প্রতিবেদন:দুর্নীতির ও তার প্রতিকার

প্রতিবেদন: দুর্নীতির ও তার প্রতিকার

প্রতিবেদন:দুর্নীতির ও তার প্রতিকার


আলোচ্য বিষয়:

👉🏻‘ দুর্নীতি ও তার প্রতিকার ’ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো ।


বাংলাদেশে দুর্নীতির চিত্র পরিবর্তিত হয় নি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ড . ফখরুদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু'বছরে দুর্নীতিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান সত্ত্বেও এদেশে দুর্নীতি হ্রাস পায় নি । বরং রূপ ও প্রকৃতি পাল্টে দুর্নীতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে । নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পরও দুর্নীতির ক্রমবর্ধমান ধারাটি অব্যাহত রয়েছে । ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ( টিআই ) ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ ( সিপিডি ) পরিচালিত জরিপ ও গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা গেছে ।

গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সংস্থা দুটির কর্মকর্তারা জানান , বাংলাদেশ গত তিন বছরে ( ২০০৬ , ২০০৭ ও ২০০৮ ) আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দুর্নীতির সূচকে উন্নতি করেছে । এখন আর আমাদের দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এক নম্বরে নেই । কিন্তু তাই বলে যে এদেশে দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে তা বলা যাবে না । গবেষণায় দেখা গেছে , গত তিন বছরে দুর্নীতির সংখ্যা হ্রাস পেলেও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ কিংবা তছরূপকৃত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে । এমনকি ড . ফখরুদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু'বছরের মেয়াদে দুর্নীতিবিরোধী নানা ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যেও দুর্নীতি এদেশে বেড়েছে । এ বৃদ্ধি টাকার অঙ্কে ২০০৬ সালের তুলনায় ২০০৭ সালে ৫০০ কোটি টাকা ও ২০০৮ সালে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৭০০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি হয়েছে । এ সময়ে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির সম্পৃক্ততা লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে । কিন্তু সম্পৃক্ততা বেড়েছে সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের এবং আমলা শ্রেণির ।

টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন , বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির আর্থিক খতিয়ান দেখলে অনেকের মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা হতে বাধ্য । জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতে , বাংলাদেশে অবৈধ সম্পদের পরিমাণ মোট জাতীয় আয়ের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ । বিআইডিএস - এর সাবেক মহাপরিচালক ড . সদরুল রেজার অনুসন্ধানে দেখা যায় ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে ২৩ ৫৮৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে । অর্থমন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে চুরি ও অপপ্রয়োগের মাধ্যমে সরকারি তহবিলের ১৮ হাজার কোটি টাকা তসরূপ করা হয়েছে । এডিবি রিপোর্টে বিগত ৩৫ বছরে এদেশে দুর্নীতি ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকার চুরি ও অনিয়ম হয়েছে । বিশ্বব্যাংকের ' সাহায্য স্মারক ' প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলোদেশে আমদানি - রপ্তানি ক্ষেত্রে শতকরা সাত ভাগ অর্থ ঘুষ দিতে হয় । গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় , স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ যে পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য পেয়েছে তার মাত্র ২৫ ভাগ প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্ট খাতে কাজে লাগানো হয়েছে , বাকি ৭৫ ভাগই লোপাট হয়েছে । ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ( টিআই ) এর পরিসংখ্যান মতে ১৯৯৫-৯৯ - এর মধ্যে দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রীয় ক্ষতির পরিমাণ ১,৩৬,৪০০ কোটি টাকা । সাম্প্রতিককালে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে তিতাস গ্যাস , পেট্রোবাংলা , বিদ্যুৎ , ওয়াসা , বিআরটিএ , টিএন্ডটি প্রভৃতি বিভাগের শতকরা ৪০ ভাগ আয়ই চলে যায় সংশ্লিষ্ট লোকজনের পকেটে । কাস্টমস , তিতাস গ্যাস , বিআরটিএ , বন বিভাগ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের অনেক পিয়ন - দারোয়ান পর্যন্ত কোটিপতি ।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন , দুর্নীতির ক্রমপ্রসারে সীমিত আয়ের লোকজনের জীবনযাত্রার মান অবনমিত হয়েছে , চাপ পড়েছে তাদের ক্রয়ক্ষমতার ওপর । দুর্নীতি সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও শ্রেণিগত দ্বন্দ্বও বাড়িয়ে দিয়েছে । নব্য ধনিকের বড় অংশই দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থসম্পদ গড়েছেন । তাদের দাপটে সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে । সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন , দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রচলিত ধ্যানধারণার পরিবর্তন জরুরি । আইন আর শাস্তির কার্যকারিতা এক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে । তাই দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন এবং সামাজিক প্রতিরোধকে উত্তম বিকল্প হিসেবে ভাবতে পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে ৷


আরো পড়ুন: