আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট রচনা | আমার প্রিয় খেলা রচনা | আমার প্রিয় খেলা রচনা সহজ

সাম্প্রতিককালের জনপ্রিয় খেলা - ক্রিকেট

ভূমিকা:

বর্তমান ক্রীড়া জগতে ক্রিকেট একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা । অথচ এ খেলা এক সময় কেবল ইংল্যাণ্ড , অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যা ইত্যাদি দেশের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং এ সব দেশ এ খেলায় শীর্ষস্থানীয় ছিল । বর্তমানে সারা বিশ্বে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । আমাদের দেশে ইদানিং ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়েছে এবং এ খেলার প্রতি বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে । বিশেষতঃ তরুণদের মধ্যে এটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে ।

খেলার মাঠ ও সামগ্রী:

ক্রিকেট খেলার জন্য একটি সমতল মাঠের প্রয়ােজন হয় । মাঠের মাঝখানে একটি লম্বা জায়গা বিশেষভাবে তৈরি করা হয় , যাকে পিচ ' বলে । পিচের একদিকের উইকেট থেকে আর একদিকের উইকেটের দূরুত্ব সাধারণতঃ দৈর্ঘ্যে ২২ গজ এবং প্রস্থে ১০ ফুট হয় এবং মাটি থেকে স্টাম্পের উচ্চতা ২২ ইঞ্চি হয় । খেলোয়াড়দের বয়সভেদে পিচ - এর আয়তন ছােট - বড় হতে পারে । পিচের দুই প্রান্তে একই মাপের তিনটি করে ছয়টি কাঠের খুঁটি আলতােভাবে মাটিতে সমান্তরালভাবে পোতা থাকে । এ তিনটি খুঁটি বা স্টাম্পের একত্রিত নাম হচ্ছে উইকেট । এদের মাথায় দুটি করে আলগা বেল ( কাঠের ছােট দন্ড বিশেষ ) বসানাে থাকে , যা সামান্য আঘাতে পড়ে যেতে পারে ।

খেলার নিয়ম:

ক্রিকেট খেলার জন্য প্রতি দলে ১১ জন খেলােয়াড় থাকে । প্রত্যেক দলে একজন ক্যাপ্টেন বা অধিনায়ক থাকে , যার নেতৃত্বে খেলা পরিচালিত হয় । আবার প্রতিটি দলে ৪/৫ জন অতিরিক্ত খেলােয়াড় থাকে যাদেরকে প্রয়ােজনবােধে ১১ জন খেলােয়াড়ের মধ্যে , বদলী করা যেতে পারে । টস বা লটারীর মধ্য দিয়ে কোন পক্ষ আগে ব্যাটিং বা ফ্রিল্ডিং করবে , তা স্থির করা হয় । এরপর খেলা শুরু হয় । এ খেলা পরিচালনার জন্য দু'জন অ্যাম্পায়ার বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী থাকে । এ ছাড়াও অনেক সময় কোন জটিল বা অস্পষ্ট বিষয়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের জন্য ভিডিও ক্যামেরার সাহায্য নেয়া হয় । ক্রিকেট খেলায় দু'টি সাইড থাকে । একটি ব্যাটিং সাইড এবং অপরটি ফিল্ডিং সাইড । ফিল্ডিং সাইডে পিচকে ঘিরে এক পক্ষের খেলােয়াড়রা মাঠের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে । প্রতিপক্ষের দু'জন খেলােয়াড় ব্যাট হাতে দু'দিকে দুই উইকেটে অবস্থান গ্রহণ করে । এক পক্ষের বােলার বা বল নিক্ষেপকারী অপর পক্ষের উইকেট লক্ষ্য করে বিশেষ কায়দায় বল সজোরে ছুঁড়ে মারে এবং বিপক্ষের ব্যাটসম্যান উইকেট রক্ষা করে সুযােগ মত ব্যাট দিয়ে সজোরে বলকে আঘাত করে দূরে পাঠানাের চেষ্টা করে । বিপক্ষের ফিল্ডিং - এ যারা থাকে , তারা নিক্ষিপ্ত বলকে ধরার চেষ্টা করে । আবার বােলারের নিক্ষিপ্ত বল ধরার জন্য উইকেটের ঠিক পশ্চাতে গ্লোব হাতে বিপক্ষ দলের একজন খেলােয়াড় থাকে , তাকে উইকেট কিপার বা উইকেট রক্ষক বলে ।

খেলার বিবরণ:

এ খেলায় এক পক্ষের ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে বিপক্ষের বল হতে উইকেট রক্ষার চেষ্টা করে , অপর দিকে বিপক্ষের বােলার বল ছুঁড়ে উইকেট পতনের চেষ্টা চালায় । প্রতিপক্ষের বােলার মােট ছয়বার উইকেট লক্ষ্য করে বল ছুঁড়তে পারে । বােলারের ছয় বলে এক ওভার হয় । সাধারণত ৫০ ওভারে খেলা হয় । তবে বিশেষ কারণে উভয় দলের সম্মতিতে ওভার কমেও খেলা হতে পারে , অর্থাৎ ৪৮ , ৪০ , ৩৮ , ৩৬ ওভারেও খেলা হতে পারে । বােলারের নিক্ষিপ্ত বল উইকেটে লাগলে এবং বেল পড়ে গেলে সেই ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায় অর্থাৎ সে আর খেলতে পারে না । আবার ব্যাটসম্যানের আঘাতে শূন্যে উড়ে যাওয়া বলটি মাঠে অবস্থানকারী ফিল্ডারগণের কেউ শূন্য হতে ধরে ফেললেও ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায় । এ ছাড়া ব্যাটসম্যানরা এক উইকেট থেকে আর এক উইকেটে দৌড়াদৌড়ি করে রান তােলার সময় যদি তাদের মাঝপথে ফিল্ডারগণের কেউ যদি বল উইকেটে মেরে তার পতন ঘটায় তাহলেও ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায় । এভাবে এক পক্ষের সকল ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলে বা খেলার নির্ধারিত ওভার শেষ হয়ে গেলে প্রথম পক্ষের খেলা শেষ হয় এবং দ্বিতীয় পক্ষের খেলা শুরু হয় ।

রান নির্ধারণ পদ্ধতি:

ব্যাটসম্যানের ব্যাটের আঘাতে বােলারের নিক্ষিপ্ত বলটি দূরে চলে গেলে সেখান থেকে উইকেটে পুনরায় ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত এক দলের ব্যাটসম্যানরা যতবার স্থান বদল করে অর্থাৎ এক স্টাম্প থেকে আর এক স্টাম্প পর্যন্ত যতবার দৌড়াদৌড়ি করে ততটি রান সেই দলের পক্ষে যােগ হয় । ব্যাটসম্যানের আঘাতে বলটি যদি মাটিতে গড়িয়ে নির্দিষ্ট সীমার বাইরে যায় তবে ৪ রান যােগ হয় , ( এটাকে চারের মার বলা হয় । ) আর যদি বলটি শূন্যে নির্দিষ্ট সীমার বাইরে চলে যায় তবে ৬ রান বা ছক্কা ধরা হয় । এভাবে যে দল উইকেট রক্ষা করে যত বেশী রান সংগ্রহ করতে পারে , সেই দল জয়ী হয় ।

ক্রিকেটে বাংলাদেশের স্থান:

ক্রিকেটের জগতে বাংলাদেশ এখনও শিশু । ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ আই , সি , সি , টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব লাভ করে ১৯৯৯ সালে ইংল্যাণ্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যােগ্যতা অর্জন করেছে । বাংলাদেশ জাতীয় দল ছাড়াও বাংলাদেশ যুব ক্রিকেট দল নামের আর একটি ক্রিকেট দলও দেশের বাইরের বিভিন্ন স্থানে খেলে বেশ সুনাম অর্জন করেছে ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বযুব কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্লেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে । তবে এ খেলায় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হতে গেলে খেলােয়াড়দেরকে আরাে কঠোর অনুশীলন ও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ।

উপসংহার:

ক্রিকেট ইদানিং নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা । বলা যায় , ফুটবলের চেয়েও এটি বর্তমানে অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । আশা করা যায় , এ খেলায় বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক মান পর্যায়ে যেতে সক্ষম হবে এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এদেশের খেলােয়াড়রা ভাল খেলে দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করবে ।