হেমন্তকাল অনুচ্ছেদ রচনা

হেমন্তকাল

বাংলা বারো মাসে ছয় ঋতুর দেশ। এই ছয় ঋতুর মধ্যে হেমন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। এটি শরৎ ও শীতের মধ্যবর্তী একটি মনোরম ঋতু। হেমন্তকালের শুরু হয় কার্তিক মাস থেকে এবং শেষ হয় অগ্রহায়ণ মাসে। এই ঋতুটি বাংলার গ্রামীণ জনপদে ফসলের মৌসুম হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। তাই হেমন্তকালকে বলা হয় ফসলের ঋতু। হেমন্তের প্রকৃতি আমাদের দেহমনকে নতুন এক আবেশে মাতিয়ে তোলে। প্রকৃতির পরিবর্তন, কৃষকের ব্যস্ততা, মাঠের সোনালি সৌন্দর্য—সবকিছুই হেমন্তকালকে এক বিশেষ মাত্রা এনে দেয়।

হেমন্তকালের আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। গ্রীষ্মের তাপদাহ এবং বর্ষার অঝোর বৃষ্টির ক্লান্তি শেষে এই ঋতু প্রকৃতিতে নিয়ে আসে এক প্রশান্তি। বাতাসে থাকে হালকা শীতের ছোঁয়া। আকাশ থাকে নীল ও পরিষ্কার। মাঝে মাঝে সাদা সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়। হেমন্তের সকাল অত্যন্ত শান্ত ও মনোরম। ভোরের শিশিরে ঘাস ভেজা থাকে। মাঠের মধ্যে কুয়াশা ছেয়ে থাকে। এই সময় প্রকৃতি এক মায়াবী রূপ ধারণ করে। সূর্য ওঠার সময় সোনালি আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পাখিরা ডাক দিয়ে প্রকৃতিকে সজাগ করে তোলে।

হেমন্তকাল বাংলাদেশের কৃষিজীবী মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ঋতুতে কৃষকরা মাঠের পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাঠের ধান সোনালি রঙ ধারণ করে। ধানের শীষে শীষে ভরে ওঠে মাঠ। কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। গ্রামে নবান্ন উৎসবের আয়োজন হয়। নতুন ধান দিয়ে পিঠা, পায়েস, খিচুড়ি তৈরি করা হয়। এই সময় গ্রামীণ জনপদে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। হেমন্তকাল বাংলার মানুষের জীবনে নতুন ফসলের বার্তা বয়ে আনে।

তবে হেমন্তকালের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এই ঋতুতে খরার প্রবণতা দেখা যায়। গাছপালার পাতা শুকিয়ে পড়তে শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রেই জমিতে পানি কমে যায়। নদী-নালার পানি কমে যায়। ফলে সেচের জন্য কৃষকদের কিছুটা অসুবিধা হয়। এছাড়া হেমন্তের শেষ দিকে ঠান্ডা ও ধুলাবালির কারণে শীতজনিত রোগবালাই বৃদ্ধি পায়। খুসখুসে কাশি, সর্দি, জ্বর ইত্যাদি রোগ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় এই ঋতুতে অতিরিক্ত ঠান্ডায় গরু-ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়ে।

তবুও হেমন্তকালের সৌন্দর্য ও গুরুত্ব অস্বীকার করার নয়। এটি বাংলার গ্রামীণ জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নতুন ধান, নবান্ন উৎসব, প্রকৃতির নান্দনিক পরিবর্তন—সব মিলিয়ে হেমন্ত বাংলার এক অপরূপ ঋতু। এই ঋতু আমাদের জীবনকে যেমন আনন্দ দেয়, তেমনি প্রকৃতিকে করে তোলে আরও জীবন্ত ও রঙিন। হেমন্তকাল প্রকৃতির এক আশ্চর্য উপহার, যা আমাদের জীবনকে নতুন আশায় বাঁচতে শেখায়।