তোমার নিজ গ্রাম | প্রবন্ধ রচনা

তোমার নিজ গ্রাম

ভুমিকা:

গ্রাম হল আমাদের শিকড়, যেখানে প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য, সরলতা ও শান্তি একসঙ্গে মিলেমিশে থাকে। গ্রামের পরিবেশ, মানুষের আন্তরিকতা ও সহজ-সরল জীবনযাপন আমাদের মনকে আকৃষ্ট করে। আমার নিজের গ্রাম এই সুন্দরতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ, যা আমার হৃদয়ের বিশেষ একটি জায়গা দখল করে রেখেছে। সবুজ শস্যক্ষেত্র, খাল-বিল, পাখির গান, এবং গ্রামের নির্ঝঞ্ঝাট জীবন আমাকে প্রতিনিয়ত শিকড়ের প্রতি আকর্ষণ করে। এই প্রবন্ধে আমি আমার নিজ গ্রামের সৌন্দর্য, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার বিস্তারিত বিবরণ দেব।

অবস্থান :

আমাদের গ্রামের নাম নজিপুর । গ্রামটি নওগাঁ শহর হতে প্রায় বার কিলোমিটার উত্তর - পশ্চিমে অবস্থিত । গ্রামটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ২ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ১ কিলোমিটারের কিছু বেশী । গ্রামের সম্মুখ দিয়ে একটি পাকা রাস্তা নওগাঁ শহরের দিকে চলে গিয়েছে । এটাই শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম । এর অনতিদূর দিয়ে তুলসী গঙ্গা (বর্তমানে আত্রাই) নদী প্রবাহিত হয়েছে ।

ঘরবাড়ী :

আমাদের গ্রামের অধিকাংশ লোক দরিদ্র অবস্থাপন্ন ২৪/২৫ পর জোতদার আছে । অবস্থাপন্ন লোকেরা টিনের ছাউনি ও ইটের তৈরী বাড়ীতে বাস করে । গরীব লোকেরা খড়ের ছাউনি দেয়া ছোট ছোট ঘরে বাস করে । পূর্বে আমাদের গ্রামে একজন জমিদার ছিলেন । তাঁর ভগ্নপ্রায় বাড়ীটি এখনও বিদ্যমান আছে ।

অধিবাসী :

আমাদের গ্রামে প্রায় তিন হাজার লোক বাস করে । অধিবাসীদের অধিকাংশ মুসলমান । কিছু সংখ্যক হিন্দুও এখানে বাস করে । হিন্দু - মুসলমানেরা পরস্পর মিলে - মিশে সরলভাবে জীবন যাপন করে । উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর প্রীতির ভাব রয়েছে । তবু মাঝে মধ্যে যে ছোট - খাট কলহ - বিবাদ ঘটে , তা গ্রামের মাতব্বরগণ মিটিয়ে দেন ।

জীবিকা :

আমাদের গ্রামের বেশীরভাগ লোক কৃষিকাজ দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে । যাদের জমিজমা নেই , তারা অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজ করে অতিকষ্টে দিন যাপন করে । আবার কেউ কেউ অন্যের জমি বর্গা চাষ করেও জীবিকা নির্বাহ করে । যাঁরা শিক্ষিত , তাঁরা বিভিন্ন অফিস - আদালতে চাকরী করেন , আবার কেউ কেউ শিক্ষকতাও করেন । আমাদের গ্রামে কয়েকজন বড় বড় ব্যবসায়ী আছেন । তাঁরা শহর হতে বিভিন্ন প্রকার মালপত্র এনে হাটে - বাজারে বিক্রি করেন । এদের মধ্যে কারো কারো আবার শহরে স্থায়ী দোকান আছে।

উৎপন্ন দ্রব্য :

আমাদের গ্রামে ধান , পাট , আলু , কুমড়া ও বিভিন্ন প্রকার শাকসব্জি উৎপন্ন হয় । এছাড়া , গ্রামের কয়েকটি বড় বড় পুকুর ও দীঘি আছে । এ সব পুকুর ও দীঘিতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় । পার্শ্ববর্তী নদী হতেও লোকজন মাছ ধরে খায় ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানাদি :

আমাদের গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় , একটি হাইস্কুল, একটি কলেজ ও একটি নৈশ মক্তব আছে । নৈশ মক্তবে বয়স্করা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন । এগুলো ছাড়াও গ্রামে একটি ক্লাব ঘর ও পাঠাগার আছে । সেখানে বিভিন্ন প্রকার খেলাধূলার সাজ - সরঞ্জাম ও বই - পুস্তক রয়েছে । বর্তমানে শিক্ষাদীক্ষার দিক দিয়ে গ্রামটি বিশেষ উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে । গ্রামের দক্ষিণ পাশে একটি ময়দান আছে । সেখানে সপ্তাহে দু'দিন বিরাট হাট বসে । দূরদূরান্তর হতে লোকজন উক্ত হাটে জিনিস - পত্র ক্রয় - বিক্রয়ের জন্য আসে । গ্রামবাসিরাও তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি হাট হতে সংগ্রহ করে ।

প্রাকৃতিক শোভা :

গ্রামবাংলার আর দশটা গ্রামের ন্যায় আমাদের গ্রামেও বাঁশ , বৃক্ষ , ঝোপঝাড় , ঝাউ - জঙ্গল আছে । দূর হতে দেখলে মনে হয় , এগুলো যেন গোটা গ্রামকে ঢেকে রেখেছে । তাছাড়া , গ্রামের চারদিকে সবুজ বিস্তীর্ণ মাঠ , শ্যামল শস্যক্ষেত্র , ছায়াশীতল আঁকাবাঁকা পথ , কলমীঢাকা দীঘি , পাখীর গানে মুখরিত আম , জাম , কাঁঠাল বাগান , বর্ষাকালে ব্যাঙের ডাক , ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা শব্দ সত্যই মনকে আকুল করে তোলে ।

উপসংহার :

এ গ্রামে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং বড় হয়েছি । মানুষ মাত্রই জন্মস্থানের প্রতি একটা স্বাভাবিক টান থাকে । তাই আমাদের গ্রামে বর্তমান সভ্যতার প্রাচুর্য না থাকলেও আমি আমার গ্রামকে একান্ত আপন ভাবি এবং মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসি ।