প্রতিবেদন: দূষণ একটি ভয়াবহ সমস্যা

দূষণ একটি ভয়াবহ সমস্যা


আলোচ্য বিষয়:

👉🏻কোনো একটি জাতীয় সংবাদপত্রের সাংবাদিক হিসেবে পানীয়জলে আর্সেনিক সমস্যার ওপর একটি বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন রচনা করো ।
👉🏻“আর্সেনিক দূষণ একটি ভয়াবহ সমস্যা” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন রচনা করো ।
👉🏻সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আর্সেনিক দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে । ‘ দেশের আর্সেনিক দূষণের ভয়াবহতা ' চিত্রাট তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন বর্ণনা করো ।


শিরোনাম : দেশের ৪১ টি জেলার ভূগর্ভস্থ পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক একটি ভয়াবহ সমস্যা

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৪১ টি জেলার নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে । প্রায় ৮ কোটি লোক বর্তমানে আর্সেনিকজনিত বিষক্রিয়ার হুমকির মধ্যে বসবাস করছে । ইতোমধ্যে আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার শিকার হয়েছে কয়েক লাখ লোক ।

গতকাল শুক্রবার স্থানীয় একটি হোটেলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ' আর্সেনিক মুক্ত বাংলাদেশ ' কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ বক্তাগণ এ ভয়াবহ তথ্য উপস্থাপন করেন । সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন " Intigrated Arsenic Mitigration Plan ” প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডাঃ ......। আলোচনায় অংশ নেন জনাব............ জনাব............ জনাব ............ জনাব ........... । এছাড়া আর্সেনিক মুক্ত বাংলাদেশ ' - এর মাঠকর্মীদের সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য সংবলিত পুস্তিকাও সেমিনারে বিতরণ করা হয় ।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে , দেশের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো , চাঁপাইনবাবগঞ্জ , বাগেরহাট , গোপালগঞ্জ , কুমিল্লা , ব্রাহ্মণবাড়িয়া , নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর । উত্তরাঞ্চলের প্রায় সকল জেলার ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি ধরা পড়েছে । তন্মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ , গোপালগঞ্জ , বাগেরহাট , কুমিল্লা , নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার শতকরা ১০ ভাগের অধিক নলকূপের পানিতে আর্সেনিক সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে রয়েছে ।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ জানিয়েছেন , আর্সেনিক আজ ভীতিকর বস্তু হলেও আসলে এটি মানুষের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য উপাদান । শিল্পোৎপাদনেও আর্সেনিকের ব্যবহার রয়েছে । একজন মানুষের দৈনিক ১২ থেকে ১৫ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিকের প্রয়োজন । বিশেষজ্ঞগণ সরেজমিন পরীক্ষা করে দেখেছেন উপদ্রুত এলাকায় একজন মানুষের নিত্য ব্যবহার্য পানিতে প্রায় ৭০-৮০ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে । আর্সেনিক সাধারণত ভূত্বকের অভ্যন্তরে বিদ্যমান থাকে । তবে প্রকৃতিতেও এটি যৌগরূপে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় । যেহেতু এটি ভূত্বকের প্রয়োজনাতিরিক্ত ২০ টি উপাদানের অন্যতম সেজন্য এটি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলিত নলকূপের পানির সঙ্গে মিশে উপরে উঠে আসে এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য পানির সাথে মানুষ এ স্বাদ ও গন্ধহীন বিষাক্ত পদার্থটি গ্রহণ করে থাকে ।

ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা , বিশ্বব্যাংক , কারিতাস , অক্সফামসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা আর্সেনিক সংকট মোকাবিলার পন্থা উদ্ভাবনে কাজ শুরু করেছে । সংস্থাগুলো প্রথমত আর্সেনিক সংক্রমণের কারণ , সংক্রমণের মাত্রা নির্ধারণ করছে । এসব সংস্থার প্রশিক্ষিত কর্মীরা দেশের প্রত্যেকটি উপজেলার বাড়ি বাড়ি গিয়ে নলকূপের পানির নমুনা সংগ্রহ করে তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে সেগুলো আর্সেনিকযুক্ত বা আর্সেনিকমুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করছেন । আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলোর মুখে লাল রঙ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে । সেই সাথে জনগণকে বিকল্প উৎস থেকে পানি ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছে ।

আলোচকবৃন্দ পঠিত নিবন্ধের ওপর সারগর্ভ বক্তব্য রাখলেও আর্সেনিক থেকে মুক্তির কোনো পথ নির্দেশ করতে পারেন নি । কেননা , আর্সেনিক তাপে বিনষ্ট হয় না এবং পানি পরিশোধন করেও এটি আলাদা করা যায় না । তবে আশার বাণী শুনিয়েছেন নিবন্ধ উপস্থাপনকারী । তাঁর প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিস্থ " Stevens Institute of Technology " - এর কয়েকজন বিজ্ঞানী গবেষণা করে পানি শোধনের এমন এক তথ্য দিয়েছেন , তাতে বলা হয়েছে পানির আর্সেনিক গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব ।

আর্সেনিক সংক্রামিত জেলাগুলোর প্রায় ৮ কোটি মানুষ যে জীবন - মরণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তা থেকে আপাতত তাদের মুক্তির কোনো আশাও করা যাচ্ছে না ।