আমার বাবা রচনা

আমার বাবা

ভুমিকা:

আমার জীবনের সবচেয়ে আপন এবং আদর্শ মানুষটি হলেন আমার বাবা। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতার কথা কখনোই শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তিনি শুধু একজন পিতা নন, তিনি আমার জীবনের পথপ্রদর্শক, প্রেরণা এবং সবচেয়ে বড় আশ্রয়। 

বাবার ব্যক্তিত্ব:

আমার বাবা অত্যন্ত সৎ, দায়িত্বশীল এবং ধৈর্যশীল একজন মানুষ। তাঁর ব্যক্তিত্বে রয়েছে দৃঢ়তা এবং মমত্ববোধের মিশ্রণ। তিনি কখনো রাগ করেন না, বরং ধৈর্যের সাথে সবকিছু মোকাবিলা করেন। তাঁর সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়, তিনি কতটা জ্ঞানী এবং বিচক্ষণ। আমার বাবা সবসময় ন্যায়পরায়ণ এবং সঠিক পথে চলার পরামর্শ দেন। আমি তাঁর কাছ থেকে শিখেছি, জীবনে কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করা উচিত নয়। তাঁর হাসিমুখ এবং সদা প্রফুল্ল মনের কারণে সবাই তাঁকে খুব ভালোবাসেন। প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজনের যেকোনো সমস্যায় তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁর এই উদার এবং সেবামূলক মনোভাব আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করে।

বাবার কাজ এবং পরিশ্রম:

আমার বাবা একজন কর্মঠ মানুষ। তিনি প্রতিদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করেন। বাবার পেশা সম্পর্কে বলতে গেলে, তিনি একজন শিক্ষক। তিনি গ্রামের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং তাঁর কাজকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেন। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে তিনি আমাদের পরিবারের দেখভাল করেন এবং নিশ্চিত করেন যেন আমরা সকলে ঠিকমতো খাই এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকে।

শিক্ষক হিসেবে তিনি তাঁর ছাত্রদের অত্যন্ত স্নেহ এবং যত্নের সাথে শিক্ষা দেন। তিনি বিশ্বাস করেন, শিক্ষা মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। স্কুল থেকে ফিরে এসে তিনি আমাদের পড়াশোনার দিকে নজর দেন এবং সাহায্য করেন। বাবার সাথে বসে পড়াশোনা করার সময়টি আমার খুব প্রিয়, কারণ তিনি সবকিছু খুব সহজভাবে বোঝাতে পারেন।

বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক:

বাবা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধু। আমি যেকোনো সমস্যায় পড়লে প্রথমে তাঁর কাছে যাই। তিনি আমাকে সবসময় মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং আমার সমস্যার সমাধান দেন। যখন আমি কোনো ভুল করি, বাবা কখনো আমাকে ধমক দেন না বরং তিনি বুঝিয়ে বলেন কেন আমি ভুল করেছি এবং কীভাবে তা ঠিক করতে পারি। বাবার সাথে আমার এই সম্পর্ক আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। আমার বাবা সবসময় আমাকে ভালো কাজ করতে এবং পরিশ্রমী হতে শিখিয়েছেন। তিনি বলেন, জীবনে সফল হতে হলে পরিশ্রম ও ধৈর্য্যের কোনো বিকল্প নেই। আমি বাবার এই শিক্ষাগুলি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এবং সেগুলি অনুসরণ করার চেষ্টা করি।

বাবার অনুপ্রেরণা এবং শিক্ষা:

আমার বাবা শুধু শারীরিক কাজই করেন না, তিনি আমাকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মানসিক শক্তি জোগান। যখনই আমি কোনো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই বা হতাশ বোধ করি, বাবা তখন আমাকে সাহস দেন। তিনি বলেন, "জীবনে সব সময় সাফল্য আসবে না, কিন্তু প্রত্যেকটি ব্যর্থতা তোমাকে নতুন কিছু শেখাবে।" তাঁর এই কথাগুলি আমাকে অনেক কষ্টের মুহূর্তে শক্তি দিয়েছে।বাবা সবসময় নৈতিক শিক্ষা এবং মানবিক মূল্যবোধের উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, "মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও এবং ন্যায়ের পথে চলো, তাহলেই জীবনে সাফল্য আসবে।" বাবার এই উপদেশগুলি আমার জীবনকে একটি নির্দিষ্ট পথে চালিত করেছে এবং আমি সবসময় তাঁর এই কথাগুলি মনে রাখি।

আমার জীবনে বাবার অবদান:

আমার বাবা আমার জীবনের প্রতিটি সাফল্যের পেছনে একটি অদৃশ্য শক্তি। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ত্যাগের ফলে আজ আমি একটি সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে পারছি। তিনি সবসময় আমাদের পরিবারের চাহিদাগুলিকে তাঁর ব্যক্তিগত চাহিদার উপরে রাখেন। তিনি নিজের আরামের কথা ভাবেন না, বরং সবসময় আমাদের মঙ্গলকামী হন। বাবা আমাদের পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সবসময় সহায়তা করে যাচ্ছেন। তাঁর পরিশ্রমের ফলেই আমরা ভালোভাবে শিক্ষিত হতে পারছি এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনগুলি পূরণ হচ্ছে। তিনি কখনো নিজের জন্য কিছু কিনেন না, বরং আমাদের জন্য সাধ্যমতো সবকিছু করতে চান।

বাবার সঙ্গে কাটানো স্মৃতি:

আমার বাবার সাথে কাটানো অনেক সুন্দর স্মৃতি রয়েছে। আমি ছোটবেলায় বাবার সাথে বাগানে গিয়ে গাছের পরিচর্যা করতাম। বাবা আমাকে গাছের বিভিন্ন প্রজাতি চিনিয়েছিলেন এবং শিখিয়েছিলেন কীভাবে গাছের যত্ন নিতে হয়। এই স্মৃতিগুলি আজও আমাকে মুগ্ধ করে। বাবা ছুটির দিনে আমাদের সবাইকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান। তখন আমরা খুব আনন্দ করি। বাবার সঙ্গেই আমার প্রথম সমুদ্র ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সে দিনটি আমি কখনো ভুলতে পারব না।

উপসংহার:

আমার বাবা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা এবং আদর্শ। তিনি একজন সুশৃঙ্খল, সৎ এবং পরিশ্রমী মানুষ, যিনি শুধু আমাদের পরিবারের নয়, সমাজের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত। বাবার কাছ থেকে আমি যে নৈতিক শিক্ষা পেয়েছি, তা আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। আমি সবসময় চেষ্টা করি বাবার দেখানো পথে চলতে এবং তাঁর শিক্ষাগুলি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে। তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা কখনোই কমবে না। আমি আশীর্বাদ করি, তিনি যেন সুস্থ ও সুখী থাকেন এবং আমাদের জীবনে এমনভাবেই আলোকিত হয়ে থাকেন।