পদার্থের অবস্থা

পদার্থ সাধারণত তিন অবস্থায় বিরাজ করে- কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়। কিন্তু স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কিছু পদার্থ কঠিন, কিছু তরল ও কিছু বায়বীয় অবস্থায় থাকে। তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। তিন অবস্থাতেই এদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও ধর্ম রয়েছে।

তবে অণুর গঠনের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। কঠিন অবস্থায় অণুসমূহ কাছাকাছি থেকে কাঁপতে থাকে; তাপ প্রদানের সাথে সাথে অণুসমূহ গতিশীল হয় এবং দূরে সরে যেতে থাকে। বিভিন্ন মাধ্যমে কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা চাপের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে। পদার্থের অবস্থার সাথে ব্যাপনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। পদার্থ কঠিন হলে ব্যাপন হার সবচেয়ে কম এবং গ্যাসীয় হলে ব্যাপন হার সবচেয়ে বেশি হয়।

অধ্যায়ের বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী

ইয়োহানেস ভ্যানডার ওয়ালস: নেদারল্যান্ডের বিখ্যাত বিজ্ঞানী এবং তাপগতিবিদ্যা বিশারদ ইয়োহানেস ভ্যানডার ওয়ালস (২৩ নভেম্বর ১৮৩৭ – ৮ মার্চ ১৯২৩) গ্যাস এবং তরলের অবস্থার সমীকরণের উপর গবেষণা পরিচালনা করেন। তিনি আন্তঃআণবিক বল আবিষ্কার করেন যা ভ্যানডার ওয়ালস বল নামে খ্যাত। এই আবিষ্কারের ফলে গ্যাসের চাপ, আয়তন ও তাপমাত্রার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল। তিনি ১৮৫৭ সালে বিজ্ঞানী রুডলফ ক্লসিয়াস রচিত গতির প্রকৃতি বা তাপের উপর একটি নিবন্ধের সারাংশ পাঠ করেন যা তাঁকে জীবনভর কাজের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলো।

থামাস গ্রাহাম: ব্রিটিশ রসায়নবিদ থামাস গ্রাহাম (২১ ডিসেম্বর ১৮০৫ – ১৬ সেপ্টেম্বর ১৮৬৯) গ্যাসের ব্যাপন ও ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে কিডনী রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ডায়ালাইজার মেশিন তাঁর তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। থামাস গ্রাহামকে কোলয়ডাল রসায়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঘনত্ব ও আণবিক ভরের সম্পর্ক প্রতিপাদনও তাঁর অন্যতম অবদান। গ্রাহাম রয়েল সুইডিশ একাডেমী অব সায়েন্সের সদস্য নির্বাচিত হন এবং এ সময় তিনি নিঃসরণ প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন।

এক নজরে বিভিন্ন যৌগের রাসায়নিক নাম ও সংকেত

এ অধ্যায়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উল্লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি উপযোগী যৌগসমূহের নাম ও সংকেত নিচে প্রদত্ত হলো-

রাসায়নিক যৌগের শ্রেণিবিন্যাস

ক্রমিক যৌগ রাসায়নিক নাম রাসায়নিক শ্রেণি
C10H8 ন্যাফথালিন অ্যরোমেটিক হাইড্রোকার্বন
CO2(s) কঠিন কার্বন ডাইঅক্সাইড অ্যসিডিক অক্সাইড
I2 আয়োডিন হ্যালোজেন
AlCl3 অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড অ্যসিডিক লবণ
C6H12O6 গ্লুকোজ কার্বোহাইড্রেট
SiO2 সিলিকা বা বালি বা সিলিকন ডাইঅক্সাইড অ্যসিডিক অক্সাইড
CH4 মিথেন স্যাচুরেটেড হাইড্রোকার্বন
KMnO4 পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট অক্সিডাইজিং এজেন্ট
NH4OH অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড ক্ষার
১০ HCl হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড অ্যসিড
১১ (NH2)2CO ইউরিয়া কার্বনিক যৌগ
১২ NaCl সাধারণ লবণ বা খাবার লবন লবণ
১৩ NH4Cl অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড বা নিশাদল অ্যাসিডিক লবণ
১৪ C10H16O কর্পূর অর্গানিক যৌগ

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি: পদার্থের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো একে অপরকে যে বলে আকর্ষণ করে তাকে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি বলা হয়।

কণার গতিতত্ত্ব: আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি এবং কণাগুলোর গতিশক্তি দিয়ে পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা ব্যাখ্যা করার তত্ত্বকে কণার গতিতত্ত্ব বলে।

ব্যাপন: ব্যাপন হলো কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফূর্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়া। যেমন- ঘরের এক কোণে কোনো একটি সুগন্ধির শিশির মুখ খুলে রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যে সারা ঘরে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এটি হচ্ছে ব্যাপন প্রক্রিয়ার উদাহরণ।

নিঃসরণ: সরু ছিদ্রপথে কোনো গ্যাসের অণুসমূহের উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলে। তাপ প্রদান করলে নিঃসরণের হার বৃদ্ধি পায়।

মোম: মোম হচ্ছে উচ্চতর অ্যালকেন [অ্যালকেন হলো এক প্রকার সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন। যেসকল হাইড্রোকার্বনের কার্বন শিকলে কার্বন-কার্বন পরমাণুগুলো শুধুমাত্র একক বন্ধন (Single Bond) দ্বারা যুক্ত থাকে, তাদের অ্যালকেন বলা হয়] যা স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে কঠিন। অন্যভাবে বলা যায়, মোম হলো বিভিন্ন হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণ।

গলন: তাপ প্রয়োগে কোনো পদার্থের কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে গলন বলে।

গলনাঙ্ক: 1 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে তাপ প্রদানের ফলে যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় সেই তাপমাত্রাকে উক্ত কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। যেমন- 1 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে বরফের গলনাঙ্ক 0°C.

স্ফুটন: তাপ প্রয়োগ করে তরলকে গ্যাসে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে স্ফুটন বলে।

স্ফুটনাঙ্ক: 1 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে তাপ প্রদানের ফলে যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ গ্যাসীয় অবস্থা প্রাপ্ত হয় সে তাপমাত্রাকে উক্ত তরল পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলা হয়। যেমন- 1 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে পানির স্ফুটনাঙ্ক 100°C.

পাতন: কোনো তরলকে তাপ প্রদানে বাষ্পে পরিণত করে তাকে পুনরায় শীতলীকরণের মাধ্যমে তরলে পরিণত করার পদ্ধতিকে পাতন বলে। অর্থাৎ, পাতন = বাষ্পীভবন + ঘনীভবন।

বাষ্পীভবন: কোনো তরলকে তাপ প্রদান করে বাষ্পে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে বাষ্পীভবন বলে।

উধ্বর্পাতন: যে প্রক্রিয়ায় কোনো কঠিন পদার্থকে তাপ প্রদান করা হলে সেগুলো তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় সেই প্রক্রিয়াকে ঊর্ধ্বপাতন বলে।

উধ্বর্পাতিত পদার্থ: যেসব কঠিন পদার্থকে তাপ প্রদান করা হলে তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় সেসব কঠিন পদার্থকে ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ বলে। যেমন- নিশাদল, কর্পূর, ন্যাপথলিন, কঠিন কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ। কারণ এদেরকে তাপ দিলে  তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয়।


জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

১। পদার্থ কী?

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, যার ভর আছে এবং স্থান দখল করে তাকে বলে পদার্থ। এটি পরমাণু বা অণু দ্বারা গঠিত। পদার্থকে তার অণুগুলোর মধ্যেকার আকর্ষণ শক্তির ভিত্তিতে মূলত তিনটি অবস্থায় পাওয়া যায়: কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয়।

২। কঠিন পদার্থ কী?

যে পদার্থের নির্দিষ্ট আকার এবং নির্দিষ্ট আয়তন থাকে, তাকে কঠিন পদার্থ বলে। এর অণুগুলো পরস্পরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে এবং একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক কাঠামো তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ: লোহা, কাঠ, পাথর ইত্যাদি কঠিন পদার্থ।

৩। তরল পদার্থ কী?

তরল পদার্থ হলো এমন একটি পদার্থ, যার নির্দিষ্ট আয়তন থাকে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার থাকে না। এর অণুগুলো কঠিন পদার্থের তুলনায় কিছুটা দূরে দূরে থাকে এবং স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: পানি, তেল ইত্যাদি তরল পদার্থ।

৪। গ্যাসীয় পদার্থ কী?

গ্যাসীয় পদার্থ হলো এমন একটি পদার্থ, যার নির্দিষ্ট আকার এবং নির্দিষ্ট আয়তন কিছুই থাকে না। এর অণুগুলো পরস্পরের থেকে অনেক দূরে দূরে থাকে এবং সর্বদা গতিশীল থাকে এবং স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: বায়ু, অক্সিজেন ইত্যাদি গ্যাসীয় পদার্থ।

৫। আন্তঃআণবিক শক্তি কী?

যে শক্তি বলে অণুসমূহের মধ্যে আকর্ষণ বিদ্যমান তাকে বলে আন্তঃআণবিক শক্তি।
প্রত্যেক পদার্থের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো একে অপরকে আকর্ষণ করে থাকে, যাকে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি বলা হয়।

৬। কণার গতিতত্ত্ব কী?

আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি এবং কণাগুলোর গতিশক্তি দিয়ে পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা ব্যাখ্যা করার তত্ত্বকেই কণার গতিতত্ত্ব বলা হয়।

৭। ব্যাপন কী?

ব্যাপন হলো কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফূর্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়া।

৮। ব্যাপন হার কী?

ব্যাপন হার হলো কোনো পদার্থের কণাগুলো নির্দিষ্ট সময়ে কত দূর অবধি ছড়িয়ে পড়তে পারে, তার পরিমাপ। সহজ কথায়, ব্যাপন হার নির্দেশ করে কোনো পদার্থ কত দ্রুত অন্য কোনো পদার্থের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।

৯। ব্যাপন হার কিসের ওপর নির্ভরশীল?

ব্যাপন হার বিভিন্ন বিষয়ের যেমন তাপমাত্রা, পদার্থের প্রকৃতি, অণুর আকার, মাধ্যমের ঘনত্ব ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।

১০। মোম কী?

মোম একটি উচ্চতর অ্যালকেন। সাধারণ তাপমাত্রায় এটি নরম কঠিন পদার্থ হিসেবে থাকে।

১১। গলন কী?

তাপ প্রয়োগে কোনো পদার্থের কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে গলন বলে।

১২। গলনাঙ্ক কী?

1 বায়ুমন্ডলীয় চাপে তাপ প্রদানের ফলে যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় সে তাপমাত্রাকে বলে গলনাঙ্ক। অর্থাৎ, গলনাঙ্ক হলো সেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, যেখানে কোনো কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হয়।

১৩। স্ফুটন কী?

তাপ প্রয়োগ করে তরলকে গ্যাসে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে বলে স্ফুটন। স্ফুটন হলো কোনো তরল পদার্থের বাষ্পে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া।

১৪। স্ফুটনাঙ্ক কী?

1 বায়ুমন্ডলীয় চাপে তাপ প্রদানের ফলে যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ গ্যাসে পরিণত হয় সে তাপমাত্রাকে বলে, স্ফুটনাঙ্ক। স্ফুটনাঙ্ক হলো সেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, যেখানে কোনো তরল পদার্থের বাষ্পচাপ পরিবেশের চাপের সমান হয়ে যায় এবং তরল পদার্থ সর্বত্র ফুটতে শুরু করে।

১৫। বাষ্পীভবন কী?

কোনো তরলকে তাপ প্রদান করে বাষ্পে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে বলে বাষ্পীভবন। এই প্রক্রিয়াটি তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং তরলের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি পাত্রে খোলা রাখা পানি ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হয়ে যায়।

১৬। পাতন কী?

পাতন একটি বিশেষ ধরনের শোধন প্রক্রিয়া, যেখানে একটি তরল মিশ্রণকে তার উপাদান তরলগুলোতে বিভক্ত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় মিশ্রণকে উত্তপ্ত করে বাষ্পে পরিণত করা হয়, তারপর এই বাষ্পকে ঠান্ডা করে আবার তরলে পরিণত করা হয়। যেহেতু বিভিন্ন তরলের স্ফুটনাঙ্ক ভিন্ন হয়, তাই এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন তরলকে আলাদা করা যায়।

১৭। ঊর্ধ্বপাতন কী?

যে প্রক্রিয়ায় কোনো কঠিন পদার্থকে তাপ প্রদান করা হলে সেগুলো তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় সেই প্রক্রিয়াকে বলে উর্ধ্বপাতন। এই প্রক্রিয়ায় পদার্থটি তরল অবস্থায় যায় না। উর্ধ্বপাতন সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু পদার্থের ক্ষেত্রে ঘটে, যেমন আয়োডিন, কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদি।

১৮। নিঃসরণ কাকে বলে?

সরু ছিদ্রপথে কোনো গ্যাসের অণুসমূহের উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলে।

১৯। স্ফুটনের আপেক্ষিক সুপ্ততাপ কী?

কোনো পদার্থ তরল অবস্থা থেকে গ্যাসীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হতে যে পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে তাকে পদার্থের স্ফুটনের আপেক্ষিক সুপ্ততাপ বলে।

২০। সুপার হিটেড ওয়াটার কাকে বলে?

অতিরিক্ত চাপে 100°C থেকে 374°C তাপমাত্রার মধ্যবর্তী যেকোনো তাপমাত্রার পানিকে সুপার হিটেড ওয়াটার বলে।

২১। উর্ধ্বপাতিত পদার্থ কাকে বলে?

যেসব কঠিন পদার্থকে তাপ প্রদান করা হলে তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় সেসব কঠিন পদার্থকে ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ বলে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

১। কণার গতিতত্ত্ব কী? ব্যাখ্যা কর।

প্রত্যেক পদার্থের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো একে অপরকে আকর্ষণ করে থাকে, যাকে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি বলা হয়। আবার কণাগুলোর গতিশক্তিও রয়েছে। আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি এবং কণাগুলোর গতিশক্তি দিয়ে পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা ব্যাখ্যা করার তত্ত্বকেই কণার গতিতত্ত্ব বলা হয়।

২। আন্তঃআণবিক শক্তি কী? ব্যাখ্যা কর।

যে শক্তি বলে অণুসমূহের মধ্যে আকর্ষণ বিদ্যমান তাকে বলে আন্তঃআণবিক শক্তি। পদার্থের অবস্থাভেদে আন্তঃআণবিক শক্তির তারতম্য ঘটে। যেমন- কঠিন পদার্থের সবচেয়ে বেশি, তরলের আন্তঃআণবিক শক্তি কঠিন পদার্থের চেয়ে কম এবং গ্যাসীয় পদার্থের সবচেয়ে কম।

৩। কঠিন পদার্থে তাপ দিলে তরলে পরিণত হয় কেন?

কঠিন পদার্থকে তাপ দেওয়া হলে কণাগুলো তাপশক্তি গ্রহণ করে কাঁপতে থাকে। যদি আরও বেশি তাপ দেওয়া হয় তাহলে কণাগুলো এত বেশি কাঁপতে থাকে যে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি কমে যায় এবং কিছুটা পতিশক্তি প্রাপ্ত হয়। ফলে কণাসমূহের আন্তঃআণবিক দূরত্ব বৃদ্ধি পায় এবং পদার্থ তারল অবস্থাপ্রাপ্ত হয়।

৪। তরল পদার্থকে তাপ দিলে গ্যাসীয় অবস্থাপ্রাপ্ত হয় কেন?

তরল অবস্থায় পদার্থকে তাপ দেওয়া হলে কণাগুলো তাপশক্তি নিয়ে গতিশক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে এবং একসময় গতিশক্তি এত বেড়ে যায় যে কণাগুলো আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি থেকে প্রায় মুক্ত হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছুটতে থাকে। ফলে পদার্থের আন্তঃআণবিক দূরত্ব সর্বাধিক হয় এবং পদার্থ গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্পণ করে।

৫। পদার্থের প্লাজমা অবস্থা কীভাবে সৃষ্টি করা যায়?

পদার্থের চতুর্থ অবস্থা হিসেবে পরিচিত প্লাজমা অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য একটি গ্যাসকে অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করতে হয়। এই উচ্চ তাপমাত্রার কারণে গ্যাসের পরমাণু বা অণুগুলো থেকে ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং একটি আয়নিত গ্যাস তৈরি হয়। এই আয়নিত গ্যাসকেই বলে প্লাজমা। প্লাজমা অবস্থা সৃষ্টির জন্য সাধারণত বিদ্যুৎ চাপ, লেজার বা মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করা হয়।

৬। তাপ প্রয়োগের ফলে অণুসমূহের গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় কেন?

পদার্থ যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমন্বয়ে গঠিত, সে কণাগুলো যেকোনো তাপমাত্রায় চলাচল করে। ক্ষুদ্র কণাগুলোর চলাফেরার ফলে পদার্থ এক ধরনের শক্তি লাভ করে। পদার্থের এ শক্তিই গতিশক্তি।। তাপ প্রয়োগের ফলে ক্ষুদ্র কণাগুলোর চলাচলের গতি বৃদ্ধি পায়। এ কারণে গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়

৭। সব্যাপন কী? ব্যাখ্যা কর।

ব্যাপন হলো কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফূর্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়া। একটি ঘরে যদি সুগন্ধি স্প্রে করা হয়, তাহলে ধীরে ধীরে সারা ঘরে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে। এটিই ব্যাপনের একটি উদাহরণ।

৮। পানিতে চিনির মিশ্রণ একটি ব্যাপন প্রক্রিয়া- ব্যাখ্যা কর।

কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা বায়বীয় বস্তুর স্বতঃস্ফূর্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলে ব্যাপন। চিনি একটি কঠিন পদার্থ, যা পানিতে রেখে দিলে এর কণাগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুরো পানিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং যেকোনো স্থানের পানি পান করলে তখন সমান মিষ্টি লাগে। অর্থাৎ পানিতে চিনির ব্যাপন ঘটে

৯। ব্যাপন হার কী? ব্যাখ্যা কর।

ব্যাপন হার হলো কোনো পদার্থের কণাগুলো নির্দিষ্ট সময়ে কত দূর অবধি ছড়িয়ে পড়তে পারে, তার পরিমাপ। সহজ কথায়, ব্যাপন হার নির্দেশ করে কোনো পদার্থ কত দ্রুত অন্য কোনো পদার্থের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। যেমন, একটি ঘরে সুগন্ধি স্প্রে করলে, সুগন্ধি কত দ্রুত সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়বে, তা ব্যাপন হারের উপর নির্ভর করে।

১০। পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট কঠিন হলেও এর ব্যাপন সম্ভব ব্যাখ্যা কর?

পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (KMnO₄) কঠিন হলেও একে পানিতে দ্রবীভূত করা হলে অণুগুলো পানি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের এর স্ফটিকগুলো যখন পানিতে দ্রবীভূত হয়, তখন এর অণুগুলো পানির অণুগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো পানিকে গোলাপি রঙে রাঙিয়ে দেয়। এই প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে ব্যাপন। সুতরাং বলা যায়, KMnO4, কঠিন হলেও এর ব্যাপন সম্ভব।

১১। ব্যাপন হার কিসের ওপর নির্ভরশীল?

ব্যাপন হার বিভিন্ন বিষয়ের যেমন তাপমাত্রা, পদার্থের প্রকৃতি, অণুর আকার, মাধ্যমের ঘনত্ব ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। উচ্চ তাপমাত্রায় অণুগুলোর গতিশক্তি বেশি হওয়ায় ব্যাপন হার বাড়ে। ছোট আকারের অণুগুলো বড় আকারের অণুর তুলনায় দ্রুত ব্যাপিত হয়। আবার, যে মাধ্যমে ব্যাপন ঘটে, তার ঘনত্ব কম হলে ব্যাপন হার বেশি হয়। উদাহরণস্বরূপ, গ্যাসে ব্যাপন হার তরলের তুলনায় অনেক বেশি, কারণ গ্যাসের ঘনত্ব অনেক কম।

১২। গ্রাহামের ব্যাপন সূত্র বিবৃতি ও ব্যাখ্যা কর।

গ্রাহামের ব্যাপন সূত্র অনুসারে, 'নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে কোনো গ্যাসের ব্যাপন হার এর ঘনত্বের বর্গমূলের ব্যস্তানুপাতিক।' অর্থাৎ, কোনো গ্যাস যত হালকা হবে, তত দ্রুত এটি ব্যাপিত হবে। এই সূত্রটি গ্যাসের আণবিক ভরের সাথেও সম্পর্কিত। আণবিক ভর কম হলে ব্যাপন হার বেশি হবে এবং আণবিক ভর বেশি হলে ব্যাপন হার কম হবে।

১৩। তাপমাত্রার সাথে ব্যাপন হারের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।

ব্যাপন হার তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে পদার্থের ব্যাপন হার বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বস্তুর আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের মান কমে যায়। ফলে পদার্থের। কণাগুলো তাপ গ্রহণ করে অধিক গতিশক্তি প্রাপ্ত হয় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কঠিন পদার্থের ব্যাপন হার সবচেয়ে কম এবং গ্যাসীয় পদার্থের ব্যাপন হার সবচেয়ে বেশি হয়।

১৪। তাপমাত্রা বাড়ালে ব্যাপনের হার বাড়ে কেন?

কোনো পদার্থের ব্যাপনের হার তার ভর ও আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের উপর নির্ভরশীল। আন্তঃআণবিক আকর্ষণ কম হলে ব্যাপন দ্রুত হয় অর্থাৎ ব্যাপন হার বেশি হয়। তাপমাত্রা বাড়ালে বস্তুর আন্তঃকণা আকর্ষণ কমে যায় এবং ফলস্বরূপ ব্যাপন হার বেড়ে যায়।

১৫। NH3, ও SO₂ এর মধ্যে কোনটির ব্যাপন হার বেশি?
এরকোম, H2S, CO2, CH4, HCl, CO, NO, N2O, N2 , H2, O2, Cl2

আমরা জানি , যেসব গ্যাসের আণবিক ভর যত কম, তাদের ব্যাপন হার তত বেশি।
SO₂ এর আণবিক ভর = 32 + (2 × 16) = 32+32=64
এবং NH3, এর আণবিক ভর= 14+(1 × 3) = 17
দেখা যাচ্ছে, SO₂ এর আণবিক ভর NH3, অপেক্ষা বেশি। সুতরাং, NH3, এর ব্যাপন হার SO₂ অপেক্ষা বেশি।

১৬। তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই- ব্যাখ্যা কর।

তরল পদার্থের কণিকাসমূহের গতিশক্তি, আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তির প্রায় সমকক্ষ। ফলে এরা একটি নির্দিষ্ট সীমায় অবস্থান পরিবর্তন করে চলাচল করতে পারে। এজন্য তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আকার নেই। তবে কণিকাগুলোর চলাচল একটি সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে এদের নির্দিষ্ট আয়তন আছে।

১৭। ব্যাপন ও নিঃসরণের হার কীসের উপর নির্ভর করে?

ব্যাপন ও নিঃসরণের হার বস্তুর আণবিক ভর ও ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল। যে বস্তুর আণবিক ভর ও ঘনত্ব যত বেশি হবে তার ব্যাপন ও নিঃসরণের হার তত হ্রাস পাবে। কিন্তু ব্যাপনের ক্ষেত্রে চাপের প্রভাব নেই, নিঃসরণের ক্ষেত্রে চাপের প্রভাব আছে।

১৮। বেলুনে ছিদ্র করা হলে নিঃসরণ ঘটে- ব্যাখ্যা কর।

বেলুনে ছিদ্র করা হলে এর ভেতরের গ্যাস বাইরের উচ্চ চাপের কারণে নিম্ন চাপের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে চায়। ছিদ্রের মাধ্যমে গ্যাসের অণুগুলো বাইরে বেরিয়ে আসতে থাকে এবং এর ফলে বেলুনটিকে ফুলিয়ে রাখা গ্যাসের চাপ কমে যায়। এই ঘটনাকেই বলা হয় গ্যাসের নিঃসরণ। এই প্রক্রিয়াটি ততক্ষণ চলতে থাকে, যতক্ষণ না বেলুনের ভেতরের ও বাইরের চাপ সমান হয়ে যায়।

১৯। নিঃসরণ ও ব্যাপনের ক্ষেত্রে চাপের প্রভাব কীরূপ?

নিঃসরণের ক্ষেত্রে চাপের প্রভাব বেশি। বাহ্যিক উচ্চ চাপের প্রভাবে পাত্রের সরু ছিদ্রপথ দিয়ে গ্যাস সজোরে বের হয় একে নিঃসরণ বলে। বাহ্যিক চাপ ছাড়াও ছিদ্র পথ দিয়ে গ্যাস বের হতে পারে। তখন তাকে বলা হয় ব্যাপন। এজন্য ব্যাপনের ক্ষেত্রে বাহ্যিক চাপের প্রয়োজন নেই। তাই বলা যায়, নিঃসরণের ক্ষেত্রে চাপের প্রভাব বেশি।

২০। বডি স্প্রেতে ব্যাপন ও নিঃসরণ ঘটে- ব্যাখ্যা কর।

বডি স্প্রেতে সুগন্ধি দ্রব্যসমূহ (দ্রাবকসহ) উচ্চচাপে তরলীকৃত অবস্থায় থাকে। বডি স্প্রে এর স্প্রে বাটনে চাপ দিলে সূক্ষ্ম ছিদ্রপথে সুগন্ধি দ্রব্য উচ্চচাপ অঞ্চল (বডি স্প্রে বোতল) থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে (বাইরে) নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে। তারপর ব্যাপন প্রক্রিয়ায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ চাপমুক্ত হলে তখন ব্যাপনে রূপান্তরিত হয়।

২১। পাকা কাঁঠালের গন্ধ কীভাবে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।

পাকা কাঁঠাল থেকে গন্ধ কাঁঠালের ত্বকের ছিদ্রপথে গন্ধ বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া হলো নিঃসরণ, আবার এই গন্ধ বের হওয়ার পর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়া হলো ব্যাপন। অর্থাৎ কাঁঠালের ভিতর কাঁঠাল পাকার জন্য দায়ী উপাদান বাইরে বেরিয়ে আসে নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় আবার বের হওয়ার পর উপাদানটির স্বতঃস্ফূর্তভাবে চারদিকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আমরা গন্ধ অনুভব করি।

২২। নিঃসরণের ক্ষেত্রে চাপের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

কোনো পাত্রে গ্যাসের চাপ যত বেশি হবে, গ্যাসের অণুগুলো ছিদ্র পথে ততবেশি বাইরে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করবে। অর্থাৎ, নিঃসরণের হার চাপের সমানুপাতিক। চাপ যত বাড়বে, নিঃসরণের হারও তত বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গ্যাস সিলিন্ডারে গ্যাসের চাপ বেশি থাকে বলে, যখন আমরা সিলিন্ডারের ভাল্ব খুলি, তখন গ্যাস খুব জোরে বেরিয়ে আসে।

২৩। প্রজ্জ্বলিত অবস্থায় মোমের কয়টি অবস্থা বিদ্যমান?

প্রজ্জ্বলিত অবস্থায় মোম তিনটি অবস্থায় দেখা যায়: কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয়। মোমবাতির নিচের অংশ কঠিন অবস্থায় থাকে, মাঝখানে তাপের প্রভাবে মোম গলে তরলে পরিণত হয় এবং বাষ্পীভূত হয়ে গ্যাসীয় অবস্থায় জ্বলে। এই তিনটি অবস্থাকেই মোমবাতি জ্বালিয়ে সহজেই পর্যবেক্ষণ করা যায়।

২৪। মোম এর দহনে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে? [

মোমের দহন করলে তার কিছু অংশ ভৌত পরিবর্তনের মাধ্যমে গলে কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরিত হয় এবং ঠান্ডা হয়ে পুনরায় কঠিন অবস্থা প্রাপ্ত হয়। একই সাথে মোমের কিছু অংশ বায়ুর অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয় বাষ্প উৎপন্ন করে। এক্ষেত্রে নতুন পদার্থ সৃষ্টি হওয়ায় এটি একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

২৫। C₂H6(ইথেন) এর দহন একটি রাসায়নিক পরিবর্তন- ব্যাখ্যা কর।
যে পরিবর্তনের ফলে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থে পরিণত হয় তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। ইথেন (C₂H6) এর দহন একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

কারণ ইথেনের দহন বিক্রিয়াটি হলো—

$$ 2\text{C}_2\text{H}_6 + 7\text{O}_2 \rightarrow 4\text{CO}_2 + 6\text{H}_2\text{O} + \text{শক্তি} $$ অথবা, ১ মোল ইথেনের জন্য: $$ \text{C}_2\text{H}_6 + \frac{7}{2}\text{O}_2 \rightarrow 2\text{CO}_2 + 3\text{H}_2\text{O} + \text{শক্তি} $$

বিক্রিয়া অনুসারে, বিক্রিয়ক \( \text{C}_2\text{H}_6 \), \( \text{O}_2 \) এবং উৎপাদ \( \text{CO}_2 \), \( \text{H}_2\text{O} \) এর মধ্যে মোলগত সম্পর্ক এবং ভরের সামঞ্জস্য আলোচনা কর।

২৬। প্রেসার কুকারে পানির স্ফুটনাঙ্ক 121°C কেন?

প্রেসার কুকারে পানির স্ফুটনাঙ্ক 100 ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি হয়, সাধারণত 121 ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। এর কারণ প্রেসার কুকারের ভেতরে চাপ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। উচ্চ চাপের কারণে পানির অণুগুলোকে বাষ্পে পরিণত হতে বেশি শক্তি খরচ করতে হয়, ফলে পানি উচ্চ তাপমাত্রায় ফুটে। এই উচ্চ তাপমাত্রায় খাবার দ্রুত রান্না হয়ে যায়।

২৭। ঠান্ডা পানি ফ্লাক্সে করে চাঁদে নিয়ে যাওয়া হলে কী ঘটবে?

২৮। ঠান্ডা পানি ফ্লাক্সে করে চাঁদে নিয়ে যাওয়া হলে কী ঘটবে?

তরলের স্ফুটনাঙ্ক তরলের উপস্থিত বায়ুচাপের উপর নির্ভরশীল। বায়ুচাপ শূন্য হলে তরল যেকোনো তাপমাত্রাতেই ফুটতে থাকে। যেহেতু চাঁদে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, তাই সেখানে কোনো বায়ুচাপ নেই। সুতরাং, ঠান্ডা পানি ফ্লাক্স থেকে বের করা মাত্রই ফুটতে আরম্ভ করবে

২৯। একটি পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক ভিন্ন কেন?

যে তাপমাত্রায় বস্তুর অণুসমূহের আন্তঃ-আণবিক বল ও গতিশক্তি সমান হয় তা হচ্ছে গলনাঙ্ক। আবার যে তাপমাত্রায় বস্তুর অণুসমূহের আন্তঃআণবিক বল অপেক্ষা অণুসমূহের গতিশক্তি বেশি হয় স্ফুটনাঙ্ক। অর্থাৎ বাষ্পীভূত হওয়ার জন্য বস্তুর অণুসমূহের গতিশক্তি বেশি (তরল অবস্থা অপেক্ষা) হওয়া দরকার পড়ে। আর বেশি গতিশক্তি লাভের জন্য বস্তুর অধিক তাপশক্তির প্রয়োজন; তাই স্ফুটনাঙ্ক গলনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি হয়।

৩০। KCI উচ্চ গলনাঙ্কবিশিষ্ট হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

কঠিন আয়নিক যৌগে তথা KCI এর সংশ্লিষ্ট আয়নসমূহ নির্দিষ্ট অনুপাতে স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ শক্তি দ্বারা কেলাস জালিতে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে। এজন্য KCI যৌগের কেলাস থেকে K ওCl আয়নগুলোকে পৃথক করে বিগলিত করতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। এ কারণেই KCI যৌগের গলনাঙ্ক বেশি হয়।

৩১। গলনের আপেক্ষিক সুপ্ততাপ ব্যাখ্যা কর।

কঠিন পদার্থের এক একক ভরকে তার গলনাঙ্কে তরলে পরিণত করতে যে পরিমাণ তাপশক্তি প্রয়োজন, তাকেই বলে গলনের আপেক্ষিক সুপ্ততাপ। এই তাপশক্তি শুধুমাত্র পদার্থের অবস্থা পরিবর্তন করে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে না। উদাহরণস্বরূপ, পানির গলনের আপেক্ষিক সুপ্ততাপের মান প্রায় 334 জুল/গ্রাম।

৩২। পানির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক একই, না ভিন্ন? ব্যাখ্যা কর।

যে তাপমাত্রায় পানি (বরফ) এর আন্তঃআণবিক বল ও গতিশক্তি সমান হয়ে যায় তাকে বলে পানির গলনাঙ্ক (0°)। আবার যে তাপমাত্রায় পানির অণুসমূহের আন্তঃআণবিক বল অপেক্ষা অণুসমূহের গতিশক্তি বেশি হয়, সে অবস্থাকে বলে পানির স্ফুটনাঙ্ক (100°C)। অর্থাৎ পানির অণুসমূহ বাষ্পীভূত হওয়ার জন্য গতিশক্তি বেশি হওয়া দরকার। এজন্য অধিক তাপশক্তির প্রয়োজন হয়। তাই পানির স্ফুটনাঙ্ক গলনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি, অর্থাৎ ভিন্ন হয়।

৩৩। স্ফুটনের আপেক্ষিক সুপ্ততাপ ব্যাখ্যা কর।

কোনো তরল পদার্থের এক একক ভরকে তার স্ফুটনাঙ্কে বাষ্পে পরিণত করতে যে পরিমাণ তাপশক্তি প্রয়োজন, তাকেই বলে বাষ্পীভবনের আপেক্ষিক সুপ্ততাপ। এই তাপশক্তি শুধুমাত্র পদার্থের অবস্থা পরিবর্তন করে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে না। উদাহরণস্বরূপ, পানির স্ফুটনের আপেক্ষিক সুপ্ততাপের মান প্রায় 2260 জুল/গ্রাম।

৩৪। তাপ প্রদান না করা সত্ত্বেও বরফ গলে পানি হয় কেন?

বরফের গলনাঙ্ক হলো 0 °C অর্থাৎ 0 °C তাপমাত্রায় বা এর উপরের তাপমাত্রায় বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়। কিন্তু পরিবেশের তাপমাত্রা ০ °C অপেক্ষা বেশি। তাই তাপ প্রদান না করলেও বরফ পরিবেশ হতে তাপ শোষণ করে। এ কারণে তাপ প্রদান না করলেও বরফ গলে পানি হয়।

৩৫। কঠিন আয়োডিন কী ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ? ব্যাখ্যা কর।

জানা আছে, ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থগুলোকে তাপ দিলে তা তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। যেহেতু I₂ একটি ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ, সেহেতু কঠিন Ⅰ2, কে তাপ দিলে তা তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি I2 এর বাষ্পে পরিণত হয়। অর্থাৎ I₂ কে তরল অবস্থায় পাওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ, কঠিন I2, একটি ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ।

৩৬। ন্যাপথলিন একটি ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ- ব্যাখ্যা কর।

জানা আছে, যেসব কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি গ্যাসে পরিণত হয় তাদেরকে বলে উর্ধ্বপাতিত পদার্থ। C10H8 (ন্যাপথলিন) ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ। কারণ কঠিন ন্যাপথলিনকে তাপ দিলে তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি গ্যাসে পরিণত হয়।

৩৭। I2 এর তরল দশা অনুপস্থিত- ব্যাখ্যা কর

I2কে তরল অবস্থায় পাওয়া সম্ভব না। জানা আছে, ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থগুলোকে তাপ দিলে তা তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। যেহেতু I₂ একটি ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ, সেহেতু কঠিন I2 কে তাপ দিলে তা তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি I₂ এর বাষ্পে পরিণত হয়। অর্থাৎ I₂ কে তরল অবস্থায় পাওয়া সম্ভব নয়।.