প্রতিবেদন: বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা

বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা


আলোচ্য বিষয়:

👉🏻“বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন তৈরি করো ।


শিরোনাম : বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা

মানবজাতির উন্নতি , অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে শিক্ষার ওপর । শিক্ষা না পেলে জাতির উন্নয়নের পথ রুদ্ধ হয়ে যায় । জাতি হয় অন্ধকারে নিমজ্জিত । শিক্ষার অভাবে জীবনে দেখা দেয় নানা অনাচার ও কুসংস্কার । শিক্ষার অভাবে সভ্যতার আলো থেকে বঞ্ছিত থাকতে হয় । তাই শিক্ষাকে জাতির উন্নতির পূর্বশর্ত বলা হয়েছে । বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানব সম্পদে পরিণত করার জন্য চাই উপযুক্ত শিক্ষা । আর প্রাথমিক শিক্ষা হলো সেই শিক্ষার প্রাথমিক স্তর । প্রাথমিক শিক্ষাই আমাদের জাতীয় শিক্ষার প্রথম সিঁড়ি । তাই জাতিকে শিক্ষিত , আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদা সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হচ্ছে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন ।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা বড়ই করুণ । দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই অশিক্ষিত বা অক্ষরজ্ঞানহীন । যদিও সরকারের বহুমুখী প্রচেষ্টায় শিক্ষার হার বর্তমানে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে , তবু তা আশানুরূপ নয় । এ অবস্থায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম । চলন্ত আধুনিক বিশ্বে প্রতিটি রাষ্ট্রেরই নিরক্ষর জনসাধারণ বোঝাস্বরূপ । জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তাদের বিশেষ কোনো ভূমিকা নেই । অশিক্ষিত জাতির চিন্তা - ভাবনা , ধ্যানধারণা তুলনামূলকভাবে উন্নত জাতি থেকে থাকে বিস্তর তফাৎ । দৈহিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তারা কোনো উন্নত পেশা গ্রহণ করতে পারে না । এ বিষয়গুলো ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক অভিশাপ । আজ আমাদেরকে এ অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে হলে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই । শিশুদের অন্তর্নিহিত সৃজনীশক্তির অঙ্কুরোদ্‌গম হয় প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে । বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান লাভের পাশাপাশি তারা একতা , সততা , শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষালাভ করে । শিক্ষার মাধ্যমে তারা নিজেদের নম্র , ভদ্র , বিনয়ী , মার্জিত ও পরিচ্ছন্ন করে গড়ে তুলতে পারবে । তাই আজ শিক্ষা পরিকল্পনায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার দিকটি জাতীয় বিকাশ ও উন্নয়নের স্বার্থে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ।

আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল । ১৮৪৫ সালে উডস এডুকেশন ডেসপাচ থেকে শুরু করে ১৮৮২ সালের ' ইন্ডিয়ান এডুকেশন কমিশন ' ১৯১৭-২৭ সময়ের ' বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন ' , ' ১৯৪৪ সালের সার্জেন্ট রিপোর্ট ’ ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের প্রস্তাব ও উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয় নি । আইন ছিল কিন্তু এর কার্যকারিতা ছিল না । ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রণীত সংবিধানে শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং ১৯৭৪ সালের কুদরত - ই - খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টেও সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার উপর দেওয়া হয় বিশেষ গুরুত্ব । কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে সে প্রস্তাবের কার্যক্রমও স্থগিত হয়ে যায় ।

অবশেষে ১৯৯২ সালে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয় এবং ২০০০ সালে সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় । কিন্তু এত কিছু প্রচেষ্টার পরও সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে । সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে প্রচার মাধ্যমগুলোকে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে । সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে । জাতীয়ভিত্তিক জাগরণমূলক চেষ্টা নিয়ে আজ শ্রীলঙ্কা ১০০ % , রাশিয়া ১০০ % , জাপান ৯৯ % ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৯৮ % লোক সাক্ষরতা অর্জন করেছে । তাই আজ আমাদের শিক্ষিত সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে সাক্ষরতার গুরুত্ব উপলব্ধি করলে এদেশ মুক্ত হবে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে ।