প্রবন্ধ রচনা: ডিজিটাল বাংলাদেশ | দিন বদলের পালায় বাংলাদেশ রচনা

ডিজিটাল বাংলাদেশ

এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:
👉🏻দিন বদলের পালায় বাংলাদেশ

ভূমিকা :

পৃথিবীর মানচিত্রে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট , সবুজ ভূমি বাংলাদেশ । জন্ম ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ । দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম আর ত্রিশ লক্ষ শহিদের আত্মদানের ফসল এই বাংলাদেশ । এদেশের ইতিহাস এক অর্থে শিকল ভাঙ্গার ইতিহাস । বস্তৃত হাজার বছর ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকার আদায়ে এদেশের মানুষ কঠোর সংগ্রাম করে আসছে । তথাপি এদেশের আশানুরূপ অগ্রগতি সাধিত হয় নি । এর পেছনে বাধা হয়ে আছে আমাদের আলস্য , কাজের চেয়ে বেশি কথা বলার প্রবণতা এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অগ্রসর না হওয়া ইত্যাদি । এ অনগ্রসরতা উত্তরণে দেশের কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা সৃষ্টিতে ডিজিটাল পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে । বাংলাদেশের সকল কর্মকাণ্ডের সাথে ক্রমান্বয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার সংযুক্তি হলেই গড়ে উঠবে ডিজিটাল বাংলাদেশ ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ কী :

বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে । এই ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে বুঝায় সারাদেশের কর্মকাণ্ডকে আধুনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা । এভাবে সরকারি অফিস - আদালত , বেসরকারি প্রতিষ্ঠান , স্কুল - কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয় , রাজপথ ও হাইওয়ে রোডগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি টিভি ক্যামেরা বসিয়ে কম্পিউটারের ইন্টারনেট সিস্টেমে বাংলাদেশের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা যায় । অর্থাৎ সমগ্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড এবং বহির্বিশ্বকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জিত হবে , তাকেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে পারি ।

অফিস - আদালতে ডিজিটাল পদ্ধতি :

বাংলাদেশের অধিকাংশ অফিস - আদালতে দুর্নীতির কালো থাবা। অফিসগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় এনে এক স্থানে বসে প্রশাসনকে গতিশীল , কর্মমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব । বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে চালু করা হলে কেউ আর অফিস কর্মকাণ্ডে ফাঁকি দিতে পারবে না এবং ঘুষ - দুর্নীতির আশ্রয় নিতে সাহস পাবে না । তখনই সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং গড়ে উঠবে ডিজিটাল বাংলাদেশ ।

নিরাপত্তা বিধানে ডিজিটাল পদ্ধতি :

যে জাতির কোনো নিরাপত্তা নেই সে জাতি কখনই উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে না । বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য । এক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ইন্টারনেটের সাথে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সংযোগ সাধন করে নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব । কেননা , দুষ্কৃতিকারীরা কোনো অঘটন ঘটিয়ে সাময়িকভাবে পালিয়ে গেলেও পরবর্তীতে ক্যামেরার মাধ্যমে ধরা পড়বে । এর জন্য তাদেরকে যদি উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয় , তবে অন্যরাও এ কাজ থেকে দূরে সরিয়ে যাবে । নিশ্চিত হবে জাতির নিরাপত্তা । আর জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই ত্বরান্বিত হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ ।

অনলাইন তথ্যকেন্দ্র স্থাপনে ডিজিটাল পদ্ধতি :

অনলাইন তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি - বেসরকারি তথ্যসেবা জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব । এসব তথ্যকেন্দ্র থেকে যে কেউ বিভিন্ন ডাটা বা তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে । জানতে পারবে সর্বশেষ প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা । বর্তমানে নির্বাচন কমিশন এদেশের প্রতিটি উপজেলায় সার্ভার স্টেশন চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে । এ সার্ভার স্টেশন চালু হলে ভোটাররা তাদের নিজ উপজেলায় বসে নতুন ভোটার হওয়া , ভুল সংশোধন এবং পরিবর্তনসহ যাবতীয় তথ্য আপডেট করতে পারবে । এভাবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন গতিশীল হবে ।

শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি :

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকের লেকচার বা বক্তব্য ভিডিও করে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেওয়ালে সাদা পর্দায় তা প্রদর্শন করা যায় । এটি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের অত্যন্ত সহজ পদ্ধতি । দৈবক্রমে কোনো শিক্ষকের কোনো সমস্যা দেখা দিলে এ পদ্ধতিতে সহজে কাজ সম্পন্ন হতে পারে । ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে এ পদ্ধতিতে ঘরে বসেও শিক্ষা গ্রহণ করা যায় । প্রয়োজনীয় নিজস্ব বই না থাকলেও ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট থেকে খুঁজে নিয়ে তা পড়ে ফেলা যায় । এভাবে ডিজিটাল পদ্ধতি শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষ বয়ে আনতে পারে ।

চিকিৎসাক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি :

চিকিৎসাক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞান এক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে । বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রমে একদিকে যেমন আবিষ্কৃত হয়েছে নানা জটিল রোগের ঔষধ , তেমনি চিকিৎসা পদ্ধতিও ক্রমে ক্রমে সহজতর হয়ে আসছে । তাই বাংলাদেশে ব্যাপক হারে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত হলে ডাক্তারের কাছে সরাসরি উপস্থিত না হয়েও চিকিৎসা সেবা পাওয়া যেতে পারে । এক্ষেত্রে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করে ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করা যায় । যেকোনো ধরনের শারীরিক সমস্যায় ঘরে বসে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে । এ উদ্যোগটি সরকারি পর্যায়ে সর্বজনীন হয়ে উঠলে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে ।

কৃষিক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি :

বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে । বিজ্ঞানের কল্যাণে উদ্ভাবিত হয়েছে উন্নত জাতের বীজ , পরিবেশ বান্ধব সার ও উচ্চফলনশীল প্রজাতির শস্য । অনাবৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাও আবিষ্কৃত হয়েছে । কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক নিরক্ষর হওয়ার কারণে এ সবকিছুর সফল ও কার্যকর ব্যবহার করতে পারছে না । তাই কৃষকদের যথার্থ প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত করে তুলতে পারলে ইন্টারনেটের সাহায্যে ওয়েবসাইট থেকে এ সংক্রান্ত বিষয়াদি জেনে নিয়ে তা কাজে লাগাতে পারে । এক্ষেত্রেও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে উঠতে পারে ।

যোগাযোগের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি :

যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল না হলে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে । বর্তমান কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে ইন্টারনেটের বদৌলতে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । যেমন- আকাশপথ এখন কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে । বিভিন্ন গ্রহে রকেট উৎক্ষেপণ করা হলে এক্ষেত্রে যোগাযোগ থাকছে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে । এছাড়াও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সমুদ্রপথ । মুহূর্তের মধ্যে এক দেশের সাথে অন্য দেশের যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে । এ ব্যবস্থার মাধ্যমে সারাদেশকে হাতের মুঠোয় দেখা যাচ্ছে যা ডিজিটাল বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে ।

ক্রয় - বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি :

বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কেনার জন্য প্রতিদিনই আমাদের শপিংমলে যেতে হয় । কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বিস্তার ঘটানো সম্ভব হলে ঘরে বসেই ক্রয় - বিক্রয় করা যাবে পরিসরে বাংলাদেশে তা হচ্ছে । প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পছন্দ করা , দাম করা এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করে দ্রব্যসামগ্রী ঘরে বসেই পাওয়া সম্ভব । শুধু দেশেই নয় , বিদেশের সাথেও এটি কার্যকর হতে পারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ।

প্রকাশনা ও সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে:

বাংলাদেশে প্রকাশনার ক্ষেত্রে অনেক আগেই কম্পিউটার সিস্টেম চালু হয়েছে । আগে যে বইটি ছেপে বের হতে দীর্ঘ সময় লাগত , বর্তমানে তা অল্প দিনেই সম্ভব । সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে কম্পিউটার এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি সংবাদপত্র একই সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে । তাই এখন আর ঢাকা থেকে যানবাহনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম , খুলনা , রাজশাহী বা সিলেটে পত্রিকা পাঠাতে হচ্ছে না । আবার বিদেশি পত্রিকাও আমরা পড়তে পারছি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ।

ব্যাংকিং ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি :

কম্পিউটার সিস্টেম ব্যাংক ব্যবস্থাকে গতিশীল করে তুলেছে । বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে চালু হয়েছে অনলাইন সিস্টেম । এখন আর ঢাকা থেকে সিলেট বা দূর - দূরান্তের কোনো জেলায় নগদ টাকা বহন করে নিয়ে যেতে হয় না । কম্পিউটারের সাহায্যে অনলাইন ব্যাংক ব্যবস্থায় স্থানীয়ভাবে তা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সমাধান করা যায় । আবার একজনের হিসাব থেকে আরেকজনের হিসাবে মুহূর্তের মধ্যে টাকা প্রেরণ করা যায় । তাই সকল ব্যাংকে এ ব্যবস্থা চালু হলে গড়ে উঠবে ডিজিটাল বাংলাদেশ ।

বিনোদনের ক্ষেত্রে:

বাংলাদেশে বিনোদনের ক্ষেত্রে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । গেমস খেলা , সিনেমা দেখা ইত্যাদি থেকে শুরু করে নানা ধরনের আনন্দ উপভোগ করা যাচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে । ইন্টারনেটের সাহায্যে অন্য কোনো দেশে চলমান খেলার ফলাফল মুহূর্তের মধ্যেই জানা যাচ্ছে । এটিও ডিজিটাল বাংলাদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সংস্করণ ।

উপসংহার :

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ । দেশটিকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হলে সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে হবে । আর উন্নয়ন ঘটাতে হলে কাজের মধ্যদিয়েই দেশকে ভালোবাসতে হবে । পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে । প্রশাসনকে করে তুলতে হবে কার্যকর ও গতিশীল । তথ্যপ্রযুক্তিতে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হতে হবে । তবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন - সাধ পূরণ করা সম্ভব হবে।