যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো

যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার

আলোচ্য বিষয়:

👉🏻যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো ।

যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো

শিরোনাম : যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার

নিজস্ব প্রতিনিধি : যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের লক্ষণ আমাদের সমাজে সুস্পষ্ট । দেশের প্রায় সকল প্রকার অপরাধমূলক ঘটনার সাথে যুবকরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত । অপরাধ শুধুমাত্র যে যুবকরাই করছে তা কিন্তু নয়– সার্বিকভাবে সমাজে নৈতিক অবক্ষয়জনিত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে । প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতা খুললেই চোখে পড়ে খুন , রাহাজানি , ছিনতাই , ধর্ষণ , অপহরণ , এসিড নিক্ষেপের মতো বীভৎস ঘটনা । তাছাড়া চাঁদাবাজি , টেন্ডারবাজি , মুক্তিপণ আদায়ের মতো ঘটনাও প্রতিমুহূর্তে ঘটছে । মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এবং চোরাচালানও বৃদ্ধি পেয়েছে । এসব অপরাধমূলক তৎপরতার কারণে বাংলাদেশের সমাজজীবন আজ বিপন্ন , নিরাপত্তাহীন । সার্বিকভাবে জাতীয় ভাবমূর্তি এবং উন্নয়ন সম্ভাবনা আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে ।

নানা কারণে আজকের যুবসমাজ নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হয়েছে । বিপথগামী যুবশক্তিকে কল্যাণপথে আনা যাচ্ছে না যেসব কারণে আজ তার অনুসন্ধান প্রয়োজন । যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো—

১. যুবসমাজ নৈতিক আদর্শ অনুসরণ করে জীবন গঠন করতে পারে । আমাদের সমাজে ও শিক্ষাব্যবস্থায় আদর্শিক চেতনা ও মূল্যবোধ সৃষ্টির তেমন প্রয়াস নেই । ফলে যুবসমাজ আদর্শ ও মূল্যবোধশূন্য হয়ে পড়েছে ।

২. বর্তমান আকাশ - সংস্কৃতির যুগে অপসংস্কৃতির প্রসার অত্যন্ত সহজ । টেলিভিশনে যৌনতা ও ভায়োলেন্সযুক্ত ছায়াছবি ও চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে । তাছাড়া স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং ভিডিওতে যৌনতার প্রসার ঘটানো হচ্ছে । সাথে সাথে এদেশের চলচ্চিত্রেও কুরুচি ও ভায়োলেন্স জায়গা করে নিয়েছে । ফলে ক্রমশই যুবসমাজ অপসংস্কৃতির প্রভাবে নৈতিকতা হারাচ্ছে ।

৩. কথায় বলে ‘ কর্মহীন মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা ' । আমাদের দেশে শিল্পায়ন ও পুঁজির অভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত । কর্মসংস্থানের অভাবে তরুণরা বেকারত্বের শিকার হচ্ছে । ফলে বিপুল সংখ্যক বেকার তরুণ সহজেই বিপথগামী হয়ে পড়ছে । বেকারত্বজনিত হতাশার প্রভাবে অগণিত যুবসমাজ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে ।

৪. যুবসমাজের অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ সংবাদপত্রের দায়িত্বহীন ভূমিকা । আমাদের দেশের সংবাদপত্রগুলো সস্তা বাজার লাভের প্রয়াসে হত্যা - ধর্ষণ ও অপরাধমূলক সংবাদ অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে ছেপে থাকে । এসব সংবাদ পড়ে যুবসমাজ অপরাধের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে । তাছাড়া অশ্লীল বই - পুস্তকের ছড়াছড়ি যুবসমাজের ক্ষতিসাধন করছে ।

৫. আমাদের সমাজে যুবশক্তিকে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যবহারের প্রবণতা দুঃখজনক । রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে যুবকদের হাতে অস্ত্র ও অর্থ তুলে দিচ্ছে । ফলে তরুণরা সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কাজ করে চলেছে পূর্ণ উদ্যমে ।

৬. সরকার ও প্রশাসন দেশকে সুষ্ঠুপথে পরিচালনার পবিত্র দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে । অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা সরকারি দলের ছত্রছায়ায় অপরাধমূলক কাজ করে । ফলে প্রশাসনকে নির্বিকার ভূমিকা পালন করতে হয় । প্রশাসনের এ দুর্বলতা সমাজের নৈতিক মূল্যবোধে ধস নামাচ্ছে ।

৭. ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার । কিন্তু আমাদের শিক্ষাঙ্গণ আজ সন্ত্রাস ও অস্ত্রবাজিতে কলুষিত হয়ে পড়েছে । ছাত্রদের হাতে বইখাতার বদলে আজ দেখা যাচ্ছে অস্ত্র । এই বিপথগামী ছাত্ররাজনীতি যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে ।

প্রতিকার : তরুণরাই একটি জাতির উন্নয়নের কারিগর । তাই তাদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা জরুরি । সমাজকে এ নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন । তরুণদের আজ জীবনের মহৎ লক্ষ্য সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতে হবে । ধর্মীয় আচরণবিধির প্রতি অনুগত করে তুলতে পারলে তারা আর অপরাধে সম্পৃক্ত হবে না । শিক্ষার ক্ষেত্রে আদর্শিক ও মানবিক চেতনা বিকাশের সহায়ক ব্যবস্থা রাখতে হবে । বেকারত্বের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করতে পারলে যুবসমাজ অপরাধের চক্র থেকে মুক্ত থাকবে । এজন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হবে । অপসংস্কৃতির বদলে সুস্থ সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে । সংবাদপত্রের পাতা থেকে তরুণরা যাতে অপরাধকর্মের প্রেরণা না পায় তার জন্য সংবাদপত্রগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে । রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যাতে তরুণরা আত্মবিক্রীত না হতে পারে সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সদিচ্ছা প্রদর্শন করতে হবে । সরকার ও প্রশাসনকেও অপরাধ বিস্তার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে । সব কথার শেষকথা– আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে ।

ভিডিও দেখুন