প্রতিবেদন: কলেজে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন

কলেজে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন

আলোচ্য বিষয়:
👉🏻তোমার কলেজে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার বিবরণ দিয়ে প্রতিবেদন রচনা করো ।

নওগাঁ ডিগ্রি কলেজে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্‌যাপন

মাসুম বিল্লাহ , ময়মনসিংহ থেকে: সারা দেশের ন্যায়  নওগাঁ ডিগ্রি কলেজে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্‌যাপিত হয়েছে । কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ছাত্র সংসদ যৌথভাবে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে ।

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে ছিল প্রভাতফেরী , আলোচনাসভা , কবিতা আবৃত্তি , নাটক মঞ্চায়ন প্রভৃতি । দিবসটি উপলক্ষ্যে কলেজ ক্যাম্পাস নানাপ্রকার আলপনা , পোস্টার , ফেস্টন প্রভৃতি দিয়ে সজ্জিত করা হয় । ছুটির দিন হলেও অধ্যক্ষ মহোদয় নোটিশের মাধ্যমে সকলকে কলেজে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করেন ।

রাত ১২ টা ১ মিনিটে কলেজ প্রাঙ্গণের শহিদ মিনারের বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্যদিয়ে দিবসটির সূচনা করা হয় । কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক জনাব জামাল খন্দকার-এর নেতৃত্বে শিক্ষক , ছাত্র সংসদের কর্মকর্তাবৃন্দ , শিক্ষকমন্ডলী , সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও কর্মকর্তা - কর্মচারীগণ ‘ আমার - ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি , আমি কি ভুলিতে পারি ' গানের করুণ সুর ধারণ করে প্রভাতফেরী শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে । প্রভাতফেরীতে অনেক সাধারণ মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন ।

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে সকাল দশটায় কলেজ অডিটোরিয়ামে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয় । আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘ একুশের চেতনা ও বাংলাদেশের আর্থ - সামাজিক বাস্তবতা ' । আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভাষা সৈনিক ড . রফিকুল ইসলাম । সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক জনাব মাহমুদ সাত্তার । সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ জনাব ড . রুহুল আমীন । অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জনাব আহমদ উল্লাহ খান ।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করে প্রধান অতিথি ড . রফিকুল ইসলাম বলেন , ভাষাশহিদদের আত্মদানের পথ ধরেই বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে । তবে আজও ভাষাশহিদরা প্রকৃত মূল্যায়ন পান নি । তিনি বলেন , একুশের চেতনা আজ সর্বক্ষেত্রে ভূলুণ্ঠিত । দেশের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে চলছে অরাজকতা ও নৈরাজ্য । সমাজে শ্রেণিবৈষম্য প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছে । শুধু তাই নয় বাংলা ভাষাও আজ বিদেশি ভাষার দাপটে অবহেলিত । আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ পর্যন্ত বাংলা ভাষাকে শুদ্ধভাবে বলা ও লেখার প্রতি ঔদাসীন্য প্রদর্শন স্তন করেন । এটা খুবই পরিতাপের বিষয় । এটা আমাদের শেকড়শূন্য মানসিকতারই প্রমাণ । ইংরেজি ভাষার ভুল প্রয়োগে অনেকে লজ্জা পেলেও বাংলা ভাষায় অশুদ্ধ ব্যবহারে আমরা লজ্জাবোধ করি না । এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে । সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার আজও মুখের কথাতেই রয়ে গেছে । বাংলা ভাষার ব্যবহার বা এর প্রায়োগিক দিকটা হয়েছে উপেক্ষিত ।

বিশেষ অতিথি বলেন , সরকারি অনেক দপ্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার এখনো নিশ্চিত করা যায় নি । তবে অনেকগুলো সরকারি দপ্তরের ক্ষেত্রে ইংরেজির ব্যবহার যৌক্তিক হিসেবে গ্রহণ করা যায় । সভাপতি তাঁর বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষা চর্চায় আরো বেশি মনোযোগ প্রদানের জন্য আহবান জানান । তিনি তাদের একুশের চেতনা সম্পর্কে সচেতন করেন এবং জাতি গঠনে অবদান রাখার জন্যেও আহবান জানান ।

বিকেলে কলেজ অডিটোরিয়ামে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তির প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় । এতে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে । জীবনানন্দ দাশ , মাহবুব - উল - আলম চৌধুরী , ' সুধীন্দ্রনাথ দত্ত , সিকান্দার আবু জাফর প্রমুখ কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি করা হয় । সবশেষে শহিদ মুনীর চৌধুরী রচিত ' কবর ' নাটকখানি মঞ্চস্থ করা হয় । নাটকটির নির্দেশনা ও পরিচালনায় ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও নাট্যকার মনজুর মোর্শেদ খান । কলেজের ছাত্রদের মনমুগ্ধকর অভিনয় সকলকে মুগ্ধ করে । সামগ্রিকভাবে একুশের এ অনুষ্ঠানমালা সফল হয়েছে এবং সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে ।

ভিডিও দেখুন