মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান (প্রবন্ধ রচনা)

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভের সুযােগ প্রত্যেক মানুষের জন্মগত অধিকার । মায়ের কোলে বসেই মানুষ মায়ের ভাষা শিখে থাকে - এ ভাষায় কথা বলে সে পরিতৃপ্তি পায় । কৰি যথার্থই বলেছেন-

“ নানান দেশের নানা ভাষা ,

বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা ? ”

মায়ের কোলে বসে যে ভাষা শিখেছি , সেই মাতৃভাষাই যে সকল প্রকার শিক্ষার বাহন হওয়া উচিত , এ বিষয়ে কোন দ্বিমত থাকতে পারে না । মনের ভাব মাতৃভাষায় যেমন সহজে ও স্বচ্ছন্দে প্রকাশ করা যায় , অন্য ভাষায় তেমন সম্ভব নয় । মনােভাবের পূর্ণ বিকাশ একমাত্র মাতৃভাষাতেই সম্ভব । অন্য ভাষা শিক্ষা করতে অনেক সময় ও অশেষ শ্রম ব্যয় হয় । নিজের মনকে অন্য ভাষায় পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা যায় না । বিদেশী ভাষায় আমাদের বিদ্যা পূর্ণতা লাভ করতে পারে না । রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন , “ আমরা যে পরিমাণ শিক্ষা পাই , সেই পরিমাণে বিদ্যা পাই না ।

ইংরাজী ভাষায় অবগুণ্ঠিত বিদ্যা আমাদের মনের সবর্তিনী হইতে পারে না । ” বাস্তবিকই নিজের ভাষাকে দূরে সরিয়ে রেখে কখনাে আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডার পূর্ণ হতে পারে না । স্বীকার করে নিতে হবে যে , সুদীর্ঘ বিদেশী ( ব্রিটিশ ) শাসন আমলে আমাদের বাংলাভাষা অবহেলিত ছিল । এমনকি ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরও বাংলাভাষা নিজস্ব মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি ।

ইংরাজী ভাষায় অবগুণ্ঠিত বিদ্যা আমাদের মনের সবর্তিনী হইতে পারে না । ” বাস্তবিকই নিজের ভাষাকে দূরে সরিয়ে রেখে কখনাে আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডার পূর্ণ হতে পারে না । স্বীকার করে নিতে হবে যে , সুদীর্ঘ বিদেশী ( ব্রিটিশ ) শাসন আমলে আমাদের বাংলাভাষা অবহেলিত ছিল । এমনকি ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরও বাংলাভাষা নিজস্ব মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি ।

আশার কথা , বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মাতৃভাষার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে । উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও মাতৃভাষাকে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে । কিন্তু তবু অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে । উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপকহারে মাতৃভাষা এখনাে চালু হয়নি । অনেকে বাংলাভাষায় শিক্ষাগ্রহণে এখনও বিরূপ মনােভাব পােষণ করেন এবং অনেকে বিরুদ্ধ যুক্তি উত্থাপন করেন ।

ইংরেজী বা অপরাপর বিদেশী ভাষাকে আমরা অবজ্ঞা করি না । কোন বিদেশী ভাষার বিরােধীতা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয় । শুধু আমাদের বক্তব্য এই যে , নিজের ভাষায় নিজেকে যেমন পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরা যায় , অন্য ভাষায় তেমনটি সম্ভব নয় । কাজেই সাহিত্য , বিজ্ঞান , প্রযুক্তিবিদ্যা সবক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষার বাহন হওয়া উচিত বাংলা । এ বিষয়ে আমাদের পক্ষে আরাে যুক্তি রয়েছে । বিদেশী ভাষায় চর্চা করে জগতে কোন জাতি মাথা তুলতে পারেনি । বৃটেন , ফ্রান্স , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , সােভিয়েট ইউনিয়ন প্রভৃতি দেশ মাতৃভাষার মাধ্যমে জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে । এসব দেশে নিজ নিজ মাতৃভাষার মাধ্যমে যাবতীয় শিক্ষা দেয়া হয় , অবশ্য অন্যান্য ভাষায় অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষা দেয়া হয় , তবে তা ইচ্ছামূলক । জাতীয় জীবনকে শক্তিশালী করতে হলে , জাতীয়তাবােধ ও দেশাত্মবােধ জনমনে জাগ্রত করতে হলে মাতৃভাষাকে জীবনের সর্বস্তরে অবশ্যই প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।

অনেকে বাংলাভাষার দুর্বলতার দোহাই দিয়ে থাকেন । কিন্তু এ যুক্তি গ্রহণযােগ্য নয় । পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হতে শুরু করে বঙ্কিমচন্দ্র , রবীন্দ্রনাথ , শরৎচন্দ্র , নজরুল ইসলাম প্রমুখ মনীষী যে ভাষাকে লালন - পালন করে গিয়েছেন , সেই ভাষা কোনক্রমে দীনহীন নয় । আজ বাংলাভাষা বিশ্বসভায় ঠাই লাভ করেছে , উন্নত পরিভাষা সৃষ্টি হয়েছে । কাজেই শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে আর কোন বাধা নেই , শুধু আমাদের মন ও মানসিকতার পরিবর্তন আবশ্যক ।

সুখের বিষয় এই যে , বাংলাভাষাকে শিক্ষার সর্বস্তরে প্রচলনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচী গৃহীত হয়েছে । আমরা অচিরেই মুক্তকণ্ঠে গাইতে পারব- “ মােদের গরব , মােদের আশা আ - মরি বাংলা ভাষা । ”