রচনা বঙ্গবন্ধুর জীবনী | শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী | Bangabandhu Jivani | বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা

বঙ্গবন্ধুর জীবনী

রচনা বঙ্গবন্ধুর জীবনী | শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী | Bangabandhu Jivani | বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা

ভূমিকা :

বাংলার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অনবদ্য নাম। তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নেতা এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতাদের অন্যতম। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতা আজীবন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার চেষ্টা করে গেছেন। তাই তো কবিকণ্ঠে উচ্চারিত হয়

"যতদিন রবে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-গৌরী বহমান,
ততদিন রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান।

জন্ম ও শিক্ষা:

১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় এক মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই তিনি মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৭ সালে শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ বিদায়ের পর শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আইন বিভাগে ভর্তি হন।

রাজনীতিতে দীক্ষা লাভ :

ছাত্র জীবনেই তার রাজনীতিতে হাতে খড়ি ঘটে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন সময়ে প্রথম জেলে যান। পাকিস্তান আন্দোলনের সময় তিনি মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের নেতা হিসেবে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি বাংলার গৌরব ও গর্ব নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখের সহচর্যে এসেছিলেন।

সংগ্রামী জীবন:

শেখ মুজিব তদানীন্তন আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান করেন এ সময়ে তিনি মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। দেশের আপামর জনসাধারণের ন্যায্য দাবি আদায় করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার কারাবদ্ধ হয়েছেন। যুবক বয়সে তিনি একবার মন্ত্রী হয়েছিলেন কিন্তু দলকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তখন জাতীয় মুক্তি ও স্বায়ত্তশাসনের জন্য ছয় দফা দাবির কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা :

পাকিস্তানের সামরিক ডিক্টেটর বাঙালির গণতান্ত্রিক চেতনাকে নওশাদ ও বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করে। এই মামলায় ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলা হিসেবে অভিহিত হয় ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ব বাংলার অবস্থান ঘটলে ষড়যন্ত্রকারীরা শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

১৯৭০ এর নির্বাচন ও ১৯৭১ এর স্বাধীনতা ঘোষণা :

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে বিজয়ী হয়ে নিরঙ্কুসংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিমা কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগের সরকার গঠন করতে না দিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে এবং ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের কালোরাতে শুরু হয় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার একটি ঘোষণাপত্র চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান চৌধুরীর কাছে পাঠান। এই ঘোষণাপত্রেই ২৬ শে মার্চ হান্নান চৌধুরী চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু:

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল ও দেশের আপামর জনগণের সহযোগিতায় গড়ে ওঠে মুক্তিবাহিনী। গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয় । শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে থেকে মুক্তি ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং যুদ্ধস্থ বাংলাদেশের হাল ধরেন শক্ত হাতে। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির জনক হিসেবে বাংলাদেশ ও বিশ্বে লাভ করেন ব্যাপক পরিচিতি।

উপসংহার:

শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ভাগ্যাহত বাঙালি জাতির মুক্তির অকুতোভয় অগ্রদূত। তাঁর বলিষ্ঠ ও সাহসী নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আর তাইতো বলা যায়, ব্যক্তি মুজিবের মৃত্যু হলেও মুজিবাদর্শের মৃত্যু নেই।