। কাজেই কম পারমাণবিক সংখ্যাবিশিষ্ট মৌল 18Ar, 19K এর আগে বসবে।

৭। IUPAC কী? রসায়ন শাস্ত্রে এর ভূমিকা লেখ।

IUPAC হচ্ছে আন্তর্জাতিক রসায়ন ও ফলিত রসায়ন সংস্থা (International Union of Pure and Applied Chemistry)। IUPAC সংস্থাটি আন্তর্জাতিকভাবে রসায়ন ও ফলিত রসায়নের বিভিন্ন নিয়মকানুন, ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনের কোনটি গ্রহণ করা যায় কোনটি বর্জন করা উচিত- এ বিষয়গুলো দেখাশোনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে।

৮। পর্যায় সারণির বিভিন্ন পর্যায়ের মৌল সংখ্যা লেখ।

পর্যায় সারণির 7টি পর্যায়ের মৌল সংখ্যা নিচে দেওয়া হলো-
প্রথম পর্যায়ে মাত্র ২টি মৌল অবস্থিত।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ৪টি করে মৌল অবস্থিত।
৪র্থ পর্যায় ও ৫ম পর্যায়ে 1৪টি করে মৌল অবস্থিত।
৬ষ্ঠ পর্যায়ে 32টি মৌল আছে।
৭ম পর্যায়ে বাকী 32টি মৌল অবস্থিত।

৯। ইলেকট্রন বিন্যাস করে পর্যায় সারণিতে Sc এর অবস্থান নির্ণয় কর। [এরকম পর্যায় সারণির 1-50 পর্যন্ত মৌল]

Sc(21) এর ইলেকট্রন বিন্যাস-
Sc(21)= 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 3d¹ 4s² পর্যায় নির্ণয়: ইলেকট্রন বিন্যাস চারটি স্তরে বিন্যস্ত হওয়ায় এটি ৪র্থ পর্যায়ের মৌল।
গ্রুপ নির্ণয়: সর্বশেষ ইলেকট্রন d অরবিটালের প্রবেশ করায় (n - 1)d ও ns অরবিটালের মোট ইলেকট্রন সংখ্যা গ্রুপ নির্দেশ করে। অর্থাৎ 1+2= 3 অতএব, Sc মৌলটি 3নং গ্রুপে অবস্থিত।

১০। গ্রুপ সংখ্যা নির্ণয়ে কখন 10 সংখ্যা যোগ করতে হয়? [গ্রুপ ১৩-১৮ পর্যন্ত বিস্তৃত]

কেবলমাত্র p-ব্লক মৌলের গ্রুপ সংখ্যা নির্ণয় করার সময় 10 যোগ করতে হয়।
যেসব মৌলের শেষ ইলেকট্রনটি p উপশক্তিস্তরে যায় সেগুলোকে p ব্লক মৌল বলা হয়। এসব মৌলের শেষ কক্ষপথের s ও p অরবিটালের মোট ইলেকট্রন সংখ্যার সাথে 10 যোগ করে গ্রুপ নির্ণয় করা হয়।
p-ব্লক মৌলের জন্য গ্রুপ সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্রটি হলো: গ্রুপ সংখ্যা = (সর্বশেষ কক্ষপথের s-ইলেকট্রন + সর্বশেষ কক্ষপথের p-ইলেকট্রন) + 10
যেমন-
Si(14)→ 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p²
এক্ষেত্রে s ও p অরবিটালের মোট সংখ্যা (2+2) = 4। অর্থাৎ, মৌলটির গ্রুপ সংখ্যা = 10 + 4 = 14 ।

১০। পর্যায় সারণিতে একটি মৌল একটি মাত্র স্থান দখল করে কেন?

প্রতিটি মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা নির্দিষ্ট বলে প্রতিটি মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসও নির্দিষ্ট এবং একটির ইলেকট্রন বিন্যাস অন্যটি থেকে ভিন্ন। আবার প্রতিটি পারমাণবিক সংখ্যার জন্য পর্যায় সারণিতে একটি নির্দিষ্ট অবস্থান হয়েছে। তাই পর্যায় সারণিতে একটি মৌল একটিমাত্র স্থান দখল করে।

১১। পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি ইলেকট্রন বিন্যাস- ব্যাখ্যা কর।

পর্যায় সারণিতে মৌলের অবস্থান নির্ণয় ও মৌলসমূহের অনেক ধর্ম ইলেকট্রন বিন্যাসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন,
Mg(12) → 1s² 2s² 2p⁶ 3s²
মৌলটির ইলেকট্রন বিন্যাস 3টি স্তরে বিন্যস্ত, তাই এর পর্যায় 3 এবং যোজ্যতাস্তরে s orbital-এ ২টি e- আছে। এজন্য এর গ্রুপ সংখ্যা 2। আবার বহিঃস্থ স্তরের e- ২টি দান করে ক্যাটায়নে পরিণত হতে পারে। তাই এটি ধাতু।
সুতরাং বলা যায়, ইলেকট্রন বিন্যাসই পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি।

১২। Mg2+ বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা কর।

Mg2+ হলো ম্যাগনেসিয়ামের দ্বিধনাত্মক আয়ন।
Mg এর ইলেকট্রন বিন্যাস নিম্নরূপ :
Mg(12) → 1s² 2s² 2p⁶ 3s² মৌলটির শেষ শক্তিস্তরে ২টি ইলেকট্রন থাকায় এটি সহজেই উক্ত ইলেকট্রন দুটি ত্যাগ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাস Ne এর ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করে এবং Mg2+ তড়িৎ ধনাত্মক আয়ন গঠন করে। যেমন-
Mg-2e- → Mg2+

সারাংশ লিখন →৩

সারাংশ লিখন →৪

সারাংশ লিখন →১

সারাংশ লিখন →২

সারাংশ লিখন →৩

সারাংশ লিখন →৪

সারাংশ লিখন →১

সারাংশ লিখন →২

সারাংশ লিখন →৩

সারাংশ লিখন →৪

সারাংশ লিখন →১

সারাংশ লিখন →২

সারাংশ লিখন →৩

সারাংশ লিখন →৪

ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে পর্যায় সারণিতে মৌলের অবস্থান নির্ণয়

পর্যায় নির্ণয়ের নিয়ম: কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বোচ্চ যত সংখ্যক ইলেকট্রন থাকে তার পর্যায় সংখ্যা তত।

গ্রুপ নির্ণয়ের নিয়ম:

সর্বশেষ ইলেকট্রন যে অরবিটালে যাবে অর্থাৎ ব্লকের নাম যে যে অরবিটালে ইলেকট্রন বিদ্যমান তার যোগফল যেসব গ্রুপ হবে
s s গ্রুপ-1, 2। [ব্যতিক্রম: গ্রুপ-18 এর He]
p s + p + 10 গ্রুপ-13-18 এর সকল মৌল
d d + পরের স্তরের (s) গ্রুপ-3-12
f গ্রুপ-3 গ্রুপ-3 এর ল্যান্থানাইড ও অ্যাক্টিনাইড
সিরিজের La, Ac ও Th ব্যতীত সকল মৌল

বিভিন্ন মৌল উপশ্রেণীভিত্তিক বৈশিষ্ট্যর বিবরণী

গ্রুপ সংখ্যা গ্রুপে বিদ্যমান মৌলসমূহের নাম বিশেষ নাম বৈশিষ্ট্য প্রকৃতি
গ্রুপ-1 Li, Na, K, Rb, Cs ক্ষার ধাতু পানির সাথে বিক্রিয়া করে ক্ষার উৎপন্ন করে। ধাতু
গ্রুপ-2 Be, Mg, Ca, Sr, Ba মৃদক্ষার ধাতু এদের যৌগ মাটিতে পাওয়া যায় এবং
পানির সাথে বিক্রিয়া করে ক্ষার উৎপন্ন করে।
ধাতু
গ্রুপ-3-12 Sc, Ti, V, Cr, Mn,
Fe, Co, Ni, Cu, Zn ইত্যাদি
d-ব্লক মৌল শেষ ইলেকট্রন d অরবিটালে যায় ধাতু
গ্রুপ-11 Cu, Ag, Au মুদ্রা ধাতু অন্যান্য মৌলের সাথে বিক্রিয়া করে। ধাতু
গ্রুপ-12 Zn, Cd, Hg অ্যালকালি ধাতু আয়নীয় যৌগ তৈরি করে। ধাতু
গ্রুপ-13 B, Al, Ga, In, Tl আয়নীয় যৌগ তৈরি করে। ক্ষার ধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে। ধাতু
গ্রুপ-14 C, Si, Ge, Sn, Pb অর্ধধাতু, C এর
অসাধারণ দুইটি
পরিবার।
C, Si, Ge, Sn ও Pb অধাতু
গ্রুপ-15 N, P, As, Sb হ্যালোজেন (এই গ্রুপে শুধু মৌল N
অন্যদের সাথে বিক্রিয়া করে না।)।
N, P, As, Sb অধাতু
গ্রুপ-16 O, S, Se, Te, Po চ্যালকোজেন O, S, Se, Te, Po অধাতু
গ্রুপ-17 F, Cl, Br, I, At, Ts হ্যালোজেন হ্যালোজেন অধাতু
গ্রুপ-18 He, Ne, Ar, Kr, Xe নিষ্ক্রিয় গ্যাস সকল মৌলের সাথে বিক্রিয়া প্রদর্শন করে না। গ্যাস
ল্যান্থানাইডস Lu(57) - Lu(71) বিরল মৃত্তিকা ধাতু আয়নীয় যৌগ তৈরি করে। ধাতু
অ্যাক্টিনাইডস Ac(89) - Lr(103) বিরল মৃত্তিকা ধাতু আয়নীয় যৌগ তৈরি করে। ধাতু