প্রতিবেদন: আর্সেনিক আক্রান্ত একটি গ্রাম

আর্সেনিক আক্রান্ত একটি গ্রাম


আলোচ্য বিষয়:

👉🏻আর্সেনিক আক্রান্ত একটি গ্রাম সম্পর্কে প্রতিবেদন লিখো ৷



একটি গ্রামের সব মানুষ আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত

জামালপুর থেকে মেহেদি হাসান : একটি গ্রামের প্রায় দু’হাজার মানুষ আর্সেনিক বিষে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের মধ্যে নিপতিত । আর্সেনিকোসিসে অনেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ; কিন্তু তাদের রক্ষার জন্য কোনো কার্যকর ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না ।

মারাত্মক আর্সেনিকযুক্ত এ গ্রামটির নাম শিমুলতলী । ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের অধীন এ গ্রামটির আশপাশের গ্রামগুলোতেও ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে । তবে এ গ্রামের অবস্থা যেমনটা ভয়াবহ তেমনটা সেগুলোতে নয় । সরেজমিনে পরিদর্শন করে একটি ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে এ গ্রামে । উপজেলা সদর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত গ্রামটির ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের স্বাতন্ত্র্য লক্ষ করা যায় । এ গ্রামের চারদিকে বিস্তৃত সমতল মাঠ । আশপাশে নদী কিংবা গভীর জলাশয় নেই । ভূমি বেশ উঁচু , সচরাচর বন্যায় ডুবে না । গ্রামটিতে প্রায় দু’হাজার লোকের বাস । শতকরা ৯৫ জন মানুষ কৃষিজীবী । অবশিষ্টরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা চাকুরে ।

এ গ্রামে মোট টিউবওয়েলের সংখ্যা ৫৫ টি । এছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি পাতকুয়া । প্রত্যেকটি টিউবওয়েলই লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা । অর্থাৎ আর্সেনিকমুক্ত পানীয়জলের উৎস এ গ্রামে নেই । গ্রামের প্রতিটি ঘরে আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত মানুষের দেখা মিলল । কারো হাত পায়ের চামড়া খসখসে , কারো হাত - পায়ের চামড়া ফেটে গেছে , কারো কারো গায়ের চামড়ায় পড়েছে কালো কালো ছোপ । গা জ্বালাপোড়া করা , চুলকানি , জ্বর , শরীর ব্যথা নানা যন্ত্রণাদায়ক উপসর্গে ভুগছে গ্রামবাসী ।

আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে আর্সেনিক সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না এ গ্রামের অধিবাসীদের । নানারূপ চর্মরোগ নিয়ে এ গ্রামের মানুষ উপজেলা হাসপাতালে যাচ্ছে এটা লক্ষ করে তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিষয় জেলা সিভিল সার্জনকে অবহিত করেন । এর প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামের নলকূপের পানি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় । পরীক্ষায় দেখা যায় , প্রত্যেকটি নলকূপের । পানিই আর্সেনিক বিষে বিষাক্ত । মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতিতে নলকূপের পানি পান থেকে বিরত থাকার কথা জানানো হলেও গ্রামবাসী বাধ্য হয়ে সে পানিই দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছে । কারণ আজ পর্যন্ত কোনো নিরাপদ পানির উৎস তাদের জন্য সৃষ্টি করা হয় নি । গ্রামের মানুষ আর্সেনিকের বিপদ সম্পর্কে সচেতন হলেও তাদের করার কিছুই নেই । যেহেত ভূ - উপরিভাগস্থ পানির কোনো উৎস নেই এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ নলকূপ স্থাপনের সামর্থ্য তাদের নেই , তাই নিশ্চিত বিপদ জেনেও তারা বিষাক্ত পানিই ব্যবহার করছে ।

এ ব্যাপারে গ্রামবাসী জানায় , তারা চেয়ারম্যান ও এমপির শরণাপন্ন হলেও আজ পর্যন্ত কেবল আশ্বাসই পেয়েছে । তারা আর্সেনিকের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণকেই নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছে ।


আরো পড়ুন: