প্রতিবেদন: দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে প্রতিবেদন লিখ

প্রতিবেদন: সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার

আলোচ্য বিষয়:
👉🏻সম্প্রতি দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকারের সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন রচনা কর ।
👉🏻সম্প্রতি দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনা করো ।

শিরোনাম : সম্প্রতি দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : সড়ক দুর্ঘটনার কোনো সময় পরিধি নেই , যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে এই অঘটন ঘটতে পারে । প্রতিনিয়ত অজস্র মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় । কেউ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে গাড়ি চাপা পড়ে , ধ্বংস হচ্ছে পরিবার , ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ । জীবনের নিশ্চয়তা ব্যাহত হচ্ছে প্রতি পদে । যে যুবক কর্মসংস্থানের সংস্থান করতে শহরমুখী হয় , সে ঘরে ফিরে লাশ হয়ে । যে কিশোর লেখাপড়া শিখে মানুষ হওয়ার জন্য শহরমুখী হয় , সেও আর গ্রামে ফিরে এলো না । কখনো পরিবারের প্রধান কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে আর ফিরে আসে না । আবার দুধের শিশুকে অসহায় করে দিয়ে মা চলে যায় পরপারে- এ সবই সড়ক দুর্ঘটনার অশুভ ঘটনাচক্র । যানবাহনগুলো যেন মৃত্যুর দূত হয়ে সারাক্ষণ বিচরণ করছে । যেকোনো সময় পরপারের ডাক নিয়ে আসতে পারে । যন্ত্রসভ্যতার শীর্ষ পর্যায়ে পৌছেও মানুষ সড়ক দুর্ঘটনার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছে । বাংলাদেশে নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে , যেমন—

১. আমাদের দেশের অধিকাংশ রাস্তাঘাট অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে । এগুলোর অধিকাংশ ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয় । অধিকাংশ রাস্তার পথচারী চলাচলের ফুটপাত নেই । শ্রেণি অনুযায়ী যানবাহনের জন্য রাস্তার বিভাজন রেখা নেই । তদুপরি মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করায় অহরহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে ।

২. আমাদের দেশে অধিকাংশ চালক ট্রাফিক আইন মেনে চলে না । তারা গতিসীমা , রোড সাইন এগুলোর কোনোটিরই তোয়াক্কা করে না । ফলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে ।

৩. আমাদের দেশে ট্রাফিক আইন আছে সত্য কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই বললেই চলে । এ আইনের প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির অভিযোগ সবার মুখে । ফলে আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে ।

৪. বাংলাদেশে অধিকাংশ চালকের প্রশিক্ষণ নেই । দুর্নীতির মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করে অনেকে রাতারাতি চালক হয়ে যায় । এদের হাতে যানবাহন ও যাত্রী উভয়েই ঝুঁকির মুখে পড়ে । তাছাড়া এসব আনাড়ি চালকরা ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ ।

৫. বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে চলাচলকারী অধিকাংশ যানবাহন যান্ত্রিকভাবে ত্রুটিযুক্ত । অধিকাংশ যানের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ( বিআরটিএ ) কর্তৃক প্রদত্ত ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই । অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ত্রুটিযুক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় চলাচল করে । বিশেষ করে মফস্বলের পথে - ঘাটে অত্যন্ত জীর্ণ ও পুরানা যানবাহন চলাচল করে । এতে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায় ।

৬. বাংলাদেশে কোনো যানবাহনই ধারণক্ষমতার তোয়াক্কা করে না । ট্রাকে ধারণক্ষমতার চেয়ে দু - তিন গুণ পণ্য পরিবহন করা হয় । জরাজীর্ণ বাসের ছাদে পর্যন্ত তিল ধারণের ঠাই থাকে না । মাত্রাতিরিক্ত পণ্য ও যাত্রী বহনের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে ।

৭. আমাদের দেশে অধিকাংশ বাজার গড়ে উঠেছে ব্যস্ত রাস্তার উপর বা পাশে । তাছাড়া মহানগরীগুলোর ব্যস্ত সড়কে অসংখ্য রিকশার চলাচল প্রায়শই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে থাকে ।

৮ . আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ চালকদের অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা । ব্যস্তপথে চালকরা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় এবং ওভারটেকিং করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায় ।

৯ . যানবাহনের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলেও তা জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলাতে পারছে না । নিত্যদিন যানবাহনগুলোতে যাত্রীর ভিড় বেড়েই চলছে । অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই যানবাহনগুলো দুর্ঘটনা কবলিত হওয়া আজ যেন স্বাভাবিক রূপ নিয়েছে ৷

সড়কপথে দুর্ঘটনা একেবারে নির্মূল করা কিছুতেই সম্ভব নয় । তবে নিম্নোক্ত সুপারিশ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস করা যায়-

১. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে । আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ যাতে রেহাই না পায় তার ব্যবস্থা করতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পেতে পারে।

২. প্রচলিত ট্রাফিক আইনের সংস্কার সাধনপূর্বক যুগোপযোগী করতে হবে । ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য আরও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ।

৩. ট্রাফিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা , লাইসেন্সিং অথরিটিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করা না গেলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না । ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও প্রশিক্ষণ এবং লাইসেন্সবিহীন চালক পথে না নামতে পারলে দুর্ঘটনা এমনিতেই হ্রাস পাবে ।

৪. সংকীর্ণ ও অসমান রাস্তাগুলোকে প্রশস্ত ও সমতল করতে হবে । জরাজীর্ণ সেতুগুলো অপসারণ করতে হবে । ব্যস্ত রাস্তার ওপর থেকে দোকানপাট বা বাজার সরাতে হবে । তাহলে সড়কপথে দুর্ঘটনা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে ।

৫ . ট্রাফিক আইন ও যান চলাচলের নিয়মকানুন সম্পর্কে সচেতন করতে চালকদের প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করা উচিত । প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা গেলে দুর্ঘটনার মাত্রা হ্রাস পাবে ।

৬ . উন্নত বিশ্বের মতো ট্রাফিক ব্যবস্থায় অত্যাধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে । ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী গাড়ি বা চালককে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে শনাক্ত করা গেলে এ ধরনের অপরাধ হ্রাস পাবে । এছাড়া যানবাহনেও দুর্ঘটনারোধক সহায়ক যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে ।

৭ . স্বল্পগতির মনুষ্যচালিত হালকা যান রিকশা যাতে ব্যস্তপথে না চলতে পারে সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে । এতে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা দুই - ই হ্রাস পাবে ।

৮. ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ফলে যানবাহনের যে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে তা দূর করার জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করা দরকার । এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ।

সর্বোপরি দেশব্যাপী ' নিরাপদ সড়ক চাই'– এই শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠতে হবে । সর্বস্তরের মানুষ এই আন্দোলনের সাথে একাত্ম হলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব ।