প্রতিবেদন: শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা করো

প্রতিবেদন: শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকত

আলোচ্য বিষয়:
👉🏻শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন রচনা করো ।
প্রতিবেদন: শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা করো

শিরোনাম : শিশুশ্রম বন্ধ করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : আধুনিককালে শ্রমের যত গুরুত্বই স্বীকৃত হোক শিশুশ্রম কিন্তু কারোরই কাম্য নয় । প্রকৃতপক্ষে শিশুশ্রম অনাকাঙ্ক্ষিত ও অমানবিক । শিশুশ্রম একটি অভিশাপ । যদিও বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শিশুশ্রমের অবস্থা ভয়াবহ । বিশেষ করে বাংলাদেশে শিশুশ্রম মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে নানা আর্থ - সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ।

অতিশয় নাজুক ও অসহায় অবস্থায় মানুষ মাতৃজঠর থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয় । জন্মের পর আঠারো বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনে শিশু বয়স হিসেবে স্বীকৃত । অর্থাৎ আঠারো বছর পূর্ণ হলে একজন মানুষকে পূর্ণ , পরিণত ও শ্রমশীল বলে গৃহীত হবে । আর আঠারো বছরের কম বয়সী যেকোনো মানুষ কর্তৃক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোনো কাজ করাকে শিশুশ্রম বলা হয় । বাংলাদেশ সরকারের কারখানা ও শ্রম আইন , আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ( আইএফও ) ও জাতিসংঘ শিশু তহবিল ( ইউনিসেফ ) -এর মতে আঠারো বছরের কম বয়সী লোকদের অর্থাৎ শিশুদের শ্রমে নিয়োগ নিষিদ্ধ । বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ত্রিশ ভাগের বয়স আঠারো বছরের মধ্যে । আর এ শিশুদের একটি বিরাট সংখ্যক অংশ বিভিন্ন রকম শ্রমে নিয়োজিত । বিভিন্ন জরিপে জানা যায় , বাংলাদেশে প্রায় ৮০ লাখ সার্বক্ষণিক বা খণ্ডকালীন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে । এসব শিশুর শ্রমের ধরন ও স্থান বিচিত্র ও অমানবিক ।

গ্রামের শিশুরা কাজের সন্ধানে ও অধিক পারিশ্রমিকের আশায় ব্যাপক হারে শহরে ছুটে আসে । গ্রামাঞ্চলেই যারা কাজ খুঁজে নেয় তারা সাধারণত মাঠে - ঘাটে কৃষিকাজ , পশুপালন ও বিভিন্ন বৃত্তিমূলক পেশায় নিয়োজিত হয় । কেউ কেউ কুটির শিল্পে , ঘরবাড়িতে চাকর - বাকর হিসেবে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারখানায় কাজ করে । আবার অনেকেই রিকশা বা ঠেলাগাড়ি চালায় , আবার কেউ কেউ বাস বা টেম্পুর হেলপার হিসেবে কাজ করে ।

গ্রামের চেয়ে শহরে শিশুশ্রমের ক্ষেত্র ব্যাপক ও বিচিত্র । সারাদেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে কয়েক লক্ষ নারীশিশু কর্মে নিয়োজিত । বাসায় ঝি - চাকরের কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যাও কম নয় । বাস - টেম্পুর হেলপার , দোকানের বেচাকেনার সাহায্যকারী , হকার , অফিসের বয় - বেয়ারা এসব কাজে অসংখ্য শিশু নিয়োজিত । ওয়েল্ডিং কারখানা , গাড়ির গ্যারেজ , লৌহ ও ইস্পাত জাতীয় উৎপাদনমুখী কারখানা , মুদ্রণ ও বাঁধাই শিল্প বিভিন্ন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা অধিক হারে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে ।

যে বয়সে বই হাতে স্কুলে যাবার কথা , বাবা - মার আদরে সোহাগে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়ানোর কথা সে বয়সে শিশুরা শ্রমে নিযুক্ত হয় । এদের জীবনে কী যে গভীর দুঃখক্ষত তা আমাদের সুখপিয়াসী মনে কখনোই রেখাপাত করে না । আমরা চিন্তাও করি না কীভাবে শ্রমজীবী শিশুরা দিনাতিপাত করছে ।

বাড়িতে যে শিশু চাকর - বাকর প্রতিনিয়ত আমাদের জন্য নানারকম কাজ করে তার সামান্য চিত্তবিনোদন , পুষ্টিকর খাদ্য ও সহানুভূতির প্রতি কি আমরা নজর দেই ? অনেক সময় কোমলমতি শিশুদের ওপর চলে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন । এতে তাদের পঙ্গুত্ববরণসহ জীবনও হারাতে হয় । বাস ও টেম্পুর হেলপার এবং কারখানার মারাত্মক পরিবেশে যেসব শিশু কাজ করে তাদের শারীরিক আঘাত ও দুর্ঘটনার শিকার হবার আশংকা প্রবল । এসব শিশু শ্রমিকের শারীরিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং নানারূপ দুরারোগ্য ব্যাধিতে তারা আক্রান্ত হয় । গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে যে দীর্ঘ সময় শিশুরা একটানা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে তা রীতিমতো মানবতা পরিপন্থী ।

শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রধানত সরকারের । দেশে শিশুশ্রম বিরোধী আইনও আছে । আইএলও প্রণীত আইনসমূহ দেশের অভ্যস্তরে যথাযথ প্রয়োগে সরকারকে সদিচ্ছুক হতে হবে । সেই সাথে দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম , এতিম ও অসহায় শিশুদের পুনর্বাসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে । প্রতিটি শিশুর মৌলিক চাহিদা ও অধিকারের বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি এনজিওসহ সকল মহলকে আরও আন্তরিক হতে হবে । শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার । বাংলাদেশের শ্রমবাজারে শিশুশ্রম একটি বিরাট অংশ জুড়ে আছে । তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি প্রদর্শন করতে হবে । তবে হঠাৎ করে শিশুশ্রম বন্ধ বা নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয় । এর জন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে । সেই সাথে শ্রমজীবী শিশুদের সুস্থ স্বাভাবিকরূপে বেড়ে উঠার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে ।