দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা রচনা ২০ পয়েন্ট

দেশগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা

এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:
👉জাতি গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা
👉ছাত্র সম্প্রদায় ও সমাজসেবা

সূচনা :

ছাত্ররা যেকোনাে দেশের সবচেয়ে সচেতন ও প্রগতিশীল অংশ । দেশকে অর্থাৎ জাতিকে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে ধাবিত করতে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য । একজন প্রকৃত ছাত্রের সাধনা হলাে বিনয়ী , সৎ , দেশব্রতী , মুক্তমনা , আত্মত্যাগী ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তােলা । তাই চিন্তাচেতনা ও শিক্ষায় অগ্রগামী এ ছাত্ররাই দেশ ও জাতির সেরা সম্পদ । আজকের ছাত্ররাই জাতির আগামী দিনের পথপ্রদর্শক । উন্নয়নশীল দেশগুলাের আর্থ - সামাজিক , সাংস্কৃতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে প্রয়ােজন উপযুক্ত দেশব্রতী নেতৃত্ব । আর ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের এ প্রয়ােজন মেটাতে হবে আজকের প্রজন্মকে । জাতির গৌরব বৃদ্ধির সুমহান দায়িত্ব একদিন ছাত্রদের গ্রহণ করতে হবে । তাদের কৃতকর্মের সফলতার ওপরই জাতির ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি নির্ভরশীল ।

ছাত্রদের ভূমিকা :

ছাত্ররা তারুণ্যের উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত । নতুন কিছু করার ও গড়ার স্বপ্নে তারা সব সময় বিভাের । তারা উদ্যমী ও দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী । যেকোনাে বাস্তব পরিস্থিতি মােকাবেলায় প্রয়ােজনে ছাত্ররাই পারে অকুতােভয় সংগ্রামী ভূমিকা পালন করতে । আমাদের ভাষা আন্দোলন , মুক্তিযুদ্ধ , স্বৈরাচারবিরােধী গণঅভ্যুত্থানসহ নানা আন্দোলন - সংগ্রামই তার উল্লেখযােগ্য উদাহরণ । এছাড়া ছাত্ররা স্বাধীন উদ্যোগ ও স্বেচ্ছাব্রতী দেশ গঠনমূলক কাজে যথেষ্ট উৎসাহ পায় । তাই জাতি গঠনে ছাত্ররাই পালন করতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা ।

ছাত্রদের ভূমিকার স্বরূপ :

একটি দেশ গঠনে একমাত্র ছাত্ররাই রাখতে পারে যুগােপযােগী ভূমিকা । কেননা যেকোনাে দেশের আর্থ সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার আলােকেই ছাত্ররা দেশ গঠনের কার্যক্রম নির্ধারণ করে । জাতি গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা দু’দিক থেকে বিবেচ্য । প্রথমত , ছাত্ররা নিজের জীবন গঠনে তৎপরতা দেখিয়ে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য যােগ্যতা অর্জন করে । দ্বিতীয়ত , তারা প্রত্যক্ষভাবে জাতি গঠনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে । শিক্ষা লাভের জন্য ছাত্রসমাজ সংঘবদ্ধ থাকার সুযােগ পায় বলে তারা ঐক্যবদ্ধ এবং প্রবল শক্তি হিসেবে দেশ গঠনমূলক কাজে সম্পৃক্ত হয় ।

ছাত্রসমাজ ও জাতীয় কর্তব্য :

যুগে যুগে ছাত্ররাই রচনা করে স্বপ্নিল পৃথিবী । নিদ্রাচ্ছন্ন পথভ্রষ্ট জাতিকে তারাই দেখায় আলােকবর্তিকা । তাদের শক্তি অপরিমেয় , গতিবেগ দুর্বার , উৎসাহ ক্লান্তিহীন এবং সাধনা অটল । দেশ ও জাতির কল্যাণে তারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী । তারা মুক্তির অগ্রদূত , মুক্তপ্রাণ ও দৃষ্টির অধিকারী । সমাজ প্রগতি ও নতুন স্বপ্নময় জীবনের পথে তাদের দৃঢ় পদযাত্রা । তারাই জাতির কর্ণধার । নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তােলার সাথে সাথে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি মােকাবেলা করে ছাত্রদের জাতীয় উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করা উচিত । যেমন : দুর্গত ও বিপন্ন মানবতার সেবা , জনসেবা , গ্রামােন্নয়ন , নিরক্ষরতা দূরীকরণ , গরিব ও মেহনতি মানুষকে সহায়তা , জনস্বাস্থ্য রক্ষা , পরিষ্কার - পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম , পরিবেশ সংরক্ষণ , বৃক্ষরােপণ ইত্যাদি । এসব দেশ গঠনমূলক কাজের মাধ্যমেই তারা ভবিষ্যতে জাতীয় জীবনে সুশীল নাগরিকের দায়িত্ব পালন করার শিক্ষা লাভ করবে ।

ছাত্রসমাজ ও সমাজসেবা :

বিদ্যার্জনের পাশাপাশি সমাজসেবামূলক দায়িত্ব পালন এবং দুর্যোগ - দুর্বিপাকে বিপন্ন মানুষের পাশে দাড়ানাে ছাত্রদের কর্তব্য । ছাত্রদের সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে : বন্যা , জলােচ্ছাস , ঘূর্ণিঝড় , ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন মানুষের পাশে দাড়ানো । বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কাজের মাধ্যমে তারা সমাজের উপকার সাধন করতে পারে । যেমন : বায়ুদূষণ , পানি দূষণের বিরুদ্ধে সক্রিয় নানা ভূমিকা , পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখায় সহযােগিতা , আর্সেনিক দূষণ কিংবা ডেঙ্গুর প্রকোপের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি , নিরক্ষরতা দূরীকরণ পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি সেবামূলক কাজ । সমাজের প্রতি ছাত্রদের আজকের সেবাপরায়ণ মনােভাবই তাদের ভবিষ্যতের যােগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে ।

ছাত্রসমাজ ও দেশপ্রেম :

দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক ও পরিচালক ছাত্রসমাজ । তাই ছাত্রদের দেশপ্রেমের আদর্শে উজ্জীবিত হতে হবে । কেননা ছাত্রদের মনে সুপ্ত দেশপ্রেমের ক্ষুদ্র বীজই ভবিষ্যতে কর্মময় জীবনের বিশাল আকার ধারণ করবে । ছাত্ররাই পারে দেশের বিপদে কর্তব্যের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সকল প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে । ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় , ঔপনিবেশিক দেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলােতে সমাজের সচেতন ও সগ্রামী অংশ হিসেবে ছাত্রসমাজই রাজনৈতিক সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে । আমাদের দেশেও ছাত্ররা ভাষা আন্দোলনে , শিক্ষা আন্দোলনে , ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলনে এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে গৌরবােজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে । ছাত্রদের আত্মত্যাগই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার । সুতরাং ছাত্রসমাজই পারে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দেশের সার্বিক কল্যাণের বাণী সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌছে দিতে ।

নিরক্ষরতা দূরীকরণ :

নিরক্ষরতা বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে অন্যতম প্রধান সমস্যা । ছাত্ররা প্রাণদীপ্ত তারুণ্যের অধিকারী । নতুন কিছু করার এবং গড়ার কাজে তারা উদ্যোগী এবং উৎসাহী । তাই নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্ররাই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে । একাধারে সংগঠক এবং শিক্ষাদাতা কর্মীর ভূমিকা পালন করা তাদের পক্ষেই সম্ভব ।

গণশিক্ষা বিস্তার :

দারিদ্র্যপীড়িত বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে চাই সবার জন্য শিক্ষা তথা গণশিক্ষা । গণশিক্ষা বিস্তারে ছাত্রদের অংশগ্রহণই গণশিক্ষা আন্দোলনকে দ্রুত সাফল্যমণ্ডিত করতে পারে । বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নিরক্ষরতার অভিশাপ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার ক্ষেত্রে সারাদেশে ছাত্রসমাজই বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে । তাই দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করতে হলে ছাত্রদের অবকাশকালীন গণশিক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ খুবই প্রয়ােজন ।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ :

অধিক জনসংখ্যা বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা । দেশের নিরক্ষর জনসাধারণ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে অসচেতন । ছাত্ররাই পারে এ ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করে তুলতে । দেশের শিক্ষিত সমাজ হিসেবে সাধারণ মানুষ ছাত্রদের প্রতি শ্রদ্ধা পােষণ করে । তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ছাত্রদের বিভিন্ন পরামর্শ ও জ্ঞানদান তারা গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ প্রবে ।

গ্রামোন্নয়ন :

আমাদের দেশ গ্রামপ্রধান দেশ । তাই মূলত গ্রামেরই উন্নয়ন এ দেশেরই উন্নয়ন । কেননা আমাদের দেশের অধিকাংশ লােকই গ্রামে বাস করে । তাই দেশের বিপুল অংশকে বাদ দিয়ে দেশ উন্নত হতে পারে না । কিন্তু গ্রাম আজ অবহেলিত । শিক্ষা , স্বাস্থ্য , চিকিৎসা সব কিছু থেকেই বঞ্চিত । দেশের উল্লেখযােগ্য অংশ ছাত্রসমাজই পারে গ্রামের এ দুর্দশার অবসান ঘটাতে । তাদের কর্মোদ্যোম ও কর্মোদ্যোগ গ্রামের ঘরে ঘরে শিক্ষার আলাে পৌছে দিতে পারে এবং গ্রামের মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারে ।

দুর্নীতি দমনে সহযােগিতা :

ছাত্ররা যাবতীয় সংকীর্ণ চেতনার উর্ধ্বে । চারিত্রিক দৃঢ়তাই তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য । সমাজ ও দেশে যেখানেই নৈতিকতার অবক্ষয় দেখা দেয় সেখানেই শােনা যায় তাদের সােচ্চার কষ্ঠের প্রতিবাদ । যেখানে দুর্নীতির কালাে হাত থাবা দিয়েছে সেখানে দেখা যায় ছাত্রদের বলিষ্ঠ অবস্থান , ছাত্রদের এ ভূমিকাই জন্ম দিতে পারে একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ ।

বেকারত্ব নিরসন :

বেকার সমস্যা আমাদের দেশের অন্যতম সমস্যা , বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথেই ঘটে নৈতিক স্খলন । বৃদ্ধি পায় সন্ত্রাস , চাঁদাবাজি প্রভৃতি অপকর্ম । ছাত্ররা নতুন প্রাণ , নতুন চিন্তার অধিকারী , নবসৃষ্টির তাড়না তাদের প্রাণে । ছাত্ররা যদি তাদের চিন্তাচেতনা দিয়ে নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানের পন্থা উদ্ভাবন করতে পারে , তাহলে দেশ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে ।

পরিবেশ সংরক্ষণ :

কেবল আমাদের দেশে নয় , পুরাে বিশ্বে পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন । জনগণের অসচেতনতা এবং স্বার্থপরতা পরিবেশকে দূষিত করছে প্রতিনিয়ত । লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি , অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন , বনভূমির অপরিকল্পিত ব্যবহার পরিবেশের ক্ষতিসাধন করছে । ছাত্রসমাজ যদি তাদের উদ্যোগী মনােভাব নিয়ে জনগণকে সচেতন করে তােলে তাহলে পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব হবে ।

সাংস্কৃতিক অবদান :

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছাত্ররা রাখতে পারে অগ্রণী ভূমিকা । সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে তারা বিশ্বের দরবারে নিজেদের জাতীয় পরিচয় তুলে ধরতে পারে । আবার সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা : কাব্য , নাটক , প্রবন্ধ , গল্প উপন্যাস ইত্যাদি চর্চার মাধ্যমে বিশ্ব সাহিত্যের দরবারে তারা ঘোষণা করতে পারে নিজেদের গৌরবােজ্জ্বল উপস্থিতি ।

উপসংহার :

প্রত্যেক মানুষের জীবনে ছাত্রজীবন সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য সময় । কেননা এ সময়টা একাধারে ছাত্রদের জীবন গঠন ও দেশ গঠনের লক্ষ্যে পরিচালিত । অধ্যয়নের ফাকে ফাকে ছাত্রদের দেশব্রতী ভূমিকা পালনই তাদের ভবিষ্যতের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে । দেশ ও সমাজের কল্যাণে ছাত্রদের নানামুখী অবদানই একটা সমৃদ্ধ দেশ ও জাতি গড়ে তুলতে পারে । সমস্যাপীড়িত দারিদ্র্যসম দেশমাতৃকাকে গড়ে তােলার ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজই রাখতে পারে অগ্রণী ভূমিকা । এ প্রসঙ্গে গান্ধীজি বলেছেন , ‘ The students are the future leaders of the country who could fulfill country's hopes being capable . "